রাজশাহীতে সরিষা চাষের রেকর্ড লক্ষ্যমাত্রা
সাম্প্রতিক সময়ে ভোজ্যতেল নিয়ে তেলবাজির খবর সবারই জানা। তবে এর পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সে লক্ষ্যে ভোজ্যতেল আমদানি নির্ভর থেকে স্বনির্ভরতা অর্জনে রাজশাহীতে তিন বছরের বিশেষায়িত পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে। যে পরিকল্পনায় বছরের ব্যবধানে সরিষা আবাদে যুক্ত হচ্ছে প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার হেক্টর জমি। মাঠপর্যায়ে কৃষকদের দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা। স্বল্প সময়ে লাভজনক এই আবাদে চাষিদের সুদিন ফিরবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত মৌসুমে রাজশাহী জেলায় ২৪ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৬ হাজার ১৭৮ মেট্রিক টন। ত্রি-বার্ষিক বিশেষায়িত পরিকল্পনায় এই মৌসুমে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪০ হাজার ২৫০ হেক্টর। যা গত বছরের চেয়ে ১৫ হাজার ৩০০ হেক্টর বেশি। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৩ হাজার ৯৯৭ মেট্রিক টন। যা সরিষার আবাদ বৃদ্ধিতে কৃষি দপ্তরের নেওয়া বছরের ব্যবধানে সর্বোচ্চ আবাদ পরিকল্পনা।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা যায়, ভোজ্যতেল আমদানি নির্ভর। দেশীয় উৎপাদন মোট চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ পূরণ করতে সক্ষম। করোনা মহামারি পরবর্তী সময়ে ভোজ্যতেল নিয়ে তেলবাজির চিত্র সবার জানা। যেটা নিয়ে সরকারও বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। এ কারণে তেলের দেশীয় উৎপাদন মোট চাহিদার অন্তত ৪০ শতাংশ পূরণে কৃষি দপ্তরের বিশেষায়িত ত্রি-বার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে।
রাজশাহীতে আমন ও বোরো ধান চাষের মাঝামাঝিতে কৃষকদের সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। পহেলা নভেম্বর থেকে পুরোদমে রাজশাহীতে সরিষা রোপণ শুরু হবে। তবে আমন কেটে এরই মধ্যে অনেকে সরিষা রোপণ করছেন। ত্রি-বার্ষিক পরিকল্পনাকে সামনে রেখে সরিষা বীজের সংরক্ষণও বাড়ানো হয়েছে। এতে চলতি মৌসুমে কৃষকরাও সরিষার সর্বোচ্চ দাম পাচ্ছেন।
সরিষার বর্তমান বাজার পরিস্থিতির খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৌসুমের শুরুতে প্রতি মণ কাঁচা সরিষা ২০০০-২৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে জেলায় শুকনো সরিষা ৩ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে সরিষার বীজ এবার বাড়তি দরেই কিনতে হচ্ছে।
রাজশাহীতে সাধারণত ৭ জাতের উচ্চফলনশীল সরিষা আবাদ করে থাকেন চাষিরা। এগুলো হলো- বিনা সরিষা ৪, ৯ ও ১০ এবং (উফশি) জাতের বারি সরিষা- ১৪, ১৫, ১৭ ও ১৮।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের চাষি ইউসুফ আলী বলেন, আড়াই বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছিলাম। এর আগে কোনোদিন সরিষার এত দাম পায়নি। সরিষা ২৮ শ' টাকা মণ দরে বিক্রি করেছি কাঁচা অবস্থায়। আর কিছু রেখেছিলাম। যা এখন ৪ হাজার টাকা মণ দরে দাম হাঁকছে।
পবা উপজেলার কৃষক আব্দুল গণি জানান, তিনি দেড় বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছিলেন। পরিবারের চাহিদা পূরণ করে কিছু বিক্রি করেছিলেন কাঁচা অবস্থায়। এক মাস আগেই তিনি সরিষা সাড়ে ৩ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করেছেন। বীজের সরিষার দাম ৪ হাজার টাকার উপরে। আগে সরিষার দাম এত হয়নি।
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, স্থানীয়ভাবে তেলের চাহিদা ৪০ শতাংশ পূরণে দেশব্যাপী কৃষি দপ্তরের একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে। রাজশাহীতে এটা শুরু হয়েছে। যেখানে কৃষকদের বিভিন্ন ভাগে সহযোগিতা ও উৎসাহিত করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, একটি ধান থেকে আরেকটি ধানের জন্য অপেক্ষায় প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর জমি সাধারণত পড়ে থাকে। এই সময়ের মধ্যে সরিষা চাষ সম্ভব। খরচ কম এবং লাভজনক এই আবাদের ত্রি-বার্ষিক পরিকল্পনার মধ্যে প্রথম বছরেই ৪০ হাজার ২৫০ হেক্টরের টার্গেট করা হয়েছে। তবে এটা ৫০ হাজার হেক্টর ছাড়িয়ে যাবে। এই তিন বছরে ২৪ হাজার হেক্টর থেকে ৮০ হাজারের বেশি হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ বৃদ্ধি করা হবে।
এসজি