ভ্যালেনসিয়া আলু চাষ করে কৃষকদের মুখে হাসি
প্রক্রিয়াজাত খাদ্য পণ্যের চাহিদা হিসেবে আলু উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। রপ্তানিতে শেয়ার বাড়ানোর সুযোগ আছে যার জন্য শিল্প ও রপ্তানি উপযোগী বিশ্বমানের আলু প্রয়োজন। আলু বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল হওয়ার পরেরও কিছু কারণে আলু চাষিরা উৎপাদনের তুলনায় লাভবান হতে পারে না।
বিশেষ করে খাদ্য শিল্পে ব্যবহার উপযোগী আলুর অপ্রাপ্যতা উৎপাদন এবং চাহিদার অসামঞ্জস্যতা স্ক্যাবসহ অন্যান্য রোগের প্রাদুর্ভাবে কৃষকদের আলু চাষে লোকসান গুণতে হয়। তবে এবার ভ্যালেনসিয়া জাতের আলুর চাষ করে অধিক লাভের আশায় জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার আলু চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে।
জেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে জানা যায়, নেরাদল্যান্ডসের অন্যতম বৃহৎ আলু বীজ কোম্পানি সাচহাপ হল্যান্ডের আলুক্ষেত থেকে উৎপাদিত বীজ আলু বাংলাদেশে রপ্তানির পর এসিআই সিডের মাধ্যমে দেশে ওই কোম্পানির আলু বীজ বাজারজাত করা হয়। সাচহাপ হল্যান্ডের মোট ৫টি আলুর জাত বাংলাদেশে নিবন্ধন হয়েছে। ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বা বাণিজ্যিক প্রক্রিয়াজাত পণ্য উৎপাদনের জন্য দেশে এতদিন পর্যন্ত উপযুক্ত জাত ছিল না। সাচহাপ হল্যান্ডেরর যে ৫টি জাত বাজারজাত করা হয়েছে। তার মধ্যে ভ্যালেনসিয়া নামক জাতটি বাণিজ্যিক ফ্রেঞ্চ ফ্রাই উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত।
এটি ডায়মন্ডের সাদৃশ্যপূর্ণ হলেও এর অনন্য কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। উদাহরণ হিসেবে তারা জানান, ডায়ামান্ডের অপেক্ষা ২৫-৩০ দিন আগে বাজারে আসে তাই বাজারমূল্য বেশি। ফসল কাটার সময়কাল ৮০-৮৫ দিন যা আমাদের দেশে নিয়মিত জাতের ৫-১০ দিন আগে। এই আলু টেবিল পটেটোর জন্য ৫৫ দিন থেকে একটি প্রাথমিক জাত হিসেবেও সংগ্রহ করা যায়। হেক্টর প্রতি ফলন প্রায় ৩৯ মেট্রিক টন যা বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় জাত ডায়মন্ডের চেয়ে ৩৮ ভাগ বেশি। প্রতিটি আলুর গড় ওজন প্রায় ১০০ গ্রাম।
ভ্যালেনসিয়া ডায়মন্ডের সাদৃশ্যপূর্ণ হলেও ডায়মন্ডের অপেক্ষা ২৫-৩০ দিন আগে বাজারে আসে তাই বাজারমূল্য বেশি। ফসল কাটার সময়কাল ৮০-৮৫ দিন যা আমাদের দেশে নিয়মিত জাতের ৫-১০ দিন আগে। এটি টেবিল পটেটোর জন্য ৫৫ দিন থেকে একটি প্রাথমিক জাত হিসেবেও সংগ্রহ করা যায়। কোনো ধরনের রোগবালাই নেই সাধারণ তাপমাত্রায় ৭০-৭৫ দিন সংরক্ষণ করা যায়, প্রক্রিয়াজাতে ক্ষতির মাত্রা দুই ভাগেরও কম রপ্তানি ও শিল্পে ব্যবহার উপযোগী।
ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এর জন্য, আলুর আকার লম্বাটে গোলাকৃতির হওয়া প্রয়োজন, টেক্সচারটি মোটামুটি শক্ত হওয়া উচিত, ড্রাই মেটারের পরিমাণ বেশি হওয়া উচিত ২০ শতাংশর বেশি এবং কম তেল শোষণের সঙ্গে খুব কম চিনির পরিমাণ হওয়া উচিত। রপ্তানি জাতগুলি উচ্চতর শুষ্ক উপাদানসহ স্টার্চ সমৃদ্ধ হওয়া উচিত। ভ্যালেনসিয়া যার সব শর্তসমূহ পূরণ করেছে। এই জাতটিতে ২১.১১ শতাংশ শুষ্ক উপাদান আছে যা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট ভালো। এ ছাড়াও ফ্রেঞ্চ ফ্রাই উৎপাদনের জন্য সাধারণত তেল শোষণ ক্ষমতা ০.৩ এর বেশি হওয়া উচিত নয়। এক্ষেত্রে সাচহাপ হল্যান্ড কোম্পানির ভ্যালেনসিয়া জাতের আলুর জাতের তেল শোষণ ক্ষমতা ০.২ এবং সুগার কন্টেন্ট ৩ শতাংশ এর নিচে; যা ফ্রাঞ্চ ফ্রাই উৎপাদনের জন্যে একেবারে আদর্শ। তাই ভ্যালেন্সিয়ার একটি বিশাল ব্যবসায়িক সম্ভাবনা রয়েছে যা ফ্রেক্স, স্টার্চ, চিপস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ইত্যাদি তৈরির জন্য অর্থনৈতিকভাবে কার্যকর। জাতের চাষ কৃষকদের ভাল দাম পেতে এবং লাভের অনিশ্চয়তা কমাতে সাহায্য করে। তাই কৃষকরা এসিআই সিডের ভ্যালেনসিয়া জাতের আলুর চাষে লাভের মুখ দেখবেন।
ক্ষেতলাল উপজেলার শাখারঞ্জু গ্রামের কৃষক রাজন জানান, তিনি প্রতি বছর অন্যান্য জাতের আলুর চাষ করতেন। সেখানে প্রতি বিঘায় উৎপাদন হতো ৭০ থেকে ৮০ মণ। আর খরচ হতো প্রায় ৩২ হাজার টাকা। এইবার প্রথম এসিআই সিডের ভ্যালেনসিয়া ১০ জাতের সাড়ে ৭ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন। প্রতি বিঘাতে তার খরচ পড়েছে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় ওজন নামবে প্রায় ১০০ থেকে ১২০ মণ। রোগবালাই ও খরচ কম হওয়ায় লাভ হবে বেশি।
এসিআই সিডের চিফ মার্কেটিং অফিসার কৃষিবিদ খন্দকার সাইফুর রহমান বলেন, এবছর জয়পুরহাট জেলায় ২৫ জন চাষি ৫ হেক্টর জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ভ্যালেনসিয়া ১০ জাতের আলুর চাষ করেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, কম খরচে যে ফলন হয়েছে এবং বর্তমান বাজার দরে অধিক লাভ হবে।
ভ্যালেনসিয়া আলুর মাঠ পরিদর্শনে এসে জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ রাহেলা পারভিন বলেন, ভ্যালেনসিয়া আলুর গাছ ও ফলন দেখে আশা করছেন, এই আলু চাষ করে লোকসান পুষিয়ে কৃষকরা লাভের মুখ দেখবেন।
এসএন