তিস্তার বুকে যেন এক সবুজের সমারোহ!
দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের ঐতিহ্যবাহী খরস্রোতা ধরলা-ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তারসহ বিভিন্ন নদ-নদীর বুকে প্রান্তিক চাষিরা প্রায় ১০ বছর ধরে বোরো ধান ও ভুট্টার চাষাবাদ করে আসছে। ধরলা-ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তারসহ বিভিন্ন নদ-নদীর চারিদিকে বোরো ধান ও ভুট্টা সবুজ ফসলেই ভরে গেছে।
এ যেন এক সবুজের সমারোহ। সমারোহে বিমোহিত হয়ে অনেকেই ছুটে আসছেন শেখ হাসিনা ধরলা সেতু ও শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের জ্যোতিন্দ্র নারায়ণ এলাকার বারোমাসিয়া নদীর নির্মিত সেতুর পাড়ে।
অথচ মাত্র এক যুগ আগেও পানির প্রবাহতা ও প্রাণের স্পন্দন ছিল ধরলা-ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তারসহ নদীতে। এই দুই নদীর প্রবল স্রোতের কারণে আতঁকে উঠতো নদী পাড়ের হাজারও বাসিন্দারা। এ পানি না থাকায় ধরলা ও বারোমাসিয়া নদীতে ছোট বড় প্রায় পাঁচ শতাধিক চরের সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে জেলা জুড়ে জীব বৈচিত্রের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
ধরলা-ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তায় পানি না থাকায় নদী পাড়ের শতশত কৃষক পরিবার পাঁয়ে হেঁটে ঐসব নদীর বুকে জেগে ওঠা পলিমাটিতে ইরি-বোরো ও ভুট্টার ব্যাপক পরিমানে চাষাবাদ করেছেন। শতশত বিঘা জমিতে কৃষক প্রায় ১০ বছর ধরে ইরি-বোরো ধান ও ভুট্টাসহ আঁখের চাষবাদ করে আসছেন।
এদিকে গত ৮ থেকে ১০ বছর ধরে ধরলা-ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার বুকে বোরো ও ভুট্টার চাষাবাদ করে কৃষকদের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসলেও নদীতে নাব্যতা সংকট দেখা দেওয়ায় ইঞ্জিন চালিত নৌকা বা ডিঙ্গি নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহকারী জেলে পরিবার গুলো কঠিন দুশ্চিন্তায় পরেছেন। ধরলা-ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তারসহ বিভিন্ন নদ-নদীতে বোয়াল, কাতলা, রুই, টেংরা, কর্তি, ভেটকিসহ নানান প্রজাতির মাছ শিকার করে তারা জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতো।
পানি প্রবাহ না থাকায় এসব মাছের দেখা পাচ্ছেন না জেলেরা। ফলে সেএখানকার জেলে পরিবাররা পেশা হারিয়ে অনেকেই দিনমজুর, রিক্স্রাচালক, মালিসহ নানা বিভিন্ন পেশায় সম্পৃক্ত হলেও কিছু জেলে পরিবার কিন্তু নদীতে মাছ শিকার করতে না পেরে চরম দুচিন্তায় পড়েছেন। ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের ধরলা পাড়ের বোরো চাষি বাদশা আলমগীর ও বাবলু ইসলাম জানান, এক সময় এই ধরলা নদীই ধরলা পাড়ের হাজারও মানুষের ঘর-বাড়ী, ফসলি জমি-জমাসহ সব কিছুই গিলে খেয়েছে।
অনেকেই ধরলা ও বারোমাসিয়া নদীর তীব্র ভাঙ্গনে ঘর-বাড়ী হারিয়ে নি:স্ব হয়েছেন। তাই অনেকেই ধরলা ও বারোমাসিয়া নদীল আগ্রাসী রূপ দেখেছে। অথচ সেই ধরলা ও বারোমাসিয়া নদী এখন পানি শূণ্য হয়ে পড়েছেন। এই দুই কৃষক প্রত্যেকেই ধরলার বুকে ৭ বিঘা জমিতে ইরি-রোবো চাষবাদ করছেন। শ্যালোমেশিনের পানি দিয়েই ধরলার বুকে ইরি-বোরো চাষাবাদ করেন। ভাল ফলন হলে বিঘা প্রতি ২৪ থেকে ২৫ মন ধান ঘরে তোলেন তারা। আবহাওয়া অনুকুল থাকলে এবছরও ভাল ফলনের আশা করছেন তারা।
একই এলাকার ভুট্টা চাষি গাটু মিয়া ও নুর ইসলাম জানান, গত বছরের ন্যায় এ বছরও ধরলার বুকে প্রত্যেকেই দুই বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষাবাদ করেছেন। আবহাওয়া অনুকুল থাকলে এবছরও ভুট্টার বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখছেন তারা। একই ইউনিয়নের জ্যোতিন্দ্র নারায়ণ এলাকার বারোমাসিয়া নদী পাড়ের ভুট্টা চাষি আব্দুর রশিদ জানান, তিনি এবছর বারোমাসিয়া নদীর তীরে ৮ বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকুল থাকায় ভুট্টার বাম্পার ফলন দেখা দিয়েছে। তার মতো শতশত কৃষক ধরলা ও বারোমাসিয়া নদীর তীরে বোরো ধান ও ভুট্টার চাষাবাদ করে ব্যাপাক লাভবান হচ্ছেন বলে একাধিক চাষি জানিয়েছেন।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত জানান, চলতি বোরো মৌসুমে জেলার ৯টি উপজেলায় ১ লাখ ১৬ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলা জুড়ে ১ লাখ ২ হাজার ৭০৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদ হয়েছে। ধরলা-ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তারসহ বিভিন্ন নদ-নদীর তীরে ৮৯০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করেছে।
অন্য দিকে উপজেলা জুড়ে ১৫ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছে। ধরলা-ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তারসহ বিভিন্ন নদ-নদীর তীরে প্রায় ৭ হাজার জমিতে ভুট্টার চাষাবাদ হয়েছে। আশা করছি আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষকরা আশানুরুপ ফলনের পাশাপাশি ভাল দামেও পাবে বলে আমার বিশ্বাস।
এএজেড