হিলিতে গোড়াপচা রোগে ঝরে পড়ছে পান
দিনাজপুরের সীমান্তবর্তী এলাকা হিলিতে পানের বরজে দেখা দিয়েছে গোড়াপচা রোগ। গাছের গোড়ায় পচন ধরে গাছ মরে ঝরে পড়ছে সব পান। পানের পাতাতেও পচন দেখা দিয়েছে। ওষধু দিয়ে কাজ না হওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছেন চাষিরা। উপায় না পেয়ে অনেকে পানের বরজ উঠিয়ে দেওয়া কথা ভাবছেন।
শষ্যভাণ্ডারখ্যাত দিনাজপুরের হিলিতে লাভজনক হওয়ায় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠে পান চাষ। সীমান্তবর্তী ঘাসুরিয়া, ঘনশ্যামপুর ও মাধবপাড়া এলাকা পুরোপুরি এখন পান চাষাবাদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন ব্যাংক বা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে লাভের আশায় অনেক বেকার যুবক পান চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। বর্তমানে ৪০ হেক্টর এলাকাজুড়ে ৩৫৬টি পানের বরজ গড়ে উঠেছে। যেখানে আগে ৩৭ হেক্টর জমিতে পানের বরজ ছিল। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হতো এই পান। কিন্তু আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাব বিশেষ করে অনাবৃষ্টির কারণে পানের বরজে দেখা দিয়েছে গোড়াপচা ও পাতাপচা রোগ।
ঘাসুড়িয়া গ্রামের পান চাষি সুলতান মাহমুদ বলেন, এবারে পান চাষের একমাত্র সমস্যা হলো গোড়াপচা রোগ। যার কারণে লাইনকে লাইন পানের গাছ মরে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে অনেক গাছের পান পচে যাচ্ছে। এতে করে আমাদের পোষাচ্ছে না। আমার ১০ কাঠা জমির পানের বরজ থেকে আগে হয়তো ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পান বেচতাম এখন সেখানে ৫ হাজার টাকারও পান বিক্রি হচ্ছে না। এতে করে খৈল কেনা, শ্রমিকসহ অন্যান্য যে খরচ তা উঠছে না। এক বস্তা খৈলের দাম ২২০০ থেকে ২৪০০ টাকা মৌসুমে আমাদের বরজে খৈল লাগে ১০/১২ বস্তা কিন্তু বর্তমানে যে পান বিক্রি হচ্ছে তাতে করে ৩/৪ বস্তা খৈলের দাম উঠছে না। বর্তমানে পানের দাম যা আছে তাতে করে সমস্যা নেই কিন্তু ক্ষেত থেকে সেই হিসেবে আমাদের ঠিকমতো পান তো পাওয়া যাচ্ছে না। এর উপর যতটুকু পাওয়া যাচ্ছে পানে পচনের কারণে দাম কম পাওয়া যাচ্ছে।
পানচাষি শহিদুল ইসলাম বলেন, এবারে পানের বরজ মালিকদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে পানের পচারি রোগ। মারাত্মক আকারে পানে পচারি রোগ ধরেছে। কোনো ওষুধ দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। গাছের গোড়ায় ঘায়ের মতো হচ্ছে ঠিক যেমন পুড়ে গেলে হয়, ওইরকম হয়ে ভিজে উঠছে আর কষানি পড়ছে। কিছুই থাকছে না এতে করে সব পানের গাছ উঠিয়ে ফেলে দিতে হচ্ছে। এবারে পান চাষ করে লাভ হচ্ছে না।
পানচাষি মিন্টু বলেন, এবারে পানের বরজে রোগের প্রকোপটা বেশি। গাছ মরে যাচ্ছে মাটি দিয়ে কোনো কাজ হচ্ছে না। গাছের গোড়ায় পচন ধরছে এতে গাছ মরে সাফ হয়ে যাচ্ছে। সেইসঙ্গে গাছের পান পচে শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া খরার কারণে গাছ বাড়ছে না। যার কারণে এবারে পানের বরজ মালিকদের অবস্থা খুব খারাপ।
অপর চাষি তোফাজ্জল হোসেন বলেন, পানের গাছের গোড়ায় কালো দাগ ধরে গাছ মরে যাচ্ছে। এ ছাড়া গাছে খোকশার মতো পড়ছে। এতে করে এবারে পানচাষিদের মাথায় হাত। সর্বনাশ হওয়া ছাড়া আর তো কোনো উপায় দেখছি না। লাভের আশায় বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে পানের বরজ করেছিলাম। কিন্তু এখন যে অবস্থা তাতে করে ঋণ পরিশোধ করব কীভাবে আর অন্য কিছু করব কীভাবে। বাধ্য হয়ে পানের বরজ ভেঙে দিয়ে অন্য আবাদ করার সিন্ধান্ত নিয়েছি।
শ্রমিক ইয়াসিন আলী ও রমজান হোসেন বলেন, আমাদের এই অঞ্চলে ৩০০ পানের বরজ রয়েছে যেখানে প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক কাজ করেন। আগে আমাদের ভালো কাজ হতো কিন্তু এখন কাজকর্ম অনেকটা কমে গেছে। পানের বরজে পচারি ধরে মরে যাচ্ছে। গৃহস্থরা আর শ্রমিক খাটাতে পারছে না। যে দুয়েকটা বরজে কাজ হচ্ছে তাদের মালিক নিজেরাই কাজ করছেন শ্রমিক নিচ্ছেন না। যারা পানের বরজে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তাদের জন্য অসুবিধা হয়ে গেছে।
হাকিমপুর উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি অফিসার আরজেনা বেগম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বৃষ্টিপাতের কারণে কিছু কিছু পানের বরজে পচন দেখা দিয়েছে। পচন রোগ প্রতিরোধে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে লিফলেট বিতরণসহ সবধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যাতে করে কৃষক ভাইয়েরা সঠিক সময়ে সঠিক ওষুধ প্রয়োগ করে ভালো ফল পান। পচনরোধে ট্রাইকো কম্পোস্ট, ভার্মি কম্পোস্ট মেলসার, অটোস্টিন, নাটিভো ওষুধ বেশ কার্যকরী। এসব ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছি। সেই মোতাবেক কৃষকরা এসব ওষুধ ব্যবহার করে ভালো ফলাফল পাচ্ছেন।
এসএন