কৃষকের স্বপ্ন পূরণে হাতছানি সরিষায়
সরিষার হলুদ ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে টাঙ্গাইলের গ্রামাঞ্চলের দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ। যতদূর চোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। যেন হলুদের রাজ্য। সরিষা ক্ষেতের এ হলুদ রাজ্যেই লুকিয়ে আছে কৃষকের স্বপ্ন। সরিষা ক্ষেতে পৌষের কনকনে বাতাসে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। একই সঙ্গে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত ফসলের মাঠ। কৃষকের চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের হাসি। ভৈজ্যতেলের অভাব কমে আসার অপার সম্ভাবনা দেখছে কৃষি বিভাগ ও সংশ্লিষ্টরা।
জেলার মধুপুর, ধনবাড়ী, গোপালপুর, কালিহাতী, সদর, ভূঞাপুর ও গোপালপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বন্যায় ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আবাদি, অনাবাদি ও পরিত্যক্ত জমিগুলোতে গতবারের তুলনায় চলতি মৌসুমে প্রায় দ্বিগুণ হারে সরিষা চাষাবাদ করেছেন কৃষকরা। এসব জমিতে সরিষায় গাছে ফুল ও ফল এসেছে। হলুদ ফুলের জমির পাশে মৌ-চাষিরা মৌমাছির বাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করছেন। এ ছাড়া পাশাপাশি সরিষা ক্ষেতে ছবি, সেলফি ও ভিডিও ধারণ করছে প্রকৃতিপ্রেমীরা।
জেলা কৃষি সম্প্রারণ অধিদপ্তর সূত্রে, ১২ উপজেলায় চলতি মৌসুমে সরিষায় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৫২ হাজার ১২০ হেক্টর জমি। তারমধ্যে জেলা সদরে ৭ হাজার ২৫৮ হেক্টর জমি এবং প্রণোদনা পেয়েছে ২ হাজার ৫০০ কৃষক, বাসাইলে ৬ হাজার ৫০ হেক্টর ও প্রণোদনা পেয়েছে ২ হাজার ৬০০, কালিহাতীতে ৪ হাজার ১৪০ হেক্টর ও প্রণোদনা পেয়েছে ২ হাজার ৫০০ কৃষক, ঘাটাইলে ৩ হাজার ৪৬৬ হেক্টর ও প্রণোদনা পেয়েছে ২ হাজার ৪০০ কৃষক, নাগরপুরে ১১ হাজার ৫৮৬ হেক্টর ও প্রণোদনা পেয়েছন ২ হাজার ৫০০ কৃষক।
এ ছাড়া মির্জাপুরে ১১ হাজার ৬১১ হেক্টর ও প্রণোদনা পায় ২ হাজার ৬০০ কৃষক, মধুপুরে ৭১২ হেক্টর ও প্রণোদনা পায় ২ হাজার ৪০০ কৃষক, ভূঞাপুরে ২ হাজার ৪৫০ হেক্টর ও প্রণোদনা পেয়েছে ২ হাজার ৪০০ কৃষক, গোপালপুরে ৪ হাজার ৬১০ হেক্টর ও প্রণোদনা পেয়েছে ২ হাজার ৪০০ কৃষক, সখীপুরে ২ হাজার ৪৯০ হেক্টর ও প্রণোদনা পেয়েছে ২ হাজার ৪০০ কৃষক, দেলদুয়ারে ৩ হাজার ১৮৭ হেক্টর ও প্রণোদনা পেয়েছে ২ হাজার ৪০০ কৃষক এবং ধনবাড়ীতে ৫৬০ হেক্টর ও প্রণোদনা পেয়েছে ২ হাজার ৪০০ কৃষক।
অপরদিকে, অতিরিক্ত আরও ৬ হাজার হেক্টর জমি সরিষা চাষের আওতায় আশায় জমির পরিমাণ বেড়ে ৫৮ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। সরকারিভাবে উপজেলা ও পৌরসভায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক পর্যায়ে ৩০ হাজার কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সরিষার বীজসহ সার বিতরণ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সরিষা চাষে বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাই ও ফসলের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রোধে সরাসরি মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগযোগ রেখে সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছে কৃষি অধিদপ্তর।
ভূঞাপুর উপজেলার ফলদা গ্রামের কৃষক আব্দুল করিম ফালু জানান, বষা মৌসুমে পানির নিচে থাকে এ এলাকার জমিগুলো। তখন ধান চাষ করা যায় না। পানি শুকিয়ে যাওয়ার পর বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রতিবারের মতো এবারও সরিষা চাষ করেছি। তবে, এ মৌসুমে কৃষি বিভাগ থেকে বিনামূল্যে সরিষা বীজ ও সার পাওয়ায় গতবারের চেয়ে আরও ৬ বিঘা জমিতে বেশি সরিষা চাষ করেছি। সরিষাতে এখন ফুল ফুটেছে। সরিষার ভাল ফলন দেখা যাচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে সরিষায় চলতি মৌসুমে বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছি।
ঝনঝনিয়া গ্রামের সরিষা চাষি আব্দুর রহিম মিঞা জানান, এবার সরিষার ফলন ভালো দেখা যাচ্ছে। ৩ বিঘা জমিতে সরিষা লাগিয়েছি। শুধু আমাদের নয়, আশেপাশের চাষিদের ফসল ভালো দেখা যাচ্ছে। তবে, হাল চাষের খরচ বৃদ্ধি ও অন্যান্য খরচ বেশি হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত দাম নিয়ে শঙ্কা। দাম ভালো হলে গতবারের চেয়ে লাভের অংক বেশি হতে পারে। সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগের সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে এবং সরিষার ভালো মূল্য পেলে এ অঞ্চলে সরিষা চাষের পরিধি আগামীতে আরও বাড়বে বলে আশা করছি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আহসানুল বাসার জানান, দেশের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহতম জেলা হচ্ছে টাঙ্গাইল। ১২ উপজেলায় চলতি মৌসুমে সরিষায় লক্ষ্যমাত্রা ৫২ হাজার ১২০ হেক্টর জমি। প্রধানমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনায় ও কৃষিমন্ত্রীর মাধ্যমে ভৈজ্যতেলের ঘাটতি পূরণে ১৫ শতাংশ সরিষা উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আরও ৬ হাজার হেক্টর জমিতে অতিরিক্ত সরিষা চাষ করা হয়েছে। জেলায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক পর্যায়ে প্রায় ৩০ হাজার কৃষকদের মাঝে উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষার বীজ ও সার বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে কৃষকরা কাঙ্ক্ষিত ফলন পাবে আশা করছি।
এসএন