ইতিহাসের প্রথম ভিডিও গেম
আধুনিক বিনোদন শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হলো ভিডিও গেম বাজার। বাড়িতে বসে কম্পিউটারের এই খেলা আগে থেকে জনপ্রিয়। এই ক্ষেত্রে ব্লকবাস্টার নাম হলো যেমন-‘ফোটনাইট’ এবং ‘কল অব ডিউটি’। তারা দর্শকদের মুগ্ধ করে চলেছে।
ভিডিও গেমে থাকে তুলনামূলকভাবে একটি নতুন আবিষ্কার, যদিও টেলিভিশন ও সিনেমার পরে এসেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর জনপ্রিয়তা এবং ব্যবহার বেড়েছে।
১৯৫৮ সালের অক্টোবরে দি আমেরিকান ফিজিক্স সোসাইটি বা মার্কিন পদার্থবিজ্ঞান সমিতি জানিয়েছে যে, পদার্থবিদ উইলিয়াম হিগেনবোথাম প্রথম ভিডিও গেম তৈরি করেছেন। তবে এই বিষয়ে বিতর্ক তৈরি করে এমন কটি প্রতিবেদন আছে।
হিগেনবোথামের গেম অনুকরণ করেছে একটি টেনিস ম্যাচের ও সেটির নাম ছিল সাধারণ-‘টেনিস ফর টু’। তিনি ছিলেন দি বুক হেভেন ন্যাশনাল লাইব্রেরির একটি অংশ, সেখানে বাদ্যযন্ত্র বিভাগেও কাজ করতেন। তিনি যন্ত্রবিদ বা প্রযুক্তিবিদ রবার্ট ডিভোজ্যাকের সঙ্গে গেমটি তৈরি করতে কাজ করেছেন। এই প্রযুক্তির পথিকৃৎ হলেও একটি গেম নকশা করার কেন্দ্রে হিগেনবোথাম ছিলেন না। তিনি কাজ করেছেন অনেক বেশি মনোযোগ দিয়ে এবং খ্যাতি লাভ করেছেন পারমানবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে কাজের সুবাদে। তাকে প্রথম ভিডিও গেম বানানোর কৃতিত্ব প্রদান করা হয়। তবে নিজের এই কাজের কোনো পেটেন্ট নেননি তিনি। ফলে প্রথম ভিডিও গেমের পেটেন্ট স্যানডারস অ্যাসোসিয়েটসের। তারা ১৯৬৪ সালে প্রথম এর মালিকানা স্বত্ব গ্রহণ করেন। তবে হেগেনবোথামের টেনিস ফর টু প্রথম প্রদর্শিত হয়েছে ১৯৫৮ সালের ১৮ অক্টোবর। তিনি বুকহেভেন ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে বার্ষিক পরিদর্শক দিবসে সবার সামনে প্রথম গেমটি প্রদর্শন করেছেন। তার এই গেমটি মোটে ২ বছর টিকে ছিল। আজকের যে ভিডিও গেম মার্কেট সেটি দর্শকদের সামনে বিপুলভাবে চলে আসে এবং জনপ্রিয় হতে থাকে ১৯৭০’র দশকে। তবে প্রথম ভিডিও গেম নিয়েও তর্ক আছে। জনপ্রিয় বক্তব্যটি হলো-পং একটি গেম, নকশা করেছে অ্যাটারি নামের একটি মার্কিন কম্পানি।
তবে দি মিউজিয়াম অব প্লে জানিয়েছে, এটিই প্রথম ভিডিও গেম, যেটি বড় আকারে সাধারণ মানুষের আগ্রহ টেনে নিয়েছে। এই গেমটি পিং-পং নামের খেলাটির অনুকরণে খেলা। পং পয়সা দিয়ে ভিডিও গেম খেলার গেমস, মদের দোকান ও রেস্তোরাগুলোতে খেলা হতো। ১৯৭৫ সালে অ্যাটারি এই গেমটির একটি বাড়িতে বসে খেলার সংস্করণ নিয়ে আসে। সেটি ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়েছে। পং নামের গেমসের প্রথম সংস্করণ প্রোটোটাইপ হিসেবে ক্যালিফোনিয়ার সান্তা ক্লারা কাউন্টির একটি মদের দোকানে। সেটিও এখন আর নেই। নাম অ্যান্ডি ক্যাপ’স টাভেন। মানে হলো অ্যান্ডি ক্যাপের সরাইখানা। প্রথম পূর্ণ সংস্করণ পং এর বাজারে আসলো ১৯৭২ সালে।
তিন বছর পর তাদের বাড়িতে খেলার সংস্করণটি নিয়ে এলো অ্যাটারি। নাম রাখলো ‘হোম পং’ বা ‘বাড়িতে পং’। এই ধারণটি বা ভাবনটি এসেছে অ্যাটারির প্রতিষ্ঠাতা নোল্যান বাশনালের। তার এই গেমসের আইডিয়াকে বাস্তবে রূপদানের দায়িত্ব পড়েছিল প্রকৌশলী অ্যালান অ্যালকলের ওপর। বলাবাহুল্য তিনি সফল হয়েছেন। প্রথম ভিডিও গেমসের মালিকানা স্যানডারস অ্যাসোসিয়েশনের হলেও তাদের প্রায় ছয় বছর পর গেম বানানো ও বিক্রির মালিকানা স্বত্ব প্রথম কিনে নিলো গেমিং কম্পানি ‘ম্যাগনাভক্স’। তারা ১৯৭০’র দশকের শুরু থেকে ভিডিও গেম ব্যবস্থাও তৈরি করতে শুরু করলেন। দি কম্পিউটার মিউজিয়াম অব আমেরিকা বলেছে, তারা উত্তর আমেরিকার বাজারে ১৯৭২ সালের সেপ্টেম্বরে নামতে শুরু করেছেন।
ছবি : নিজের বানানো প্রথম ভিডিও গেম হাতে পদার্থবিদ উইলিয়াম হিগেনবোথাম।
ওএফএস।