বাংলাদেশকে ২৭৪ রানে থামিয়ে দিল আয়ারল্যান্ড
মেঘে-বৃষ্টির খেলা নেই। চেমসফোর্ডে দৃষ্টিনন্দন চমৎকার আবহাওয়া। মনোরম পরিবেশ পেয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিপুল উৎসাহ নিয়ে মাঠে উপস্থিত হন। যদিও তারা সিরিরে শুরু থেকেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে মাঠে হাজির হয়েছেন। কিন্তু আজকের আবহাওয়া তাদের জন্য নির্বিঘ্নে ম্যাচ উপভোগ করার বাড়তি রসদ ছিল।
তাদের সেই রসদে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা কিন্তু খুব বেশি যোগান দিতে পারেননি। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৭ বল বাকি থাকতে ২৭৪ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপের যাচাই-বাছই করা হবে না বলে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে জানালেও শেষ ম্যাচে একাদশে তিন পরিবর্তন ছিল তাই আভাস। বিপিএলে দারুণ খেলা রনি তালুকদার ঘরের মাঠে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানেড সিরিজে দলের সঙ্গে থেকে কোনও ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। সেই অপেক্ষার প্রহর কেটেছিল চেমসফোর্ডে শেষ ম্যাচে।
উদ্বোধনী জুটিতে পরিবর্তন এনে তামিমে ইকবালের সঙ্গি করে পাঠানো হয় রনিকে। কিন্তু শুরুটা তার বিবর্ন হয়ে উঠে। এভাবে হয়ে উঠার কারণ রনি নিজেই। কারণ শুরু থেকেই রানের জন্য ছটফট করছিলেন। ১২ বলে কোন রান নিতে পারেননি। অবশেষে মার্ক অ্যাডায়ারের বলে কাভার দিয়ে চার মেরে খাতা খুলার পর পরের বলেই উইকেট দিয়ে আসেন। অফ স্ট্যাম্পের অনেক বাইরে বল ব্যাট চালাতে গিয়ে উইকেটের পেছনে লরকান টাকারের হাতে সহজে ধরা পড়ে বিদায় নেন।
শুরুকে রনির বিদায়ের ধাক্কা গলার কাঁটা হয়ে উঠতে দেননি আগের ম্যাচেই ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করা নাজমুল হোসেন শান্ত। ক্রিজে এসেই হাত খুলে খেলতে থাকেন। রান সংগ্রহ পেছনে ফেলে দেন অধিনায়ক তামিম ইকবালকে। শান্তর ব্যাটিংয়ে ছিল অশান্ত হয়ে উঠার ইংগিত। কিন্তু খুব বেশি দূর যেতে পারেননি।
তারপরও যতক্ষণ ক্রিজে ছিলেন বেধড়ক পিটিয়েছেন আইরিশ বোলারদের। জুটিতে যে ৪৯ রান আসে তার ৩৫ রানই ছিল তার। ৭ চারে বল খেলেন ৩২টি। তার কারণেই প্রথম পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের রান আসে ১ উইকেটে ৬২। পাওয়ার প্লের পর প্রথম ওভারেই শান্তর অশান্ত হয়ে উঠা থামিয়ে দেন দলে ফেরা ক্রেইগ ইয়াং। দ্বিতীয় স্লিপে তার ক্যাচ ধরেন বালিবার্নি
লিটন দাসএই ম্যাচে চারে নামেন। এটি ছিল তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়া চারে নামা। এর আগে ২০১৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চারে নেমে করেছিলেন ২২ বলে ১৭ রান। বাংলাদেশের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান চারে নেমেও নিজেকে প্রমাণ করেন।
সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে রান না পাওয়া লিটন দাস চারে নেমেও ছিলেন আক্রমণাত্বক। তামিমের সঙ্গে তার সেতু বন্ধনে রান আসে ১৩.৪ ওভার ৭০। এবারও জুটি ভাঙে লিটন আউট হলে। ৩৯ বলে ৩ চার ও ইনিংসের প্রথম ছক্কা মেরে ৩৫ রান করে ম্যাকব্রাইনের বলে মিড অফে তার ক্যাচ ধরেন মাক অ্যাডায়ার।
দ্বিতীয় ম্যাচে ৬৮ রানের ইনিংস খেলা ব্যাটিং লাইনের নতুন স্তম্ভ তাওহিদ হৃদয় এই ম্যাচে বেশি দূর যেতে পারেননি। ১৩ রান করে ডকরেলের বলে বোল্ড হয়ে যান।
এতক্ষণ পর্যন্ত সঙ্গীদের আসা-যাওয়া দেখছিলেন দলনায়ক তামিম ইকাবল। এবার বাজে তার নিজেরই বিদায় ঘণ্টা। তবে এবারের বিদায় ঘণ্টা হতাশার ছিল না। এই হতাশা না হওয়ার কারণ ভাগ্য তাকে বিশেষভাবে সহয়তা করেছে। নতুবা ৯ ম্যাচ পর হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়ে ৬৯ রানে যে আউট হয়েছেন, সেটি থেমে যেত পারত ১ রানেই।
এ সময় লিটলের বল তামিমের ব্যাটের কানায় লেগে দ্বিতীয় স্লিপে সহজ ক্যাচ চলে যায় বালবার্নির হাতে। কিন্তু তিনি সে বল হাতে জমিয়ে রাখতে পারেননি। জীবন পেয়ে তামিম ইকবাল ৬১ বলে ৫ চারে ক্যারিয়ারের ৫৬তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন তামিম।
জীবনাবসান ঘটে উচ্চবিলাষী শট খেলেতে গিয়ে। ডকরেলকে ক্রিজ ছেড়ে বের হয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে শর্ট থার্ডম্যানে ক্যাচ দেন ক্রেইহ ইয়াংয়ের হাতে।
তামিম আউট হওয়ার সময় দলের রান ছিল ৫ উইকেটে ৩৩.৩ ওভারে ১৮৬। বাংলাদেশ দল লম্বা ব্যাটিং লাইনের সুফ ভোগ করে ষষ্ট উইকেট জুটিতে মুশফিক ও মিরাজের মাধ্যমে। ইনিংসের সেরা জুটি গড়ে উঠে তাদের মাঝে। ১২ ওভারে ৭৫ রান যোগ হওয়ার পর দুই জনেই আউট হয়ে যান ৪ রানের ব্যবধানে প্রথমে মুশফিক, পরে মিরাজ।
মুশফিক হাফ সেঞ্চুরির কাছাকাছি গিয়ে ৪৫ রানে এলবিডব্লিউর শিকার হন ম্যাকব্রাইনের বলে। তার ৫৪ বলের ইনিংসে ছিল ১টি ছক্কা ও ৩ টি চার। মিরাজ ৩৯ বলে ৩ চারে ৩৭ রান করে অ্যাডালের বলে ক্রেইগ ইয়াংয়ের হাতে । এ সময় দলের রান ছিল ৭ উইকেটে ২৬৫।
এরপর ব্যাটিং করার বাকি থাকেন ৪ পেসার মৃত্যুঞ্জয়, হাসান ও মোস্তাফিজ। কিন্তু তাদের কারও হাতই ব্যাটিংয়ের জনৗ পাকা নয়। ওভার বাকি ছিল ৪.৩টি। কিন্তু এই ওভারই তারা খেলতে পারেননি। ২.২ ওভার খেলে ৯ রান যোগ করে তারা আউট হয়ে যান। ফলে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ৪৮.৫ ওভারে ২৭৪ রানে। মার্ক অ্যাডায়ার ৪০ রানে নেন ৪ উইকেট। ডকরেল ৩১ ও বালবার্নি ৩৯ রানে নেন ২টি করে উইকেট।
এমপি/এমএমএ/