ইংল্যান্ডকে তামিমের বিদায়
ক্রিকেটের তীর্থভুমি ইংল্যান্ড। সেখানে গিয়ে খেলার বাসনা যে কোনো ক্রিকেটারেরই থাকে। বিশেষ করে লর্ডসের মতো ঐতিহ্যবাহী স্টেডিয়ামে।
এই ইংল্যান্ডের সঙ্গে মিশে আছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের অনেক সুখ গাঁথা। বাংলাদেশ প্রথম বিশ্বকাপ খেলেছিল এই ইংল্যান্ডেই ১৯৯৯ সালে। বছরই নর্দাম্পটনে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬২ রানে ম্যাচ জিতে ইতিহাস রচনা করেছিল। পাকিস্তানকে হারানোর আগে স্কটল্যান্ডকে ২২ রানে হারিয়ে পেয়েছিল প্রথম জয়।
আবার ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের অংশগ্রহণে তিন জাতির আসরে কার্ডিফেও বাংলাদেশ বিশ্ব ক্রিকেটকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে।
ইংল্যান্ডে বাংলাদেশের সাফল্য আরও আছে। ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো সেমি ফাইনাল খেলেছিল। আইসিসির আসর ও দ্বিপাক্ষিক সিরিজ মিলিয়ে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ৬ বার খেলতে গিয়েছে ইংল্যান্ডে। এর সঙ্গে যোগ হবে এবারের আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে চেমসফোর্ডে খেলা ওয়ানডে সিরিজও।
বাংলাদেশ খেলতে যাওযা মানেই ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত পরিসংখ্যানের পাল্লা ভারী হওয়া। এই ভারী হওয়ার তালিকায় অগ্রভাগে আছে ওয়ানেড অধিনায়ক তামিম ইকবালের নাম। তার ১০ টেস্ট সেঞ্চুরির ২টি আছে ইংল্যান্ডে। যার একটি আবার লর্ডসে। ২০১০ সালে ১০৩ রানের ইনিংস খেলে লর্ডসের অর্নাস বোর্ডে নাম লিখিয়েছিলেন। তার অপর সেঞ্চুরি ছিল একই সিরিজের পরের টেস্টে ম্যানচেস্টারে ১০৮ রানের। ওয়ানডেতে ১৪ সেঞ্চুরির একটি ইংল্যান্ডে। ওভারে ২০১৭ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির প্রথম ম্যাচেই তিনি স্বাগতিকদের বিপক্ষে করেছিলেন ১২৮ রান। ৬ উইকেটে ৩০৫ রান করেও বাংলাদেশ ম্যাচ জিততে পারেনি। হেরেছিল ৮ উইকেটে। পরের ম্যাচে ওভালেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলেছিলেন ৯৫ রানের ইনিংস। টি-টোয়েন্টিতে তার পরিসংখ্যান অবশ্য খুব একটা সমৃদ্ধ নয়। কারণ তিনি ম্যাচই খেলেছেন খুব কম। মাত্র ৩টি। ২০০৯ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নটিংহ্যামে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ২২ ও ভারতের বিপক্ষে ১৫ রান। এ ছাড়া, উইন্ডিজের বিপক্ষে বিশ্ব একাদশের হয়ে লর্ডসে একটি ম্যাচ খেলতে নেমে তিনি মাত্র ২ রান করে আউট হয়েছিলেন।
তামিমের এভাবে শুধুমাত্র ইংল্যান্ডে খেলার পরিসংখ্যান সামনে নিয়ে আসার কারণ তিনি ইংল্যান্ডের মাটিতে তার শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন? আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজই ছিল তার শেষ। শেষটা কিন্তু তামিম দারুণ করেছেন। ব্যাট হাতে খেলেছেন ৬৯ রানরে ইনিংস।
তামিমতো শুধুমাত্র টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন। ওয়ানডে ও টেস্ট খেলছেন। ওয়ানডে ক্রিকেটে তিনি আবার অধিনায়ক। তাহলে এভাবে ইংল্যান্ডকে বিদায় বলার কারণ কী?কারণ আর কিছুই নয়। নিকট ভবিষ্যৎয়ে ইংল্যান্ডে গিয়ে বাংলাদেশের খেলার কোনো সম্ভাবনা নেই। তা খুব সম্ভবত ২০২৭ সাল পর্যন্ত। এরপর আবার যখন বাংলাদেশ দল ইংল্যান্ডে খেলতে যাবে, তখন হয়তো তামিম ইকবাল ২২ গজের কোনো ফরম্যাটেই আর বিচরণ করবেন না। তাই তার এ রকম আগাম বাণী। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমার খারাপ লাগছে (ইংল্যান্ডে শেষ ম্যাচ খেলে ফেলাতে)। সিরিজ শুরুর হওয়ার আগেই আমি চিন্তা করেছিলাম আমাদের সূচিতে পরবর্তী তিন-চার বছরে এখানে আর কিছু নেই। তাই এখানে এবার বিশেষ কিছু করার আশা করেছিলাম। কারণ, আমি যখন এখানে প্রথম আসি তখন কাছে বিশেষ কিছু করেছিলাম। এটা আমার শেষ ছিল। তাই বিশেষ কিছু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যনজকভাবে তা আমি করতে পারিনি। তারপরও ভালো লাগছে অন্তত আজকে ( রবিবার) কিছু রান করতে পেরেছি দেখে। এটা সব সময় স্মৃতি হয়ে থাকবে।’ এদিকে রবিবারে হঠাৎ করে শুনা গেছে পাকিস্তান এশিয়া কাপ ইংল্যান্ডে আয়োজন করতে চায়। যদি শেষ পর্যন্ত হয়, তাহলে তামিম ইকবালকে আবার দেখা যাবে ইংল্যান্ডে?
শেষ ম্যাচে ৬৯ রানের ইনিংস তামিম ইকবালের কাছে ইংল্যান্ডের সুখ স্মৃতি হয়ে থাকলেও এই ইনিংস নিয়ে তার আবার আক্ষেপও আছে। কারণ তিনি ইনিংসটিকে লম্বা করতে পারেননি। তামিম তার ৫৬তম ওয়ানডে হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন ৯ ম্যাচ পর। সিরিজের প্রথম ২ ম্যাচে তার রান ছিল ১৪ ও ৭। ৬৯ রানের ইনিংস নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার ইনিংসটি আরও বড় করা উচিত। কারণ ম্যাচে আমাদের যে অবস্থা ছিল তাতে করে আার আরওি কিছু সময় টিকে থাকার দরকার ছিল। তা করতে না পেরে আমি হতাশ।’
তিনি বলেন, ‘লম্বা ক্যারিয়ারে উত্তান-পতন থাকবে। অবশ্য আমার সব সময় বিশ্বাস ছিল রানে ফেরার জন্য স্রেফ একটা ম্যাচের দূরত্ব। তাই আজ (রবিবার) বড় ইনিংস খেলতে পারলে খুবই খুশি হতাম।’
এমপি/এমএমএ/