দার্জিলিংয়ের কমলা এখন ফুলবাড়ীতে
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে এই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে দার্জিলিংয়ের সাদকি জাতের কমলার চাষবাদ করে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিক। কমলা রোপণের শুরুর দিকে স্থানীয়সহ অনেকের বিরূপ মন্তব্য থাকলেও বর্তমানে তার কমলা চাষের সাফল্য দেখে এখন কমলা চাষ করার জন্য স্থানীয়সহ অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
কীভাবে কমলার চাষ করে লাভবান হওয়া যায় এ বিষয়ে কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিকের কাছে গিয়ে পরামর্শ নিচ্ছেন এবং অনেকেই কমলার চাষাবাদ শুরু করেছেন। এরই মধ্যে উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের সুজনেরকুটি গ্রামটি নতুন করে পরিচিতি পেয়েছে কমলার গ্রাম হিসেবে। আবু বক্করের কমলার বাগানে থোকায় থোকায় কমলা দেখে অনেকেই মুগ্ধ হচ্ছে এবং এত সুন্দর বাগান করায় কৃষক আবু বক্কর প্রশাংসায়ও পাচ্ছেন। বর্তমানে তার বাগানে বিভিন্ন আকারের কমলার ভারে নুয়ে পড়া ডালগুলো বাঁশের ‘ঠেকা’ দিয়ে উঁচু করে দেওয়া হয়ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাগানের প্রতিটি গাছে গাছে কাঁচা সবুজ ও হলুদ কমলা ঝুলে আছে। দার্জিলিং সাদকি জাতের এ ফল মিষ্টি ও সুস্বাদু হওয়ায় বাজারেও এর ব্যাপক চাহিদা। ওই এলাকার সমতল ভূমিতে কমলা চাষের সূচনা করেন কৃষক আবু-বক্কর সিদ্দিক। আবু বক্কর ৪ বছর আগে যশোর জেলার মহেশ গ্রামে এক আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে যান। সেখানেই স্থানীয় আশরাফুল আলমের নার্সারি ও তার কমলার বাগান দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। সেখানেই তিনি কমলা চাষাবাদ করার চিন্তা মাথায় নেন এবং নার্সারির মালিক ও কমলা চাষি আশরাফুল আলমের সঙ্গে কমলা চাষ করার পরামর্শ নেন। পরবর্তিতে তিনি ওই নার্সারি থেকে দার্জিলিং এর সাদকি জাতের ২১০টি চারা সংগ্রহ করে ৩০ শতক জমিতে চারাগুলো ১০ ফুট দূরত্ব রেখে রোপন করেন। অক্লান্ত পরিশ্রম করে ১৩৫ টি গাছ রক্ষা করতে পেরেছেন। প্রতিটি গাছে ৭০ থেকে ১০০’র বেশি ফল ধরেছে। প্রতিদিন কমলার বাগানে পাকা কমলার স্বাদ নিতে স্থানীয়রাও আসেন। এমন দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে কমলা বাগানটি যেন মিনি পর্যটক কেন্দ্র। দেখতে যেমন সুন্দর, খেতে অনেক মিষ্টি। তার এ উদ্যোগ এ অঞ্চলের বেলে-দোআঁশ সমতল মাটিতে কমলা চাষে ব্যাপক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে।
সামান্য রাসায়নিক সারের সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে জৈব সার দেওয়ায় ২৮ মাস পর ফল আসা শুরু হয়।
কমলা বাগানের মালিক কৃষক আবুবক্কর সিদ্দিক জানান, দেশে পাহাড়ি এলাকায় কমলার বাগান আছে। এ ছাড়া বাজারে ভুটান ও ভারতের দার্জিলিং থেকে আমদানি করা কমলার প্রাধান্য। আশপাশের অনেকে এখন তার বাগান দেখতে আসছেন। দেড় থেকে দুই বিঘা জমিতে বাগান করেছেন। বর্তমানে বাগানে যে কমলা আছে তা বিক্রি করলে যাবতীয় খরচ মিটিয়ে কমপক্ষে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা থাকবে। সব মিলিয়ে তার ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
স্থানীয় মুসা মিয়া ও জাহের আলী জানান, আবু বক্কর কমলা চাষে সাফল্য অর্জন করে এ অঞ্চলের মধ্যে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বাগান দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই বাগান শুরু করেছেন। কেউ কেউ প্রস্তুতিও নিচ্ছেন।
ওই এলাকার মাইদুল ইসলাম ও জহির উদ্দিন বলেন, আবু বক্করের কমলার বাগান দেখে আমরাও ছোট পরিসরে বাগান শুরু করেছি। তবে এখনও ফল আসেনি।
নাগেশ্বরী উপজেলার সাতানিপাড়া থেকে কমলার বাগান দেখতে আসা তরুণ শিক্ষার্থী জুয়েল রানা ও আশরাফুল আলম জানান, ফেসবুকে কৃষক আবু বক্করের কমলার বাগানের ছবি দেখে আমরা মুগ্ধ হয়েছি। তাই দুই বন্ধু মিলে বাগান দেখতে এসেছি। বাস্তবে এসে কমলার বাগান দেখে আমাদের খুবই ভাল লাগল।
উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফা ইয়াছমিন বলেন, এ উপজেলার মাটি লেবু জাতীয় ফল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিক কমলার চাষ করে এক বিরল দৃষ্টান্ত দেখিছেন। তার কমলার বাগান দেখে আমরাও অবাক হয়েছি। তার বাগানের কমলা খেতে খুবই মিষ্টি। তবে এখানকার আবহাওয়া ও মাটি অনুকূলে থাকায় প্রচুর কমলার চাষ করা সম্ভব। ওই কৃষকের পাশাপাশি ওই গ্রামের অনেকেই কমলা চাষে এখন আগ্রহী। কৃষি বিভাগ কমলা চাষি আবু বক্করকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। সেই এ অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে কমলার চাষাবাদ বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কমলার বাগান করলে তিন থেকে চার বছরে মধ্যে ফল পাওয়া যায়।
এসএন