গেমিং স্মার্টফোন জগতের নতুন দানব আরওজি ফোন সেভেন
পূর্ব ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী নতুন সিরিজের দুই মডেলের গেমিং স্মার্টফোন লঞ্চ করলো আসুস। গেল ১৩ এপ্রিল তাইওয়ানের রাজধানী তাইপেই, জার্মানির রাজধানী বার্লিন এবং যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী নিউ ইয়র্কে 'ফর দোজ হু ডেয়ার' স্লোগান নিয়ে একযোগে উন্মোচিত হল আসুস আরওজি (ROG) ফোন সেভেন ও সেভেন আল্টিমেট। এর মাধ্যমে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগনের সর্বাধুনিক চার ন্যানোমিটার প্ল্যাটফরমের নতুন প্রসেসর এইট জেন টু চিপসেটের দ্বিতীয় দুই গেমিংফোন বাজারে আসলো। ২০১৮ সালের অক্টোবরে আত্মপ্রকাশ করার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৫ বছরে ৬ সিরিজে মোট ১৭ টি গেমিং স্মার্টফোন বাজারে ছাড়লো আসুস।
এর আগে অবশ্য গেল বছরের ৫ জুলাই একই স্লোগানে আরওজি ফোন সিক্স বাজারে ছেড়েছিল আসুস।
আসুস বরাবরই নতুন প্রসেসরের গেমিং ফোন বাজারে ছাড়ে সবার আগে তবে এবার এক্ষেত্রে একটু ব্যতিক্রম হয়েছে। আসুসের আগেই জেডটিই তাদের নুবিয়া রেড ম্যাজিক এইট সিরিজে নতুন এই প্রসেসরটি ব্যবহার করে ফেলেছে। তবে বরারবরের মতো আসুস তাদের অবস্থান ধরে রাখবে এবং আসন্ন স্ন্যাপড্রাগন এইট প্লাস জেন টু প্রসেসর ঘোষণা হবার সঙ্গে সঙ্গেই প্রথম গেমিং স্মার্টফোনটি আসসই বাজারে ছাড়বে বলে আশা ভক্তদের।
একটি গেমিং স্মার্টফোনের ব্যবহারকারীর যা যা চাহিদা থাকে তার সর্বোচ্চ পূরণ করার চেষ্টা করে আসুস। আসুসের দাবি তারা গেমিং ফোনের ক্ষেত্রে এর বাহ্যিক ডিজাইনের বদলে এর কার্যক্ষমতার উপর বেশি প্রাধান্য দেয় এবং ব্যবহারকারী যেন এর থেকে সর্বোচ্চ উপযোগিতা পান সেটা বাস্তবায়ন করতেই প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে আসুসের টেকনিক্যাল টিম।
সেভেন সিরিজের নতুন এই দুই স্মার্টফোন নিয়ে আসুস দাবি করেছে আরওজি ফোন সেভেন অন্যান্য ফোনকে লজ্জায় ফেলে দিয়েছে।
আরওজি ফোন সেভেন ও সেভেন আল্টিমেট এর মাঝে বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই। বরাবরের মতোই পার্থক্য র্যাম, স্টোরেজ আর ব্যাকশেলের ডিজাইনে। আরওজি ফোন সেভেন এর পিছনে থাকছে একটি ইল্যুমিনেটেড আরজিবি লোগো, যার পরীবর্তে আরওজি ফোন সেভেন আল্টিমেট এ থাকছে একটি প্রোগ্রামেবল মিনি ওলেড ডিসপ্লে ও একটি এয়ারভেন্ট। এর বাইরে দুটো স্মার্টফোনের ক্যামেরা মডিউল থেকে শুরু করে ব্যাটারি সব একই থাকছে।
স্মার্টফোন দুটিতে প্রসেসর হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে স্ন্যাপড্রাগনের সর্বশেষ সংস্করণ 'এইট জেন টু' চিপসেট। আট কোরের এই প্রসেসরটির কার্যক্ষমতা ৩.২ গিগাহার্জ। গ্রাফিক্স কার্ড হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে অ্যাড্রিনো ৭৪০। ফোনটি চলবে অ্যান্ড্রোয়েড থারটিন অপারেটিং সিস্টেমে।
আরওজি ফোন সেভেন ফোনটিতে র্যাম থাকছে ১২ থেকে ১৬ গিগাবাইট পর্যন্ত। আর স্টোরেজ সুবিধা থাকছে ২৫৬ থেকে ৫১২ গিগাবাইট পর্যন্ত। এই ফোনটি পাওয়া যাবে ১২/২৫৬ ও ১৬/৫১২ দুইটি ভ্যারিয়েন্টে। অপরদিকে আরওজি ফোন সেভেন আল্টিমেট ফোনটিতে র্যাম থাকছে ১৬ গিগাবাইট। আর স্টোরেজ সুবিধা থাকছে ৫১২ গিগাবাইট।
দুটো ফোনে একই ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে। ডিসপ্লে হিসাবে দেওয়া হয়েছে ১ বিলিয়ন কালার সাপোর্টেড ৬.৭৮ ইঞ্চির স্যামসাং অ্যামোলেড মনিটর যা ১৬৫ হার্জ রিফ্রেশ রেটে অপারেট করা যাবে। এছাড়াও থাকছে এইচডিআর টেন প্লাস ও ১৫০০ নিট পিক ব্রাইটনেস। ডিসপ্লের রেজুলেশন ১০৮০বাই২৪৪৮ (ফুল এইচডি)। ডিসপ্লের সুরক্ষায় স্ক্রিন হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে কর্নিং গরিলা গ্লাসের সর্বশেষ ও সর্বাধুনিক সংস্করণ গরিলা গ্লাস ভিক্টাস। এই একই মডিউলের ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছিল আরওজি ফোন সিক্স এ।
দুটো ফোনেই পিছনের ক্যামেরা প্যানেলে ৩টি ক্যামেরা দেওয়া হয়েছে। প্রাইমারি ক্যামেরা হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে ১.৯ অ্যাপারচারের ৫০ মেগাপিক্সেল ইমেজ সেন্সর যার লেন্স ২৪ মিলিমিটার ওয়াইড। প্রাইমারি ক্যামেরার সেন্সর সনির আইএমএক্স ৭৬৬ (IMX 766) ১/১.৫৬ ইঞ্চি ইমেজ সেন্সর। স্মার্টফোন, ড্রোন, অ্যাকশন ক্যামেরা প্রভৃতি ডিভাইসে ব্যবহৃত সেরা ইমেজ সেন্সরের র্যাঙ্কিং তালিকায় এই সেন্সরটির অবস্থান সপ্তম। এই ক্যামেরা এইট কে ফরম্যাটের ভিডিও ধারণে সক্ষম। সেকেন্ডারি ক্যামেরা হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে ২.২ অ্যাপারচারের ১৩ মেগাপিক্সেল ইমেজ সেন্সর যার লেন্স ১২০ ডিগ্রি আল্ট্রাওয়াইড। তৃতীয় ক্যামেরা হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে একটি ৫ মেগাপিক্সেল ইমেজ সেন্সর যার লেন্স ম্যাক্রো। এই ক্যামেরা প্যানেলটিও আরওজি সিক্স সিরিজ থেকে নেওয়া। আর সেলফি ক্যামেরা হিসাবে দেওয়া হয়েছে ২.৫ অ্যাপারচারের একটি ৩২ মেগাপিক্সেল ইমেজ সেন্সর যার লেন্স ২৯ মিলিমিটার ওয়াইড। সেলফি ক্যামেরার সেন্সরট সনির আইএমএক্স ৬৬৩ (IMX 663)।
দুটো ফোনেই সাউন্ড সিস্টেম হিসাবে থাকছে ডুয়েল স্টেরিও স্পিকার ও ৩.৫ মিলিমিটার হেডফোন জ্যাক। সাউন্ড কার্ডে ব্যবহার করা হয়েছে ডিরাক এর অডিও টেকনলজি আর ব্লুটুথ অডিও আউটপুটে থাকছে কোয়ালকমের এপিটিএক্স অ্যাডাপ্টিভ কোডেক। তবে বরাবরের মতই থাকছে না আলাদা মেমোরি কার্ড স্লট। দুটো ফোনই অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেমের এবং ওজন ২৩৯ গ্রাম এবং। পিছনের ব্যাকশেল হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে কর্নিং গরিলা গ্লাস থ্রি।
স্মার্টফোন দুটো সচল রাখতে ব্যবহার করা হয়েছে ৩০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ারের দুটো মোট ৬০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ারের লিথিয়াম পলি ব্যাটারি। যা ৬৫ ওয়াট ফাস্ট চার্জিং সাপোর্টেড। দ্রুত চার্জের জন্য থাকছে কোয়ালকমের কুইক চার্জ ফাইভ টেকনলজি। ফোনের নিরাপত্তায় থাকছে সুপার ফাস্ট আন্ডার ডিসপ্লে অপটিক্যাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার। এর পাশাপাশি গেমিং এর জন্য সুপার সেন্সিটিভ আল্ট্রাসনিক সেন্সর তো থাকছেই। আগের মতই এবারও ইউএসবি টাইপ-সি চার্জিং পোর্ট দুটোই থাকছে।
আরওজি সিক্স সিরিজে যে প্রসেসর কুলিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছিল সেভেন সিরিজেও একই কুলিং সিস্টেম দেওয়া হয়েছে। নতুন এই কুলিং সিস্টেমটির ফলে আরওজি সিক্স এ গেমিংয়ের সময় হিটিং ইস্যু প্রায় ১০ শতাংশ কমে গিয়েছিল। সেক্ষেত্রে বলা যায় আরওজি সেভেন এ গেমিংয়ের সময় হিটিং ইস্যু অনেকটাই কম হবে।
আরওজি ফোন সেভেন এর বিষয়ে ব্যবহারকারীদের বিশেষ সুখবর দিয়েছে আসুস। এর সঙ্গে যে অ্যারিও অ্যাক্টিভ কুলার দেওয়া হবে তাতে কেবল যে কুলিং ফ্যান থাকছে তা-ই নয়, বরং সেটি ছোটখাটো একটি সাব হুফারও বটে। এতে থাকছে একটি ১৩/৩৮ মিলিমিটার স্পিকার।
আরওজি ফোন সেভেন পাওয়া যাবে সাদা ও কালো দুটো রঙে এবং সেভেন আল্টিমেট পাওয়া যাবে কেবল সাদা রঙে।
আসুস জানিয়েছে আগামী মে মাস থেকে স্মার্টফোন দুটো আন্তর্জাতিক বাজারে কিনতে পাওয়া যাবে। আরওজি ফোন সেভেন এর দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০০ ইউরো যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ ১৭ হাজার টাকা। আর সেভেন আল্টিমেট এর দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪০০ ইউরো যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। ফোনগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে চলে আসলেও অফিশিয়াল ডিস্ট্রিবিউটর না থাকায় বাংলাদেশে কখনোই অফিশিয়ালি এই স্মার্টফোন আসবে না।
/এএস