ফর দোজ হু ডেয়ার, আসুস রগ ফোন সিক্স
পূর্ব ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী নতুন সিরিজের দুই মডেলের গেমিং স্মার্টফোন লঞ্চ করলো আসুস। গেল ৫ জুলাই তাইওয়ানের রাজধানী তাইপেই, জার্মানির রাজধানী বার্লিন এবং যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী নিউ ইয়র্কে 'ফর দোজ হু ডেয়ার' স্লোগান নিয়ে একযোগে উন্মোচিত হল আসুস রগ ফোন সিক্স ও সিক্স প্রো। এর মাধ্যমে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগনের সর্বাধুনিক চার ন্যানোমিটার প্ল্যাটফরমের নতুন প্রসেসর এইট প্লাস জেন ওয়ান চিপসেটের প্রথম দুই গেমিংফোন বাজারে আসলো। ২০১৮ সালের অক্টোবরে আত্মপ্রকাশ করার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৫ বছরে ৬ সিরিজে মোট ১১ টি মডেল বাজারে ছাড়লো আসুস।
আসুস বরাবরই নতুন প্রসেসরের গেমিং ফোন বাজারে ছাড়ে সবার আগে এবং এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। একটি গেমিং স্মার্টফোনের ব্যবহারকারীর যা যা চাহিদা থাকে তার সর্বোচ্চ পূরণ করার চেষ্টা করে আসুস। আসুসের দাবি গেমিং ফোনের ক্ষেত্রে এর বাহ্যিক ডিজাইনের বদলে এর কার্যক্ষমতার উপর বেশি প্রাধান্য দেয় তারা এবং ব্যবহারকারী যেন এর থেকে সর্বোচ্চ উপযোগিতা পান সেটা বাস্তবায়ন করতেই প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে আসুসের টেকনিক্যাল টিম।
রগ ফোন সিক্স ও সিক্স প্রো এর মাঝে বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই। প্রথম পার্থক্য এর র্যাম ও দ্বিতীয় পার্থক্য এর ব্যাকশেলের ডিজাইনে। রগ ফোন সিক্স এর পিছনে থাকছে একটি অপটিক্যাল আরজিবি লাইট প্যানেল, যার পরীবর্তে রগ ফোন সিক্স প্রো তে থাকছে একটি প্রোগ্রামেবল মিনি অ্যামোলেড ডিসপ্লে। এর বাইরে দুটো স্মার্টফোনের ক্যামেরা মডিউল থেকে শুরু করে ব্যাটারি সব একই থাকছে।
স্মার্টফোন দুটিতে প্রসেসর হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে স্ন্যাপড্রাগনের সর্বশেষ সংস্করণ 'এইট প্লাস জেন ওয়ান' চিপসেট। আট কোরের এই প্রসেসরটির কার্যক্ষমতা ৩.১৯ গিগাহার্জ। গ্রাফিক্স কার্ড হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে অ্যাড্রিনো ৭৩০। ফোনটি চলবে অ্যান্ড্রোয়েড টুয়েলভ অপারেটিং সিস্টেমে।
রগ ফোন সিক্স ফোনটিতে র্যাম থাকছে ৮ থেকে ১৬ গিগাবাইট পর্যন্ত। আর স্টোরেজ সুবিধা থাকছে ১২৮ থেকে ৫১২ গিগাবাইট পর্যন্ত। এই ফোনটি পাওয়া যাবে ৮/১২৮; ১২/১২৮; ১২/২৫৬ ও ১৬/৫১২ চারটি ভ্যারিয়েন্টে। অপরদিকে রগ ফোন সিক্স প্রো ফোনটিতে র্যাম থাকছে ১৮ গিগাবাইট। আর স্টোরেজ সুবিধা থাকছে ৫১২ গিগাবাইট।
দুটো ফোনে একই ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে। ডিসপ্লে হিসাবে দেওয়া হয়েছে ১ বিলিয়ন কালার সাপোর্টেড ৬.৭৮ ইঞ্চির স্যামসাং অ্যামোলেড মনিটর যা ১৬৫ হার্জ রিফ্রেশ রেটে অপারেট করা যাবে। এছাড়াও থাকছে এইচডিআর টেন প্লাস ও ১২০০ নিট পিক ব্রাইটনেস। ডিসপ্লের রেজুলেশন ১০৮০বাই২৪৪৮ (ফুল এইচডি)। ডিসপ্লের সুরক্ষায় স্ক্রিন হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে কর্নিং গরিলা গ্লাসের সর্বশেষ ও সর্বাধুনিক সংস্করণ গরিলা গ্লাস ভিক্টাস।
দুটো ফোনেই পিছনের ক্যামেরা প্যানেলে ৩টি ক্যামেরা দেওয়া হয়েছে। প্রাইমারি ক্যামেরা হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে ১.৯ অ্যাপারচারের ৫০ মেগাপিক্সেল ইমেজ সেন্সর যার লেন্স ওয়াইড। প্রাইমারি ক্যামেরার সেন্সর সনির আইএমএক্স ৭৬৬ (IMX 766) ১/১.৫৬ ইঞ্চি ইমেজ সেন্সর। স্মার্টফোন, ড্রোন, অ্যাকশন ক্যামেরা প্রভৃতি ডিভাইসে ব্যবহৃত সেরা ইমেজ সেন্সরের র্যাঙ্কিং তালিকায় এই সেন্সরটির অবস্থান সপ্তম। এই ক্যামেরা এইট কে ফরম্যাটের ভিডিও ধারণে সক্ষম। সেকেন্ডারি ক্যামেরা হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে ২.২ অ্যাপারচারের ১৩ মেগাপিক্সেল ইমেজ সেন্সর যার লেন্স আল্ট্রাওয়াইড। তৃতীয় ক্যামেরা হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে একটি ৫ মেগাপিক্সেল ইমেজ সেন্সর যার লেন্স ম্যাক্রো। আর সেলফি ক্যামেরা হিসাবে একটি ১২ মেগাপিক্সেল ইমেজ সেন্সর যার লেন্স ২৮ মিলিমিটার ওয়াইড। সেলফি ক্যামেরার সেন্সরট সনির আইএমএক্স ৬৬৩ (IMX 663)।
দুটো ফোনেই সাউন্ড সিস্টেম হিসাবে থাকছে ডুয়েল স্টেরিও স্পিকার ও ৩.৫ মিলিমিটার হেডফোন জ্যাক। সাউন্ড কার্ডে ব্যবহার করা হয়েছে ডিরাক এর অডিও টেকনলজি আর ব্লুটুথ অডিও আউটপুটে থাকছে কোয়ালকমের এপিটিএক্স অ্যাডাপ্টিভ কোডেক। তবে বরাবরের মতই থাকছে না আলাদা মেমোরি কার্ড স্লট। দুটো ফোনই অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেমের এবং ওজন ২৩৯ গ্রাম এবং। পিছনের ব্যাকশেল হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে কর্নিং গরিলা গ্লাস থ্রি।
স্মার্টফোন দুটো সচল রাখতে ব্যবহার করা হয়েছে ৩০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ারের দুটো মোট ৬০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ারের লিথিয়াম পলি ব্যাটারি। যা ৬৫ ওয়াট ফাস্ট চার্জিং সাপোর্টেড। দ্রুত চার্জের জন্য থাকছে কোয়ালকমের কুইক চার্জ ফাইভ টেকনলজি। ফোনের নিরাপত্তায় থাকছে সুপার ফাস্ট আন্ডার ডিসপ্লে অপটিক্যাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার। এর পাশাপাশি গেমিং এর জন্য সুপার সেন্সিটিভ আল্ট্রাসনিক সেন্সর তো থাকছেই। রগ সিক্স সিরিজে আসুস দিয়েছে এয়ার ট্রিগার সিক্স। আগের মতই এবারও ইউএসবি টাইপ-সি চার্জিং পোর্ট দুটোই থাকছে তবে বাম পাশের টাইপ-সি পোর্টের সঙ্গে থাকা এক্সেসরিজ কানেক্টর বাদ দেওয়া হয়েছে।
রগ ফোন সিক্স এর বিষয়ে ব্যবহারকারীদের বিশেষ সুখবর দিয়েছে আসুস। তাদের দাবি আসুস রগ সিক্স সিরিজে ব্যবহৃত কুলিং সিস্টেমটি নতুন প্রসেসরের জন্য বিশেষ ভাবে ডিজাইন করা। যা আগের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ বেশি তাপ কমাতে সক্ষম। সেক্ষেত্রে বলা যায় রগ সিক্স এ গেমিংয়ের সময় হিটিং ইস্যু অনেকটাই কম হবে।
আসুস রগ ফোন সিক্স পাওয়া যাবে সাদা ও কালো দুটো রঙে এবং সিক্স প্রো পাওয়া যাবে কেবল সাদা রঙে।
আসুস জানিয়েছে আগামী ১৩ জুলাই থেকে স্মার্টফোন দুটো আন্তর্জাতিক বাজারে কিনতে পাওয়া যাবে। রগ ফোন সিক্স এর দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০০ ইউরো যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯৬ হাজার টাকা। আর সিক্স প্রো এর দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩০০ ইউরো যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। ফোনগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে চলে আসলেও অফিশিয়াল ডিস্ট্রিবিউটর না থাকায় বাংলাদেশে কখনোই অফিশিয়ালি এই স্মার্টফোন আসবে না।