পোকার উপদ্রবে কৃষকদের আগ্রহ কমেছে গম চাষে
পোকার উপদ্রবে জেলায় গমের চাহিদা বাড়লেও নেত্রকোনায় কমেছে গমের চাষ। গমের পরিবর্তে এখন সরিষা, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ হচ্ছে। এ বছর জেলার বেশিরভাগ এলাকায় গমক্ষেতে পোকার আক্রমণ হওয়ায় উৎপাদন খরচ উঠবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় কৃষক। কৃষি বিভাগ বলছে, উৎপাদন খরচ এবং রোগ-বালাই, পোকার আক্রমণ বেশি হওয়ায় গমের আবাদ কমে যাচ্ছে। তবে গমের আবাদ বৃদ্ধি করতে কৃষকদের বিনামূল্যে সার ও বীজ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
জেলার ১০টি উপজেলার অধিকাংশ মানুষই কৃষির ওপর নির্ভরশীল। প্রতি মৌসুমে কৃষকেরা ধান, গম, ভুট্টা, সরিষাসহ নানান জাতের সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করেন। এবার শীত মৌসুমে নেত্রকোনার বিভিন্ন উপজেলার চর এলাকায় গমের আবাদ হয়েছে। তবে, গমের চেয়ে সরিষা চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। এর কারণ গমক্ষেতে পোকার আক্রমণ বেশি। তাই ফলন ভালো না হওয়ায় আগ্রহ কমেছে কৃষকদের। এ বিষয়ে সরকারি সহযোগিতা পেলে গমচাষ বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন চাষিরা।
নেত্রকোনা সদর উপজেলার চল্লিশালাইট গ্রামের কৃষক মফিজুর ইসলাম বলেন, গম চাষে আশানুরূপ লাভ হচ্ছে না। তাই গম চাষের পরিবর্তে অন্যান্য ফসল চাষ করছেন। কয়েক বছর আগেও বেশিরভাগ কৃষক গম চাষ করতেন। কিন্তু বর্তমানে অল্প সংখ্যক কৃষক গম চাষ করছেন, তা-ও কম জমিতে।
সদর উপজেলার শ্রীধরপুর গ্রামের কৃষক মো. আনসার আলী বলেন, পূর্বপুরুষ থেকে নদীর চর এলাকায় গমের চাষাবাদ করে আসছিলাম। প্রায় ২০ থেকে ২৫ কাঠা জমিতে গম চাষ করে ভালো লাভ হতো। কিন্তু বর্তমানে জমিতে পোকা-মাকড়সহ আক্রমণ ও বিভিন্ন রোগের কারণে গমের ফলন কমে গেছে। তাই গম চাষে আগ্রহ কমে গেছে।
আটা-ময়দার চাহিদা মেটাতে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশে গমের আবাদ বাড়াতে কৃষকদের ভালো মানের বীজ ও কিটনাশকসহ সরকারি সহযোগিতা প্রদানের দাবি জানান দরিদাগি গ্রামের কৃষক মো. রহম আলী।
চল্লিশালাইট গ্রামের বাসিন্দা সখিনা আক্তার বলেন, গত বছর ৮০ শতক জমিতে গম চাষ করা হয়েছিল। এ বছর সেখানে ১০ শতক জমিতে গমের আবাদ করা হয়েছে। জমিতে ঘাস বৃদ্ধি ও ইঁদুরের আক্রমণের কারণে গত বছর ফলন কম হয়েছে। এতে উৎপাদন খরচও উঠে আসেনি।
আটপাড়া এলাকার কৃষক মো. নাসির উদ্দিন বলেন, নদীর চর ও উঁচু জমিতে গমের ফলন ভালো হয়। আমরা বিএডিসি কৃষি ফার্ম থেকে বীজ কিনে জমিতে আবাদ করি, কিন্ত কোনো সমস্যা দেখা দিলে কৃষি অফিস থেকে সহযোগিতামূলক কোনো পরামর্শ পাই না। বর্তমানে গমে পাক ধরছে কিন্তু ছড়ার ভিতরে গম খুঁজে পাওয়া যায় না। ছত্রাকের কারণে গম নষ্ট হয়ে গেছে।
নেত্রকোনা বীজ বিপণন কেন্দ্রের সিনিয়র সহকারী পরিচালক সাজিয়া আফরিন খান মজলিশ বলেন, আবহাওয়ার সঙ্গে অনেক কিছু নির্ভর করে। আমাদের দেশের আবহাওয়ায় কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। বীজের সময়োপযোগী যত্ন নিতে হয়। তবে, সব বিবেচনায় রেখে নতুন উন্নত জাতের বীজ সহায়তা দেওয়া হবে কৃষকদের।
ব্লাস্টসহ বিভিন্ন রোগবালাই ও পোকার আক্রমণ বেশি হওয়ায় নেত্রকোনাতে গমের আবাদ কমে যাচ্ছে, বিষয়টি স্বীকার করে গমের আবাদ বাড়াতে বিনামূল্যে সার, কীটনাশক ও সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নূরুজ্জামান।
এএজেড