হাওরে বোরো থেকে ভুট্টা চাষে বেশি আগ্রহী কৃষক
কিশোরগঞ্জের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে কৃষি। আর অর্থনীতি অনেকটাই নির্ভরশীল হাওরের উপর। কিশোরগঞ্জের ১৩টি উপজেলার মধ্যে ১২টিই হচ্ছে ‘বাংলাদেশ হাওর ও জলাশয় উন্নয়ন বিভাগ’ এর অন্তর্ভুক্ত।
দেশের মোট ৩৭৩টি হাওরের মধ্যে কিশোরগঞ্জ জেলায় মোট ৯৭টি হাওর রয়েছে। এখানকার মানুষের আয়, উন্নতি, সমৃদ্ধি সবই কৃষির সঙ্গে সম্পর্কিত। কিশোরগঞ্জ জেলার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস পর্যালোচনা করলেই স্পষ্ট হয়ে যায় কৃষিই হচ্ছে জীবিকার প্রধান ক্ষেত্র। এবছর হাওরের দিগন্ত জোড়া মাঠ জুড়ে যতদূর দৃষ্টি যায় চোখে পড়ে সবুজের সমাহার।
এই বছর হাওরে বেড়েছে ভুট্টার চাষ। গত বছরের চেয়ে এবছর ভুট্টা চাষ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আব্দুস সাত্তার।
তিনি জানান, পোল্ট্রি, মৎস্য ও পশুসম্পদ শিল্পের জন্য ফিডের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ভুট্টার সঙ্গে অন্যান্য ফসল যেমন- পেঁয়াজ, আলু ও বাদাম আন্তঃফসল ও মিশ্র ফসল হিসেবে চাষ করা যায়, ফলে এক্ষেত্রে কৃষকরা অধিক লাভবান হচ্ছে এবং ভুট্টা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। ভুট্টাতে রোগ ও পোকা মাকড়ের আক্রমণ অত্যন্ত কম, ফলে উৎপাদন খরচও কম।
তা ছাড়া মোচা তোলার পরে ভুট্টা গাছের অবশিষ্ট অংশ কৃষক তাদের বাড়িতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। এ ছাড়া ভুট্টা C4 (সি ফোর) জাতীয় উদ্ভিদ হওয়ায় কারণে সোলার শক্তিকে কাজে লাগতে পারে এবং পর্যাপ্ত সেচের ব্যবস্থাপনা না থাকলেও খরা সহ্য করে ভুট্টা গাছ তার স্বাভাবিক ফলন নিশ্চিত করতে পারে। যে কারণে কৃষকরা এবছর বোরো ধানের পরিবর্তে ভুট্টা চাষে বেশি আগ্রহী হয়েছেন।
তিনি আরও জানান, এবছর জেলায় ভুট্টার লক্ষ্যমাত্রা ৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আবাদের কথা থাকলেও ১০ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আাবাদ করা হয়েছে। ১৩ উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মিঠামইন ২৬৩৩ হেক্টর, নিকলি ২৫৩৭ হেক্টর, বাজিতপুর ১৮১০ হেক্টর, অষ্টগ্রাম ৭২০ হেক্টর, ইটনা ৫৭০ হেক্টর, পাকুন্দিয়া ৫১০ হেক্টর ও সদর উপজেলায় ৪৮০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। এ ছাড়াও কটিয়াদী ২৫০ হেক্টর, করিমগঞ্জ ২২৫ হেক্টর, হোসেনপুর ১৪০ হেক্টর, কুলিয়ারচর ১২০ হেক্টর, ভৈরব ৬০ হেক্টর ও তাড়াইল উপজেলায় ৪৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে।
তা ছাড়া কৃষকদের ভুট্টা চাষে আগ্রহ বৃদ্ধির জন্য কৃষকদেরকে ভালো ফলনে বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ বছর প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কৃষককে। প্রত্যেক কৃষককে ১ বিঘা জমি চাষাবাদের জন্য ভুট্টার বীজ এবং সার সরবারহ করা হয়েছে। পাশাপাশি ভুট্টার ভালো ফলনের জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে বর্তমানে অনেক দেশি ও বিদেশি বড় বড় ফিড মিল কারখানা তৈরি হওয়ায় কৃষকদের ভুট্টা বিক্রি নিয়ে তেমন বড় কোনো সমস্যায় বা বিপাকে পড়তে হয় না। তা ছাড়া পাহাড়ি ঢলে এবং আগাম বন্যার পানিতে বোরো ফসলের ক্ষতি হলেও ভুট্টা পানিতে তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। গত বছর ৮ হাজার ২৮৫ হেক্টর জমিতে ভূট্টা আবাদ হয়েছিল এবং এবছর হাওরে ভুট্টার বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করা যায়।
এসএন