কুড়িগ্রামে পান চাষে সফল ২৫ কৃষক
সাত সকালেই পান ক্ষেতের পরিচর্যা করছেন মন্টু চন্দ্র রায় (৫৫) ও তার স্ত্রী কল্পনা রানী রায় (৪৫)। ঘুম থেকে উঠে মুখে কিছু দিয়েই এ দম্পতি পান ক্ষেতের উদ্দেশে রওনা হন। মাত্র ২৮ শতক জমিতে পান চাষ করে পাল্টে গেছে এই চাষি দম্পত্তির জীবনমান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ফুলবাড়ী উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের বারাইপাড়া গ্রামটি ‘পানের বর’ নামে খ্যাত। ওই এলাকায় পানচাষিদের পাশাপাশি তাদের ছেলে-মেয়েরাও পানের বরজের মধ্যে গাছের পরিচর্যা ও পান তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছে। স্থানীয়রা জানান আগে ওই এলাকায় প্রতিটি পরিবার পানের চাষ করত। তাই ওই এলাকার নামকরণ হয়েছে বারাইপাড়া।
পান চাষ করে মন্টু চন্দ্র রায় ও তার স্ত্রী কল্পনা রানীই শুধু লাখপতি হয়েছেন তা না। ওই এলাকার প্রায় ২৫টি পরিবার পান চাষ করে সংসারের সচ্ছলতা ফিরিয়েছে। ধানসহ অন্য সবজি চাষাবাদ করলেও পানের বরজই তাদের একমাত্র ভরসা। কারণ অন্য ফসলের চেয়ে দ্বিগুণ আয় পান চাষে।
পান চাষি মন্টু চন্দ্র ও তার স্ত্রী কল্পনা রানী রায় জানান, চার বছর আগে মাত্র ২৮ শতক জমিতে পানের বরজ করেছেন। একটা পানের বরজ শুরু করতে খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ টাকা। তাদের পানের বরজটির বয়স এখন চার বছর হয়েছে। পান চাষের এক বছরের মধ্যেই ক্ষেতের পান বিক্রি শুরু করেছেন তিনি। বর্তমানে তারা পান ব্যবসায়ীদের কাছে পাইকারি ১০০ বড় পান ১৭০ টাকা ও ছোটটা ৮০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। মাত্র ২৮ শতক জমিতে তিন বছরেই প্রায় ৮ লাখ টাকার বিক্রি করেছেন।
মন্টু চন্দ্র রায় আরও বলেন, বন্যা ও শীত মৌসুমে রোগ দেখা দেয়। সেই রোগ প্রতিরোধ করতে আমরা সক্ষম হই। বর্তমানে বরজের অবস্থা খুবই ভালো। ফলনও খুবই ভালো হয়েছে। আমরা প্রতিদিনই বাড়িতে আসা পাইকারদের কাছে দেড় থেকে দুই হাজার টাকার পান বিক্রি করি। পান চাষে কঠোর পরিশ্রম করতে হলেও লাভ দ্বিগুণ। পানের বরজ দিয়ে আমাদের সংসার ১ ছেলের পড়াশুনাসহ সব কিছুই চাহিদা মিটছে। একটি পানের বরজ প্রায় ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত থাকে।
ওই এলাকার পান চাষি পরেশ কর (বারাই) ও অবিনাশ চন্দ্র কর (বারাই) জানান, তারা দুই জনেই ১ বিঘা জমিতে পানের বরজ দিয়েছে। বাবা-দাদার পেশা ধরে রাখতে প্রায় ২০ বছর ধরে পানের চাষাবাদ করে স্বচ্ছল ভাবে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন। বর্তমানে পানের দামও ভালো থাকায় দুজনেই খুশি। বড় ১০০ পানের দাম ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। ছোট পানের ১০০ দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা। তারা দুজনেই প্রতি বছরে গড়ে পানের বরজ থেকে দেড় লাখ টাকা বিক্রি হয়ে থাকে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াছমিন জানান, উপজেলার রাবাইতারীতে পানচাষিরা বাণিজ্যিকভাবে পান চাষবাদ করেছেন। ওই এলাকায় ২৫ জন পান চাষি ১৩ থেকে ১৪ বিঘা জমিতে পান চাষ করেছেন। কৃষি বিভাগ মাঠ পর্যায়ে পান চাষিদের মাঝে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান অব্যাহত রাখছেন। পানের বরোজ একটি লাভজনক ফসল। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবছরও পানের ফলন ভালো হয়েছে। এক বিঘা জমিতে পানের বরোজ থেকে দেড় লাখ টাকা আয় করছেন পান চাষিরা।
তিনি আরও জানান, উপজেলা বিভিন্ন ইউনিয়নের শতশত কৃষক সুপারি গাছে দেশি প্রজাতির পান চাষ করে তারাও বাড়তি আয় করছেন। কৃষি বিভাগের প্রচেষ্টায় আগামীতে এ অঞ্চলে পানের বরোজ সংখ্যা বাড়বে।
এসএন