নতুন জগতের খোঁজে মহাশূন্যে ‘জেমস ওয়েব’
মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন যুগের সূচনা ঘটিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী দূরবীক্ষণ যন্ত্র মহাশূন্যে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। ‘জেমস ওয়েব’ নামে এ টেলিস্কোপটি শনিবার (২৫ ডিসেম্বর) গ্রিনিচ মান সময় দুপুর ১২টা বেজে ২০ মিনিটে (বাংলাদেশ সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিট) ফ্রেঞ্চ গায়ানার কোউরু মহাকাশ কেন্দ্র থেকে যাত্রা শুরু করে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানায়।
নতুন এই টেলিস্কোপের মূল বৈশিষ্ট্য হলো–একটি প্রতিফলক আয়না, যা ৬.৫ মিটার চওড়া। বিশালাকৃতির এই আয়নার পেছনে সোনার প্রলেপ লাগানো রয়েছে। বর্তমানে ‘হাবল’ নামে যে মহাশূন্য টেলিস্কোপটি কাজ করছে, তার চেয়ে এটি প্রায় তিনগুণ বড় এবং ১০০ গুণ বেশি শক্তিশালী। এটির নামকরণ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের এ্যাপোলো চন্দ্রাভিযানের অন্যতম স্থপতির নামে।
ইউরোপিয়ান আরিয়েন রকেট দিয়ে এটিকে মাত্র আধঘন্টারও কম সময়ের মধ্যে কক্ষপথে স্থাপন করা হয়। অ্যারিয়েন রকেট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজের যাত্রা শুরু করছে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ।
মহাশূন্যে হাবল টেলিস্কোপের জায়গা নেবে জেমস ওয়েব এবং এটি দিয়ে মহাশূন্যের এমন দূরত্ব পর্যন্ত দেখতে পাওয়া যাবে, যা আগে কখনও সম্ভব হয়নি।
বিশাল আয়না এবং চারটি অতিসংবেদনশীল যন্ত্রের কারণে এই জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ দিয়ে মহাকাশবিজ্ঞানীরা মহাশূন্যের অনেক গভীর পর্যন্ত দেখতে পাবেন।
এর ফলে তাত্ত্বিকদের মতে প্রথম যে তারাগুলোর আলোয় সাড়ে ১৩শ কোটি বছর আগেকার বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণের পর নেমে আসা অন্ধকার কেটে গিয়েছিল, তার অনুসন্ধান এখন করা যাবে।
বিজ্ঞানীরা বলেন, সেই সময় ঘটা পারমাণবিক প্রতিক্রিয়ার ফলে প্রথমবারের মতো কার্বন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, ফসফরাস এবং সালফারের মতো ‘ভারী পরমাণু’ গঠিত হয়েছিল, যা প্রাণ সৃষ্টির জন্য ছিল অত্যাবশ্যক।
জেমস ওয়েবের আরেকটি লক্ষ্য হলো–বহু দূরের গ্রহগুলোর পরিবেশ কেমন তা পর্যবেক্ষণ করা, যার ফলে তারা অনুমান করতে পারবেন যে সেগুলোতে আদৌ প্রাণীর বসবসের মতো পরিবেশ আছে কি না।
টেলিস্কোপটি যে কক্ষপথে স্থাপিত হবে তা পৃথিবী থেকে ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে। সেখানে মহাশূন্যের তাপমাত্রা হচ্ছে মাইনাস ২৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস অর্থাৎ শূন্যের ২৩৩ ডিগ্রি নিচে।
ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির ঊর্ধ্বতন উপদেষ্টা মার্ক ম্যাককফরিয়ান বলেন, ‘সেই চরম শীতল তাপমাত্রায় তার ইনফ্রারেড তরঙ্গদৈর্ঘ্যগুলো আর জ্বলজ্বল করবে না এবং তার ফলেই জেমস ওয়েব সেই বহুদূরের জগতের ছবি তুলতে পারবে যেখানে প্রথম গ্যালাক্সিগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। তখন অন্যান্য তারার চারদিকে যেসব গ্রহ ঘুরছে, সেগুলোরও ছবি তোলা সম্ভব হবে।’
এসএ/