মেলান্দহে তামাক চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা
কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার কৃষকরা তামাকের চাষ ছাড়ছেন না। এ কারণে কৃষকরা ধান চাষ কমিয়ে দিয়ে তামাক চাষে ঝুঁকছেন। তবে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা কৃষকদের তামাক চাষের কুফলগুলো বোঝাচ্ছেন এবং তামাকের বদলে ভুট্টা বা ধান চাষের পরামর্শ দিচ্ছেন।
উপজেলার শেখ সাদী ও রৌমারী বিল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে তামাক ক্ষেত। ক্ষেতে কেউ তামাক গাছের পরিচর্যা করছেন, কেউ নষ্ট পাতা কাটছেন। আবার কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তামাক ক্ষেতে সার দিচ্ছেন। তামাক ক্ষেতে পরিচর্যার কাজ করছেন নারীরাও । এ ছাড়াও নারী-পুরুষরা তামাক ক্ষেতে কীটনাশক দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
কয়েকজন কৃষক বলেন, তামাক চাষে সার, কীটনাশক ও সেচ কম লাগায় উৎপাদন খরচ কম হয়। আর দামও ভালো পাওয়া যায়। তাই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জেনেও তারা এর চাষ বন্ধ করতে পারছেন না। আর বোরো ধান চাষে খরচ অনেক বেশি। সব কিছুর দাম বেশি। তাই অনেকে তামাক চাষে ঝুঁকছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ঝাউগড়া ইউনিয়নের শেখ সাদী ও রৌমারী এলাকায় সবচেয়ে বেশি তামাক চাষ হয়। পুরো উপজেলায় এবার ২০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। রৌমারী এলাকার কৃষক গোলাম নবী বলেন, তিনি ৮ বছরের বেশি সময় ধরে তামাক চাষ করেন। এবার ৩৫ শতাংশ জমিতে তামাক চাষ করেছেন। পরিবারে সবাই মিলে তামাক ক্ষেতে কাজ করা যায়, সার কম লাগে, নামমাত্র সেচ লাগে। তামাকের বিষ পাতা, গোড়া পাতা, মুড়া-সব বিক্রি হয়। ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ করে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লাভ হয়। ওই জমিতে বোরো ধান চাষে খরচ হতো ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। ধান হতো সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ১৬ মণ। সেখানে লাভ নেই। আবার তামাক তুলে ওই জমিতে পাট চাষ করা যাবে। বোরো ধান তোলার পর জমি পতিত পড়ে থাকবে। সবচেয়ে বড় কথা, তামাক পাতা বিক্রির জন্য বাজারে বাজারে ঘুরতে হয় না। বাড়ি থেকে তামাক পাতা বিক্রি হয়ে যায়।
শেখ সাদী এলাকার কৃষক মুজিবর রহমান বলেন, ‘যেখানে লাভ বেশি হয়, সেটাই করি। লাভ বেশি হওয়ায় তামাক চাষ করি।’
ঝাউগড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ইব্রাহিম ফকির বলেন, ‘শেখ সাদী ও রৌমারী বিল এলাকায় বহুকাল ধরে তামাক চাষ হয়। ৩০ বছর ধরে দেখছি, এই এলাকায় তামাক চাষ হয়। তাই তামাক চাষ কেউ সহজে ছাড়তে পারছেন না। তামাক কোম্পানির লোকজন বাড়িতে এসে তামাক কিনে নিয়ে যান। চাষ ও বিক্রি-দুটিই সহজ হওয়ায় মানুষ এখনো তামাক চাষ করে যাচ্ছেন। তবে পরিষদের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করা হয় এবং তামাক চাষিদের কুফল সম্পর্কে বলা হয়।’
এ ব্যাপারে মেলান্দহ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল ফয়সাল বলেন, তামাক বিক্রির নিশ্চয়তা এবং ভালো দাম পাওয়ায় এই চাষ থেকে কৃষকদের পুরোপুরি সরানো যাচ্ছে না। তামাকের প্রতিটি পাতা ১২ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি করেন কৃষক। অধিক লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা তামাক চাষ ছাড়তে চান না।
তিনি আরও বলেন, তারা তামাক চাষের কুফলগুলো বোঝাচ্ছেন এবং তামাকের বদলে ভুট্টা বা ধান চাষের পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষকদের। তামাক চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে কৃষি বিভাগ সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে মেলান্দহ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা গাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, তামাক স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তামাক ভাঙার সময় এর গুঁড়া বাতাসের সঙ্গে মানুষের শ্বাসনালী দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে। তামাক ফুসফুসের ক্ষতি করে। এই তামাকের কারণে মানুষের ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।
এসআইএইচ