বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া- ২

শারদীয় দুর্গোৎসবের উৎপত্তিস্থলে…

মার্বেল পাথরে বর্ণনা

বছর ঘুরতে ঘুরতে এসে গেছে শরৎকাল। আর একদিন পরেই দুর্গাপূজা। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান। কিন্তু এই শারদীয় দুর্গোৎসবের উৎপত্তি কোথায়, বা কবে, তা কি আমরা জানি?

ঘুরছিলাম রাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলায় কিছু হেরিটেজ সাইটের খোঁজে। নাটোর জেলার লাগোয়া বাগমারা উপজেলা হলো রাজশাহী জেলার সর্ব পূবের উপজেলা; যেটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অনেকগুলি হেরিটেজ সাইট; অন্তত ১০০ বছরের পুরোনো কিছু স্থাপনা।

তাহেরপুর পৌরসভা এলাকায় প্রবেশ করতেই লোকমুখে খোঁজ পেলাম এক পুরোনো রাজবাড়ির, যা রাজা কংশ নারায়ণ রায়ের রাজবাড়ি নামে পরিচিত। বর্তমানে তাহেরপুর ডিগ্রি কলেজ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। রাজা কংশ নারায়ণের রাজবাড়ি ছিল দুটি। প্রথমটি ছিল তার আদি বাড়ি। তার আমলেরই, সেটি পুরোনো ও বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় তিনি আরেকটি সুরম্য প্রাসাদ নির্মাণ করেন। পুরোনো দ্বিতল বিশাল বাড়িটি এখন বিলুপ্তপ্রায়। পরে নির্মিত প্রাসাদটি সংস্কার করা হয়েছে বেশ কয়েকবার। সেটিই এখন ডিগ্রি কলেজ। যাচ্ছিলাম এই স্থাপনা দেখতে। খুঁজে পেতে কষ্ট হলো না। কিন্তু কলেজ চত্ত্বরে প্রবেশ করতে গিয়েই পড়লাম সমস্যায়।

শিব মন্দিরের শিলালিপি চুরি হয়ে গেছে

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে গেছি বলে কলেজ বন্ধ, মূল ফটকে তালা দেওয়া। চাবি যার কাছে থাকে, সে থাকে কিছুটা দূরে। ঢাকা থেকে গেছি শুনে কেউ একজন দয়া করে আরেকজনকে পাঠাতে চাইলো চাবিওয়ালাকে ডেকে আনার জন্য। কিন্তু গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে দূর থেকে দেখে যতটুকু বুঝলাম, বারবার অপরিকল্পিতভাবে সংস্কার করতে গিয়ে আধুনিকতার পরশ আনার নামে এই চমৎকার পুরাকীর্তিটির সর্বনাশ করে ফেলা হয়েছে।

মন থেকে আর সায় পাচ্ছিলাম না, এমন সর্বনাশ করা একটি স্থাপনা দেখার জন্য ছুটির দিনে শুধুশুধু একজন কর্মচারীকে তার বাড়ি থেকে ডেকে আনার। চলে আসব নাকি অপেক্ষা করবো, এমন দোদুল্যমান অবস্থায় থাকতেই এক তরুণ এগিয়ে এসে জানাল, কলেজের পাশেই কয়েকটি পুরোনো মন্দির আছে, সেগুলি দেখতে পারি। মন্দিরগুলি নাকি কংশ নারায়ণেরই সৃষ্টি। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম, মন্দির দেখব, প্রাসাদ আর দেখব না

কথা প্রসঙ্গে জানলাম আমাদের এই স্বঘোষিত গাইড একজন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক। তার কথাবার্তায় শিক্ষিত বলেই মনে হলো। কলেজের বাউন্ডারি দেয়ালের শেষ মাথা পেরিয়ে পশ্চিম পাড়ের দেয়াল ঘেঁষেই নিয়ে গেল মন্দির চত্ত্বরে। যেতে যেতেই এই গাইড বলেছে মোঘল সম্রাট আকবরের সময় রাজা কংশ নারায়ণ রায় এই মন্দির থেকে দুর্গাপূজার প্রচলন করেছিল। হিসাব করলাম, তাহলে মন্দিরটির বয়স অন্তত ৫০০-৫৫০ বছর হবার কথা। বাংলাদেশের বিভিন্ন হেরিটেজ সাইটে এরকম স্বঘোষিত গাইডদের দেওয়া বর্ণনাগুলো আমি বরাবরই খুব উপভোগ করে থাকি। কিছুটা শোনা কথা এবং তাদের কল্পনাশক্তির সংমিশ্রণে চমৎকার গল্প বানিয়ে বসে তারা, যার সঙ্গে অধিকাংশ সময়েই ইতিহাসের মিল পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। তাই এই গাইডের বর্ণনাও শুনছিলাম কিছুটা মনযোগ দিয়েই। তবে বিশ্বাস করছিলাম কি না, সেটি ভিন্ন প্রশ্ন।

মন্দির চত্বরের সামনেই একটি মার্বেল পাথরের ফলক চোখে পড়ল, কিন্তু একে তো ছোট লেখা, আবার বেশ কিছু জায়গায় লেখার রঙও উঠে গেছে। তাই পড়তে কষ্ট হচ্ছিল। পড়ার চেষ্টা না করে বরং ছবি তুলে নিলাম। এরপর পেলাম হাতের ডানে একটি শিবমন্দির, যার ছাদে আটটি ডিম্বাকৃতি চাকতির উপর থেকে অষ্টভূজ আকৃতির ছাদ সরু হয়ে উপরে উঠে গেছে। সংস্কার হয়েছে বলে এটি কবেকার বুঝা গেল না। তবে আকৃতি দেখে মনে হলো না ১৫০ বছরের পুরোনো হবে। মূল ফটকের উপর যে আগে একটি শিলালিপি ছিল, তাও বুঝাই যায়। কে বা কারা সেটি নিজের মনে করে হয়তো নিয়ে গেছে। তারপর অন্তত শতবর্ষী ভগ্নপ্রায় একটি পরিত্যক্ত ভবন, এরপর চোখে পড়ল একটি টিনের চালা বিশিষ্ট ভবন, দরজা-জানালা সব বন্ধ বলে আবাসিক ভবন না অন্য কিছু বুঝলাম না। তারপর সবার সামনে একটি দুর্গা মন্দির। কিন্তু এটি দেখে বড়জোর ২০-২৫ বছরের পুরাতন বলে মনে হলো। গাইডকে জিজ্ঞেস করলাম, ৫০০ বছরের পুরাতন মন্দিরটি তাহলে কোথায়? সে ঘুরে দাঁড়িয়ে পেছনে ফেলে আসা একটি একেবারে বিধ্বস্ত ভবন দেখিয়ে বলল, “ওই যে!” আসলে তার সঙ্গে কথা বলতে বলতে চত্বরে প্রবেশ করে ডানদিকে শিব মন্দির এবং শতবর্ষী ভবনটি চোখে পড়ে যাওয়ায় নজর ছিল সেদিকেই। বামদিকে যে ভাঙা মন্দিরটি রয়ে গেছে, তা আর চোখেই পড়েনি।

যাহোক, পুরোনো কিছু তো দেখলাম। তবে গল্পটি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না বলে খুব বেশি গুরুত্ব দেইনি, তেমন ছবিও তুলিনি। এমন ভাঙা পুরোনো মন্দির তো দেশজুড়ে কতই রয়েছে। গাইডকে ধন্যবাদ দিয়ে ফিরে এলাম। গাড়ি ছাড়ার কিছুক্ষণ পর ক্যামেরায় তোলা মার্বেল ফলকটির ছবি বের করে এনলার্জ করে পড়তে চেষ্টা করলাম লেখাগুলি। এবার কিন্তু সত্যিই বিস্মিত হলাম। গুগলে সার্চ করা ধরলাম কংশ নারায়ণ রায় এবং তার মন্দির কাহিনি। বাসায় ফিরে এসে আরেকটু গবেষণায় বসতেই হলো, আরও কিছু সোর্সের মাধ্যমে তথ্য-উপাত্ত যোগাড় করার নেশা পেয়ে বসল। বুঝতে পেরেছি, অটোচালক স্বঘোষিত গাইড একটিও মিথ্যে কথা বলেনি, একটুও বাড়িয়ে বলেনি। বড়ই আফসোস হলো, তখন তার কথা বিশ্বাস করে আরও কিছু ভালো ছবি তুলিনি বলে।

শিব মন্দিরের ছাদ

কে ছিলেন কংশ নারায়ণ রায়
কংশ নারায়ণ সম্পর্কে কোনো ডকুমেন্টেই একসঙ্গে খুব বেশি কথা লেখা নেই। বিভিন্ন সোর্স খুঁজে খুঁজে জোড়া দিতে হয়েছে। জানা ইতিহাসের সঙ্গে সময়ের হিসাব মেলাতে হয়েছে তথ্যনির্ভরতার জন্য। বিভ্রান্ত হয়েছি ফলকে লেখা সময়কালের সঙ্গে মেলাতে গিয়ে। আবার খুঁজতে হয়েছে তথ্য। সব একত্র করলে যা দাঁড়ায়, তা তুলে ধরছি।

আজ থেকে প্রায় ৭০০ বছর আগে তৎকালীন বঙ্গে যতগুলি প্রতিষ্ঠিত আঞ্চলিক বংশ ছিল, তার সবচেয়ে সম্মানিত ও প্রতিষ্ঠিতগুলির একটি ছিল এই তাহেরপুরের রায় বংশ। এই বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মাণবত্ত রায় (কারও কারও মতে কামদেব রায় বা কামদেব ভট্ট) এবং তার উত্তরসূরিদের মধ্যে সবচেয়ে প্রখ্যাত ছিলেন কংশ নারায়ণ রায়। মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন দয়ালু ও পরোপকারী, প্রশাসক হিসেবে ছিলেন বিচক্ষণ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এবং যোদ্ধা হিসেবে ছিলেন সাহসী ও দুর্ধর্ষ।

সুলতানি আমলের শেষ সুলতান ইব্রাহীম লোদীর শাসনকালে তরুণ কংশ নারায়ণ তার বংশের দায়িত্ব পেলেন। এ সময়ে বার্মা থেকে মঘ জলদুস্যুরা প্রায়ই নদীপথে এসে ঢাকা আক্রমণ করত লুটপাটের জন্য। তৎকালীন বাংলার দেওয়ানকে সাহায্য করার জন্য কংশ নারায়ণ কয়েকবার তার বাহিনী নিয়ে শত্রুপক্ষকে পরাভূত করেন। নদীপথে পদ্মা হয়ে তার বাহিনী মেঘনা নদীতেই রুখে দাঁড়াত মঘদের গতিপথ, ঢাকার দিকে আসার সুযোগই দিত না। এভাবে খুব অল্পবয়সেই একজন সাহসী যোদ্ধা এবং সুপ্রশাসক হিসেবে তার পরিচিতি বাড়তে থাকে।

ভগ্নপ্রায় শতবর্ষী ভবন

১৫২৬ সালে বাবরের মাধ্যমে আরম্ভ হয় মোঘল আমল। এসময়ে বাংলার দেওয়ানের মৃত্যু হলে বাবর কংশ নারায়ণকে বাংলা ও বিহারের অস্থায়ী দেওয়ান হিসেবে নিযুক্ত করেন। চার বছর পর বাবরের মৃত্যুর পর তার পুত্র হুমায়ুন হন দ্বিতীয় মোঘল সম্রাট। হুমায়ুনও কংশ নারায়ণকে বাংলা ও বিহারের অস্থায়ী দেওয়ান হিসেবে স্বীকৃতি দেন। ফলে মোঘল সাম্রাজ্যের প্রতি তার আনুগত্য আরও বৃদ্ধি পায়।

হুমায়ুন নিজেও ছিলেন তরুণ। কিন্তু তার ছিল বিচক্ষণতার অভাব। যে কারণে শের শাহ-এর কাছে পরাভূত হলে মোঘল সাম্রাজ্য সাময়িকভাবে হারিয়ে যায় পাঠানদের কাছে। তবে ১৫ বছর পর আবার ক্ষমতায় আসে হুমায়ুন। এই দীর্ঘ সময়ে পাঠান বাহিনীর সঙ্গে বারবার যুদ্ধে লিপ্ত হয়েও তার ক্ষমতা ধরে রাখেন কংশ নারায়ণ।

কিন্তু মোঘল সাম্রাজ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক বছর পরেই হুমায়ুনেরও মৃত্যু হয়। ক্ষমতায় আসেন তৃতীয় মোঘল সম্রাট হিসেবে আকবর। দীর্ঘ আনুগত্য ও সাহসীকতার স্বীকৃতি হিসেবে সম্রাট আকবর কংশ নারায়ণকে বাংলা ও বিহারের খাস দেওয়ান হিসেবে নিযুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ততদিনে কংশ নারায়ণের বয়স অনেক বেড়েছে। শরীরের বল কমেছে। তিনি আর এই দায়িত্ব নিতে চাননি। সম্রাট আকবরকে তার এই সিদ্ধান্তের জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি এই দায়িত্ব কাঁধে নিতে অস্বীকার করেন এই জানিয়ে, এই বৃদ্ধ বয়সে এসে তিনি তার শেষ বছরগুলি ধর্মকর্ম ও জনসেবা করেই কাটাতে চান। যুদ্ধবিগ্রহ বা ক্ষমতার প্রতি আর তার আকর্ষণ নেই।

শতবর্ষী ভবনের দেয়াল ফুঁড়ে গাছের শেকড়

সম্রাট আকবর তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেন ঠিকই, তবে সম্মান জানিয়ে “রাজা” উপাধিতে ভূষিত করেন। সেই থেকে তিনি অপেক্ষাকৃত ছোট একটি জমিদারি পরিচালনা করলেও রাজা কংশ নারায়ণ রায় হিসেবে পরিচিত হন।

রাজা উপাধি পাবার পর কংশ নারায়ণ মরিয়া হয়ে ওঠেন এমন কিছু করার জন্য, যার জন্য মানুষ তাকে মনে রাখবে এবং সম্রাট আকবরের দেওয়া উপাধিটির অর্থবহতা ও যথার্থতা তিনি প্রমাণিত করতে পারেন। ধর্ম নিয়ে গবেষণায় তিনি মনোনিবেশ করেন এবং গোটা ভারতবর্ষ থেকে প্রখ্যাত ব্রাহ্মণ পণ্ডিতদের আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে আসেন তাহেরপুরে। খবর পেয়ে সম্রাট আকবর তার রাজসভার সবচেয়ে জ্ঞানী ব্রাহ্মণ পণ্ডিতকেও পাঠিয়ে দেন তাহেরপুরে।

বাংলার প্রখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক কির্তিমান ওঝার বাংলা অনুবাদ করা রামায়ণ আদ্যপান্ত পড়েছেন কংশ নারায়ণ। সে সময় পর্যন্ত দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হতো খুবই ছোট আকারে এবং সেটি হতো চৈত্র মাসে। কংশ নারায়ণ রামায়ণের অনুবাদ পড়ে ধারণা পেয়েছেন যে এই পূজা হয়তো সঠিক সময়ে এবং সঠিক গুরুত্বের সঙ্গে আয়োজন হচ্ছে না। তারই অনুরোধে ব্রাহ্মণ পণ্ডিতরা এই নিয়ে গবেষণা ও আলোচনায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। দীর্ঘ গবেষণার পর পণ্ডিতদের পক্ষে সেকালের সর্বোচ্চ শ্রদ্ধেয় পণ্ডিত রমেশ শাস্ত্রী রাজা কংশ নারায়ণ রায়কে দুর্গোৎসবের জন্য শরৎকালে নতুনভাবে যজ্ঞ আরম্ভ করার সিদ্ধান্ত অর্পণ করেন।

সেবছরই প্রথমবারের মতো শারদীয় দুর্গোৎসব আয়োজন করেন রাজা কংশ নারায়ণ। কথিত আছে, প্রথম বছরে ৯ লক্ষ রুপী (কোনো কোনো গবেষকদের মতে ৮.৫ লক্ষ) ব্যয় করা হয়েছিল দুর্গাপূজা আয়োজনের জন্য। এর মধ্যে সবচাইতে বড় খরচ হয়েছিল তারই প্রতিষ্ঠিত একটি পুরোনো মন্দির ঢালাওভাবে সংস্কার এবং স্বর্ণনির্মিত একটি দুর্গা মূর্তির পেছনে। পূজার মণ্ডপ স্থাপন করা হয়েছিল বারনই নদীর পাড়ে। কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে এটি ছিল ১৫৮০ সাল, কেউ কেউ দাবি করেন ১৫৭০ সাল (ফলকে অবশ্য লেখা রয়েছে ১৪৮০, যা ইতিহাসের হিসেবে মিলে না!)

ভেঙে পড়া মূল মন্দির

সেই থেকে আরম্ভ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব! রাজা কংশ নারায়ণ রায় তার জীবদ্দশায় কেবল দুই বছর (কারো কারো মতে তিন বছর) সাড়ম্বরে আয়োজন করতে পেরেছিলেন শারদীয় দুর্গাপূজা। ততদিনে এই খবর পৌঁছে গেছিল চারিদিকে। কংশ নারায়ণের মৃত্যুর পর পূজা আয়োজনে কিছুটা ভাটা পড়ে যায়। আশপাশের কিছু জমিদার ছিলেন মুসলমান। কিন্তু তাদের প্রজাদের অধিকাংশই হিন্দু ধর্মালম্বী হবার কারনে মুসলিম জমিদাররাও ব্যয় বহন করতে থাকেন পূজার। সেই থেকেই এর নাম হয়ে যায় সর্বজনীন শারদীয় দুর্গোৎসব।

রাজা কংশ নারায়ণের মৃত্যুর বহু বছর পরও লোকমুখে তার বিশাল আয়োজনে পূজা উদযাপনের গল্প পৌঁছে যায় ভারতবর্ষে। বাংলার পশ্চিমের জেলাগুলিতে জমিদারদের উপর চাপ আসতে থাকে কংশ নারায়ণের মতো করে অন্তত একবার আয়োজন করার। প্রায় ২০০ বছর পর ১৭৯০ সালে হুগলী জেলার অন্তর্গত ছোট-বড় মিলিয়ে ১২জন ব্রাহ্মণ জমিদার সিদ্ধান্ত নেন, তাদের সবার অর্থ একসঙ্গে করে কংশ নারায়ণের সমপরিমাণ অর্থে উদযাপন হবে দুর্গা পূজা। সেই বারোজনের মিলিত প্রয়াস থেকেই জন্ম হলো বারোয়ারি পূজার!

সম্রাট আকবর বহু চেষ্টা করেও বাংলা আর বিহারের বাইরে শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রসার ঘটাতে পারেননি। আজও তেমন ঘটেনি।

মূল মন্দিরে শেষ সংস্কারের নিদর্শন

মন্দিরটির বর্তমান অবস্থা
শারদীয় দুর্গোৎসবের যাত্রা যে মন্দিরটি থেকে, বর্তমানে তার অবস্থা বড়ই করূন, একেবারেই ভগ্নদশা। কংশ নারায়ণের পরবর্তী প্রজন্মগুলি বংশপরম্পরায় জমিদারি ভোগ করলেও তেমন কিছু করতে পারেনি। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর অধিকাংশ বংশধরই কোলকাতায় পাড়ি জমান। সুকুমার রায়ের “সৎ পাত্র” ছড়াতেও এই কংশরাজের বংশধরেরই উল্লেখ রয়েছে।

বিভিন্ন সময়ে যে মন্দিরটিকে সংস্কারের চেষ্টা করা হয়েছে, তার কিছুটা নমুনা চোখে পড়ে। তবে ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে এর সম্পূর্ণ ছাদ ভেঙে পড়ার পর নতুনভাবে পাশে আরেকটি মন্দির গড়া হয়। ১৯৬৭ সালে কংশ নারায়ণের প্রাসাদটিকে সংস্কার করে এখানে তাহেরপুর ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠা করলেও মন্দিরটি ১৯৪৭ সালের পর আর সংস্কার হয়নি। ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে এই চত্বরের প্রতিটি মানুষ নির্মমভাবে খুন হন। তাদের লাশ খুবলে খেয়েছে শিয়াল আর শকুন। স্বাধীনতার কয়েক বছর পর আবার কিছু মানুষ আসে। কালের পরিক্রমায় একটি নতুন মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। যুগ যুগের অবহেলায় অযত্নে পুরোনো মন্দির বিলীন হবার পথে।

ছাদ ভেঙে পড়ার পর মন্দিরটিতে আর হাত দেওয়া হয়নি

কিন্তু আদি মন্দিরটিকে যদি ঠিকভাবে সংস্কার করা যেত, এ নিয়ে প্রচার করা যেত, এটি হতে পারতো দুই বাংলার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটি প্রধান সারির তীর্থস্থান। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই হোক বা ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ থেকে হোক, এটি হতে পারত একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। কিন্তু কে শোনে কার কথা?

কীভাবে যাবেন
নাটোর থেকে রাজশাহীর পথে মহাসড়কেই পড়বে পুঠিয়া বাসস্ট্যান্ড। এখান থেকে উত্তরে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে, তাহেরপুর ডিগ্রি কলেজ। বাসস্ট্যান্ড থেকেই টেম্পু বা অটোরিকশা পাওয়া যাবে। কলেজ গেটে নেমে বাউন্ডারি দেয়াল ধরে পশ্চিমে হেঁটে যেতে সময় লাগবে ৩ মিনিট। যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দেবে।

ভ্রমণ যখন বা যেখানেই করি না কেন, পরিবেশের পরিচ্ছন্নতার দিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। সবাই যে করে, তা নয়। এই স্থাপনাগুলি দেখলে তা আরও বেশি চোখে পড়ে। আপনার পরবর্তী প্রজন্মের ভ্রমণ পীপাসুদের জন্য হলেও আপনার ব্যবহৃত জিনিস নির্ধারিত জায়গায় ফেলুন বা সঙ্গে করে নিয়ে আসুন।

এসএন

Header Ad

‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’: প্রধান উপদেষ্টা

ফাইল ছবি

জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, জুলাই-আগস্ট ছাত্র জনতার বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করেছি। এ নতুন দেশে আমাদের দায়িত্ব সকল মানুষকে এক বৃহত্তর পরিবারের বন্ধনে আবদ্ধ করা। কেউ কারো উপরে না, আবার কেউ কারো নিচেও না, এই ধারণা আমরা আমাদের জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।

তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে সুযোগ ছাত্র-জনতার সাহস ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে সম্প্রতি আমরা অর্জন করেছি, সেটাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী ভবিষ্যৎ গড়তে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ, আহত এবং জীবিত ছাত্র-জনতার কাছে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে চাই। যে সুযোগ তারা আমাদের দিয়েছে, তার মাধ্যমে আমাদের দেশকে পৃথিবীর সামনে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী দেশে পরিণত করতে আমরা শপথ নিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, ছাত্র আন্দোলনে জীবন উৎসর্গ করে যারা দেশ গঠনের সুযোগ করে দিয়েছে জাতি তাদের সারা জীবন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।

বক্তব্য শেষে সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা। পরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

Header Ad

নওগাঁ শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু

ছবি: সংগৃহীত

নওগাঁ শহরে যানযট নিরসন ও শৃঙ্খলা ফেরাতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, পৌর কর্তৃপক্ষ ও রিকশা মালিক-শ্রমিকদের যৌথ উদ্যোগে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। এতে শহরে শৃঙ্খলা ফিরবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) অভিযানের উদ্বোধন করেন নওগাঁ পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকারের উপ পরিচালক টি.এম.এ মমিন। এ সময় নওগাঁ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জিয়া উদ্দিন, নওগাঁ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন, নওগাঁ জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আফজাল হোসেন ও অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

অভিযান শুরুর পর থেকেই শহরের বরুনকান্দি, মশরপুর, তাজের মোড় ও কালীতলাসহ মোট ৮ টি প্রবেশদ্বারে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। চেক পোষ্টগুলোতে ২ জন পুলিশ সদস্য, ২ জন ছাত্র সমন্বয়ক, ৪ জন রোভার স্কাউট সদস্য ও ২ জন রিকশা মালিক শ্রমিক প্রতিনিধিসহ মোট ১২ জন করে কাজ করছেন।

পৌর প্রশাসক জানান, নওগাঁ শহরে বৈধ যানবাহনের সংখ্যা ৪ হাজার। কিন্তু প্রতিদিন পার্শবতী বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ১০ হাজার রিকশা, ব্যাটারী চালিত অটো রিকশা ও ইজিবাইক শহরে প্রবেশ করে। এতে তীব্র যানযট ও জন মানুষের ভোগান্তি তৈরী হয়। এই দূর্ভোগ লাঘোবে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল ও পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিনের দিক নির্দেশনায় যানবাহন নিয়ন্ত্রনসহ বিশেষ অভিযানের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। বৈধ চালকদের চিহ্নিত করতে তাদের মাঝে পরিধেয় বিশেষ ধরনের জ্যাকেট প্রদান করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

নওগাঁর পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিন বলেন, নওগাঁ শহরের যানযট দীর্ঘদিনের সমস্যা। পরিকল্পিত ভাবে এই সমস্যা দূর করতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের উদ্যোগে পৌর কর্তৃপক্ষ ও রিকশা মালিক শ্রমিক নেতৃবৃন্দদের সমন্বয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে স্থানীয় বাসিন্দা ও বিভিন্ন ষ্টেক হোল্ডারদের পরামর্শ নিয়ে একটি কর্ম পরিকল্পনা গ্রহক করা হয়েছে।

এ বিষয়ে নওগাঁর জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, অভিযান সফল ভাবে বাস্তবায়ন হলে শহরে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। জনগন এর সুফল পাবেন। সকলকে এই কার্যক্রমে সহযোগিতা প্রদানের আহবান জানান তিনি।

Header Ad

২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে নির্বাচন হতে পারে: উপদেষ্টা সাখাওয়াত

বক্তব্য রাখছেন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে ২০২৬ সালের মাঝামাঝি নির্বাচন হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ অন্তর্বর্তী সরকারের নৌ পরিবহন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ডক্টর এম সাখাওয়াত হোসেন।

সম্প্রতি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউস অব লর্ডসে মানবাধিকার সংগঠন ‘ভয়েস ফর বাংলাদেশ’ আয়োজিত সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

‘ডিসকাশন অন ডেমোক্রেটিক কলাপ্স অ্যান্ড রিবিল্ডিং অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই সম্মেলনে হাউস অব লর্ডসের সিনিয়র সদস্য আলেক্সান্ডার চার্লস কার্লাইল কিউসি সভাপতিত্ব করেন। ভয়েস ফর বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্রডকাস্টার আতাউল্লাহ ফারুকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এম সাখাওয়াত হোসেন।

সম্মেলেনে সাবেক ব্রিটিশ মন্ত্রী পল স্কালি বলেন, বাংলাদেশে যে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে, তার সঠিক তদন্ত শেষে যথাযথ বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে করে এ ধরনের ঘটনার পুররাবৃত্তি না হয়।

লর্ড হোসাইন বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সব সংস্কার এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে সব ধরনের সহায়তা পাবে।

সম্মেলনে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান লেবার দলীয় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি রুপা হক।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’: প্রধান উপদেষ্টা
নওগাঁ শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু
২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে নির্বাচন হতে পারে: উপদেষ্টা সাখাওয়াত
সেনাকুঞ্জে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে খালেদা জিয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ৫ জনকে রোবটিক হাত উপহার
সেনাকুঞ্জের পথে খালেদা জিয়া
সুযোগ পেলে শেখ হাসিনার পক্ষে মামলায় লড়ব: জেড আই খান পান্না
নির্বাচন কমিশন গঠন, সিইসি হলেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব নাসির উদ্দীন
ডিএনএ টেস্টের ফলাফল: ভিনিসিয়ুসের পূর্বপুরুষ ছিলেন ক্যামেরুনের
জামিন পেলেন সাংবাদিক শফিক রেহমান
বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে আসা সেই শাহজাহান ওমর গ্রেপ্তার
মিরপুর ও মহাখালীতে অটোরিকশা চালকদের সেনাবাহিনীর ধাওয়া
‘শেখ হাসিনা এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী’, এমন কথা বলেননি ট্রাম্প
লেবাননে ৮ শতাধিক ইসরায়েলি সেনা নিহত
ভারতে সাজাভোগ শেষে দেশে ফিরল ২৪ বাংলাদেশি কিশোর-কিশোরী
ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে অবরোধ করে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের বিক্ষোভ
গাজায় ইসরায়েলের হামলায় আরও ৮৮ ফিলিস্তিনি নিহত
সাবেক এমপি শাহজাহান ওমরের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর
১২ বছর পর সেনাকুঞ্জে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া
ধামরাইয়ে শ্রমিকবাহী বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ৪