৩০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট যশোরের ফুল চাষিদের
করোনার বড় ধরনের ধাক্কা কাটিয়ে উঠে নতুন বছরসহ একাধিক বড় বড় দিবসকে সামনে রেখে এবার ৩০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট নিয়েছে যশোরের গদখালীর ফুল চাষিরা। নতুন বছরের বিশেষ দিনগুলোকে টার্গেট করে নানান জাতের ফুলের চারা রোপণ করে পরিচর্যায় ব্যস্ত তারা। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফুল চাষে অধিক লাভবান হবেন বলে আশা চাষীদের। বিজয় দিবসে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফুল বিক্রি করেছেন গদখালীর ফুল চাষিরা।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি ও পানিসারা ইউনিয়নের শত শত চাষি ফুল চাষের সঙ্গে জড়িত দীর্ঘদিন ধরে। তাদের উৎপাদিত রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকাসহ ১১ ধরনের ফুল সরবরাহ হচ্ছে সারাদেশে। করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় ফুলের বাজার ধরার চেষ্টা করছেন ফুল চাষিরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর সাধ্যমতো ফুল চাষ করেছেন তারা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গদখালীর পানিসারায় বিস্তীর্ণ মাঠে শুধু ফুল আর ফুল। করোনার টানা দুই বছরের মন্দাভাব কাটিয়ে উঠে সাধ্যমত ফুল চাষ করেছেন ফুল চাষিরা। গদখালির উৎপাদিত ফুল কেনা-বেচা হচ্ছে উচ্চ মূল্যে। কৃষকরা জানান, অন্যান্য বছরে ফুল চাষের উপযুক্ত সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফুল চাষ বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকে। যদিও এবার আবহাওয়া অনেকটা চাষের অনুকূলে। গত কয়েক মাস ধরে চাষীদের পরিশ্রমে মাঠের পর মাঠ শুধু গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, রজনীগন্ধাসহ নানা ধরনের ফুলের সমারহ।
ফুল চাষি বাবলুর রহমান জানান, করোনায় গত দুই বছরে ফুল চাষে লোকসান হয়েছে আমাদের। লোকসানের কারণে অনেকে ফুলের ক্ষেতে সবজিসহ অন্যান্য ফসল চাষাবাদ করেছে। সেই পরিস্থিতি এখন আর নেই। যেসব চাষিরা ফুল চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন তারাই ফের শুরু করেছেন ফুল চাষ। প্রত্যাশার চেয়ে বেশী ফুল বিক্রি সম্ভব হবে বলে আশা করছি। বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি গোলাপ ও গাদা ফুল বিক্রি হয়েছে।
গদখালীর ফুল বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি পিস গোলাপ ৩ টাকা, গ্লাডিওলাস ৮ থেকে ১০ টাকা, জারবেরা ৮ থেকে ১০ টাকা, রজনীগন্ধা ৪ টাকা, ১০০ পিস চন্দ্রমল্লিকা ১৫০ টাকা, এক হাজার গাঁদা ফুল ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে ফুল বিক্রেতা মো. আমিনুর রহমান জানান, বিজয় দিবসের কারণে ফুলের দাম বাড়তি। তবে সামনে নতুন বছরের বিশেষ দিনগুলোতে ফুলের চাহিদা ও দাম দুটাই বাড়বে বলে আশা করি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর আগেভাগেই বাজারে ফুল উঠতে শুরু করেছে। দিন যত যাবে ততই বাড়বে ফুলের চাহিদা।
ফুলের পাইকারি বিক্রেতা দিলীপ কুমার বলেন, এখান থেকে ফুল কিনে পরিবহনে করে ঢাকায় পাঠিয়েছি। দেশের অন্যান্য এলাকায় এখনো ফুল বাজারে তোলার সময় আসেনি। বিশেষ করে গদখালীতে আগেভাগেই গোলাপের সরবরাহ শুরু হয়েছে। ফলে এখান থেকে ফুল কিনে নিয়ে যাচ্ছে ঢাকায়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, করোনার ধাক্কা কেটে উঠায় এ বছর প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ফুল চাষ হয়েছে গদখালীতে। ২০২৩ সালে ৩০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট করেছি। ইতিমধ্যে ক্ষেতের ফুল বাজারে আসতে শুরু করেছে বিক্রির জন্য। বছরের প্রথম বড় একটি বাজারেও ভালো দামে ফুল বিক্রি করেছেন চাষীরা। সামনের দিনগুলোতেও ভালো দাম পাবেন বলে তিনি আশা করছি।
তিনি আরও বলেন, ফুলের উৎপাদন হলেও প্লাস্টিকের ফুলের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দেশের ফুল চাষিরা।
এ ব্যাপারে ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ বলেন, ঝিকরগাছার গদখালী, পানিসারা ছাড়াও জেলায় প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে নানা জাতের ফুলের চাষ হচ্ছে এ বছর। ফুল চাষে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষককে নানাভাবে সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফুল চাষিরা ভালো ফলন পাবে এ বছর। আগামী বিশেষ দিনগুলোতে ভালো দামে ফুল বিক্রি হবে বলে আশা করছি।
এসআইএইচ