রাজশাহী অঞ্চলে ধানের জমি কমেছে ১ লাখ ৩৩ হাজার হেক্টর
রাজশাহী কৃষি অঞ্চলে এক যুগে ধানের জমি কমেছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮২ হেক্টর। ব্যাপক পরিমাণ ফলের উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় ধানি জমি কমছে। এদিকে ধানের জমির পরিমাণ কমলেও কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি ও উন্নত উদ্ভাবনী শক্তির কারণে উৎপাদন তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। তবে ক্রমবর্ধমান হারে ধানের জমিতে ফলবাগান, আবাসিক ভবন ও কারখানা নির্মাণ হলে অদূর ভবিষ্যতে সংকটের শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে এ অঞ্চলে ৮৭ হাজার ৩২ হেক্টর জমিতে ফলের বাগান ছিল। পাঁচ বছরের ব্যবধানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার ৮৫৫ হেক্টরে। লাভজনক হওয়ায় কৃষক বাণিজ্যিক ফলবাগানে ঝুঁকেছেন। এক যুগ আগে থেকেই এই অঞ্চলে বাণিজ্যিক ফলবাগান বাড়তে শুরু করেছে। এক যুগে এই অঞ্চলে ধান চাষের পরিধি কমেছে প্রায় ১ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮২ হেক্টর। তবে উল্টো চিত্র উৎপাদনে। এই এক সময়ের ব্যবধানে ধানের উৎপাদন বেড়েছে ৩৪ হাজার ৮৫ টন।
রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিয়ে রাজশাহী কৃষি অঞ্চল। আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮-২০০৯ মৌসুমে এই চার জেলায় আউশ, আমন ও বোরো মিলে মোট ধানের আবাদি জমি ছিল ১০ লাখ ৭৩ হাজার ৯১৩ হেক্টর। ওই সময় ধান উৎপাদন হয়েছে ৩২ লাখ ৭০ হাজার ২৪৩ টন। অন্যদিকে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে এই চার জেলায় মোট ধানের আবাদি জমি ছিল ৯ লাখ ৪০ হাজার ৫৩১ হেক্টর। তাতে ধান উৎপাদন হয়েছে ৩৩ লাখ ৪ হাজার ৩২৮ টন। ১৪ বছরের ব্যবধানে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮২ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ কমেছে। তবে এই সময়ে উৎপাদন বেড়েছে ৩৪ হাজার ৮৫ টন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত দুই বছরেই এই অঞ্চলের চার জেলার ৭৬ হাজার কৃষক এক বিঘা জমিতে ধান চাষের জন্য প্রণোদনার আওতায় ৫ কেজি করে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানবীজ এবং ২০ কেজি করে সার পেয়েছেন। এর মধ্যে ২০২১-২০২২ মৌসুমে ৪৩ হাজার ২০০ জন আউশ, ১ হাজার ৪০০ জন রোপা আমন হাইব্রিড এবং ১১ হাজার ৬০০ জন উফশি রোপা আমন বীজ ও সার পেয়েছেন। ওই বছরই চাষাবাদের জন্য আরও ৬৪৩ জন কৃষককে প্রণোদনার সার-বীজ দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, রাজশাহী অঞ্চলে চাষের জন্য উপযোগী ধানের বেশ কিছু জাত উদ্ভাবন করেছে ধান গবেষণা কেন্দ্রের আঞ্চলিক দপ্তর। খরাসহিষ্ণু জাত ব্রি ধান-৭১ ও পুষ্টি গুণাগুণ সম্পন্ন জিংকসমৃদ্ধ জাত ব্রি ধান-৭৪ এবং ব্রি ধান-৮৪ উদ্ভাবন করেছেন এখানকার বিজ্ঞানীরা। বোরো মৌসুমে অধিক ফলনশীল ব্রি ধান-৮১, ব্রি ধান-৮৮ এবং ব্রি ধান-৮৯ উদ্ভাবনেও এখানকার বিজ্ঞানীদের অবদান আছে। ব্রি ধান-৭৫ উদ্ভাবনেও এখানকার বিজ্ঞানীরা বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ব্রি রাজশাহী অঞ্চলের প্রধান ড. ফজলুল ইসলাম বলেন, ধানের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনে এখানকার বিজ্ঞানীরা কাজ করে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে বেশ কিছু ধানের উন্নত জাত উদ্ভাবন হয়েছে। এগুলো এই অঞ্চলে চাষের উপযোগী। এখানে চাষ উপযোগী ব্রি হাইব্রিড ধান-৭ এবং ব্রি ধান-৯৮ উদ্ভাবন করা হয়েছে। রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও নওগাঁর মহাদেবপুরে এই ধান চাষ হয়। এই ধান তুলে গোদাগাড়ীতে টমেটো ও মোহনপুরে আলু চাষ করেন কৃষকরা। সম্প্রতি ব্রি ধান-১০২ উদ্ভাবন হয়েছে। উচ্চ মাত্রার জিংকসমৃদ্ধ এবং রোগ প্রতিরোধী এই জাতটি আগামী বোরো মৌসুমে কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। কৃষকদের দিন বদলে দিয়েছে চাষের আধুনিক কৌশল ও উচ্চ ফলনশীল জাতের এসব ধান।
রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শামসুল ওয়াদুদ জানান, আধুনিক প্রযুক্তি, সেচ সুবিধা ও উচ্চ ফলনশীল জাতের উদ্ভাবনের মধ্যে দিয়ে ধানের জমির পরিমাণ কমলেও উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। এটি এ অঞ্চলের কৃষক, কৃষি দপ্তর ও উদ্ভাবকদের সফলতা। তবে উত্তরোত্তর যদি ধানের জমি কমে যায়; তবে অদূর ভবিষ্যতে নতুন সংকটের মুখে পড়তে হবে। অনেকে তিন ফসলি, দুই ফসলি জমিতে কারখানা, আবাসিক ভবন করছেন। যেটা আইনত নিষিদ্ধ। এ ছাড়া তিন ফসলি ধানের জমিতে ফলের বাগানেও নিষেধাজ্ঞা আছে। বিষয়টি সরকারের সুনজরে আছে। অচিরেই প্রশাসনিক তৎপরতাও হয়তো বাড়বে।
এসএন