কুমিল্লায় এবার দ্বিগুণ সরিষা চাষ, ভালো ফলনের আশা
গত বছরের তুলনায় এবার কুমিল্লায় দ্বিগুণ জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন কৃষকরা। গত বছর জেলায় ৮ হাজার ৭৬৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। এবছর সরিষার আবাদ হয়েছে ১৬ হাজার ৩৯০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও ধরা হচ্ছে গতবারের চেয়ে আড়াইগুণ।
কৃষকরা জানিয়েছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবছর ফলন ভালো হবে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সরিষার উৎপাদন হলে সয়াবিন তেলের উপর থেকে চাপ কমবে বলেও জানান তারা। একই কথা উল্লেখ করে জেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, ভোজ্যতেলের বাজার অস্থিতিশীল থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দ্বিগুণ সরিষা চাষ হয়েছে কুমিল্লায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর জেলার ১৭ উপজেলায় ৮ হাজার ৭৬৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। এ বছর তা দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ ১৬ হাজার ৩৯০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। গত বছর জেলায় সরিষা উৎপাদন হয়েছে ৯ হাজার মেট্রিক টন। এবার লক্ষ্যমাত্রা ২৩ হাজার মেট্রিক টন। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় আড়াই গুণের বেশি। এবার সরিষা চাষে যুক্ত হয়েছেন ৩০-৩৫ হাজার কৃষক। যা গত বছরের তুলনায় অর্ধেকের বেশি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গোমতির চরসহ বিভিন্ন স্থানের মাঠ-ঘাট ছেয়ে গেছে সরিষার হলুদ ফুলে। সরিষার ফুলে আকৃষ্ট হয়ে মৌমাছিরা মধু আহরণে ব্যস্ত। জেলার সদর উপজেলা ছাড়াও বুড়িচং, সদর দক্ষিণ, মুরাদনগর, দেবিদ্বার, ব্রাহ্মণপাড়াসহ ১৭টি উপজেলাতেই এবছর সরিষার আবাদ করেছেন কৃষকরা। জেলার শত শত কৃষক এ বছর সরিষা চাষে ঝুঁকেছেন। এর মধ্যে কেউ কেউ ধানের বদলে সরিষা, কেউ মাছের বদলে সরিষা চাষ করেছেন। ফলে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে সরিষার আবাদ নতুন রেকর্ড গড়বে- এমনটাই প্রত্যাশা চাষিদের।
সদর দক্ষিণ উপজেলার কৃষক আবু আহমেদ বলেন, এ বছর ৩০০ শতক জমিতে ধানের বদলে সরিষা চাষ করেছি। পরিবারে তেলের চাহিদা মেটাতে বেশি পরিমাণ জমিতে সরিষা চাষ করেছি। আবাদ ভালো হলে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করব। আমাদের এলাকায় আরও অনেকেই সরিষা চাষ করেছেন।
সদর দক্ষিণ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুল বাশার বলেন, উপজেলায় ১৮৫ হেক্টরের বেশি জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। মূলত ভোজ্যতেলের উপর নির্ভরতা কমাতে কৃষকরা এই বিপ্লব ঘটিয়েছেন। আমরা বহুদিন ধরে কৃষকদের সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। এবার তারা সাড়া দিয়েছেন। আশা করছি, প্রত্যাশার চেয়ে লাভবান হবেন কৃষকরা।
বুড়িচং উপজেলার কৃষক হুমায়ুন কবির বলেন, সরিষা বিনা চাষেই উৎপাদন করা যায়। জমি সমান করা লাগে না, সেচ লাগে না। শুধু রোপণ করে দিলেই হয়। আর তেমন খরচ নেই। খাটা-খাটুনি ছাড়াই সরিষার ভালো ফলন পাওয়া যায়। এসব কারণে সরিষা আবাদে ঝুঁকেছি।
তিনি আরও বলেন, সরিষার উৎপাদন বেশি হলে মানুষ সরিষার তেল কম দামে পাবে। সয়াবিন তেলের বিকল্প হয়ে উঠবে। চাহিদা কমলে সয়াবিন তেলেরও দাম কমে যাবে। সরিষা আবাদে অনেক সুবিধা আছে। আমার তেল কেনা লাগবে না। সরিষা থেকে খৈল হয়। গরুর খৈল কেনা লাগবে না। ফলে সরিষা চাষে লাভ ছাড়া লোকসান নেই বললেই চলে।
বুড়িচং উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা বানিন রায় বলেন, উপজেলার ইউনিয়নগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়ে বসেছি। কোন চাষির কী সমস্যা? কীভাবে তাদের অনুপ্রেরণা দিয়ে সরিষা চাষে কাজে লাগানো যায়-এসব সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের ব্যবস্থা করেছি। এবার আমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছেন কৃষকরা। উপজেলার ৮০০ কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ করেছি। আমরা কৃষকদের পাশে সব সময় আছি। তাই তারাও সরিষা চাষে আগ্রহী হয়েছেন। আশা করছি, ভালো ফলন হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার দ্বিগুণ চাষ ও ফলন হবে। তিন মাসের মধ্যে ফসল আসবে। এজন্য যে পরিমাণ সার ও বীজ দরকার আমরা সরকারিভাবে কৃষকদের দিয়েছি। একই সঙ্গে কৃষকদের সব ধরনের সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
এসজি