ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেছেন, ডাকসু (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে প্রশাসনের কোনো দ্বিধা নেই। তিনি বলেন, "আমরা নির্বাচন করতে চাই, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ, এটি 'জুলাই স্পিরিট'-এর প্রতি আমাদের কমিটমেন্ট।"
২৬ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাবি ভিসি জানান, ডাকসু নির্বাচনের জন্য তিনটি স্বাধীন কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং প্রশাসন তাদের কাজে কোনো হস্তক্ষেপ করছে না। তিনি বলেন, "নির্বাচন কবে হবে, তা নির্ধারণ করবে এসব কমিটি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এতে কোনোভাবে নাক গলাচ্ছে না। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।"
তিনি আরও বলেন, "আমাদের ছাত্রদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সচল রাখতে ডাকসু নির্বাচন প্রয়োজন।"
উপাচার্য জোর দিয়ে বলেন, "আমরা ডাকসু নির্বাচন করব কারণ এটি আমাদের গণঅভ্যুত্থানের মূল স্পিরিটকে সম্মান জানানো। তবে কোনো রাজনৈতিক দলের চাপের কারণে নয়।"
তিনি আরও বলেন, "আমাকে ভয় দেখিয়ে কাজ করানো যাবে না। তবে আমি ভয় পাই।"
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যা দীর্ঘ ২৮ বছর পর আয়োজিত হয়েছিল। এরপর থেকে পুনরায় নির্বাচন আয়োজন নিয়ে আলোচনা চলছে।
নতুন ছাত্রসংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘিরে পদবঞ্চিতদের বিক্ষোভ। ছবি: সংগৃহীত
আত্মপ্রকাশ হতে যাওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন ছাত্রসংগঠনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করার অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগ তুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিনের সামনে বিক্ষোভ করছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টার দিকে এ ঘটনা দেখা যায়।
শিক্ষার্থীদের দাবি সাবেক সমন্বয়ক রিফাত রশিদকে কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ না দেওয়ায় তারা বিক্ষোভ করছেন। এ ছাড়া তাদের দাবি উত্তরা পূর্ব ও পশ্চিমে কমিটি না দেওয়ায় তারা বিদ্রোহ করেছেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই, দিয়েছি তো রক্ত, আরও দিবো রক্ত, জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস, রিফাত রশিদের ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই, ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
মঞ্জুরুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের এখনও উত্তরার পূর্ব ও পশ্চিমে কমিটি দেয়া হয়নি। তারা এখন নতুন দল ঘোষণা করতে চাচ্ছেন। এটা অবশ্যই বৈষম্য।
বিক্ষোভকারী আরেক শিক্ষার্থী বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রিফাত রশিদের ভূমিকা আপনারা সবাই জানেন। তাকে বাদ দিয়ে যদি কোন কমিটি হয় তা কখনো আমাদের ম্যান্ডেট নিয়ে হতে পারে না।
পুতুল নাচ গ্রাম-বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য নাচ। গানের তালে তালে ও বাদ্যযন্ত্রে সুরের মূর্ছনায় পুতুলের নৃত্য হয়। এটি গ্রামীণ জনপদে শিশু-কিশোর ও সর্বস্তরের মানুষের বিনোদনের মাধ্যম এবং পুতুল নাচ শিশুদের কাছে এক অন্যরকম উৎসবের মতো। এই পুতুল নাচ কালের আবর্তে আর আধুনিক সাংস্কৃতির আগ্রাসনে এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। মাঝে মধ্যে পহেলা বৈশাখ আর হাতেগোনা দু-একটি উৎসব ছাড়া পুতুল নাচ প্রদর্শিত হয় না।
সম্প্রতি গত ২৪ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের গোপালপুর সূতি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জাতীয় শিক্ষা পদক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে ক্ষুদে শিশুরা পুতুলের আদলে অসাধারণ নৃত্য প্রদর্শন করে। এতে পৌর শহরের সূতি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী অংশ নেন। শিশুরা পায়ের আঙুলের সঙ্গে হাতে সুতো বেঁধে, মাথায় ঘুমটা দিয়ে ও গায়ে বাঙালিয়ানা পোশাক পরিধান করে গানের তালে তালে নাচ প্রদর্শন করে।
ছবি : ঢাকাপ্রকাশ
এই মনোমুগ্ধকর পুতুলের আদলে নাচ উপস্থিত অতিথি ও অভিভাবকদের মুগ্ধ করে এবং তাদের মন জয় করে এই মানব পুতুল নাচ। সেই নাচের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা দেখে সুধীজনরা প্রশংসা করছেন। অনেকেই বলছেন পুতুলের আদলে শিশুদের এই নাচ নতুন প্রজন্মের সঙ্গে পুতুল নাচের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। নাচের ভিডিওটি বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সাবিনা তার ফেসবুকে শেয়ার করেন।
নৃত্য অংশ নেয়া তোহা, সূচী, হাবিবা, মীম, আরাধ্যা ও জীম বলেন- এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার জন্য অনেক আগে থেকে প্র্যাক্টিস শুরু করি। আমাদের স্কুলের সাবিনা ম্যাডামের সহযোগিতায় এই পুতুল নাচটি আমরা সুন্দরভাবে পুতুলের আদলে নাচতে পেরেছি। এ সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তুহিন হোসেন, সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শফিকুল ইসলাম, রোকনুজ্জামান, সহকারী ইন্সট্রাক্টর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সূতি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সাবিনা আক্তার কলি বলেন- পুতুল নাচটা আমাদের গ্রাম-বাংলার এক প্রাচীন ঐতিহ্য। আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন এই পুতুল নাচ আমাদের বিনোদনের প্রধান মাধ্যম ছিল। আমরা যখন মেলায় যেতাম তখন এই পুতুল নাচ না দেখলে আমাদের মেলা দেখা সার্থক হতো না। এই ঐতিহ্যগুলো এখন আর গ্রাম-বাংলায় নেই। তাই নতুন প্রজন্মের কাছে এই পুতুল নাচ উপস্থাপন করি।
তিনি আরও বলেন- পুতুল নাচটি বাংলার বুকে আবার ফিরিয়ে দিতে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মফিজুর রহমান জিন্নাহ স্যারের নির্দেশে আমাদের বিদ্যালয়ের ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের পুতুল নাচের উদ্যোগ নেই। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা সহযোগিতা করে। এতে আমরা ফিরে পাই আমাদের হারিয়ে যাওয়া সাংস্কৃতি সম্পদকে। আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো যে পিছিয়ে নেই তা এই শিশু শিক্ষার্থীরা প্রমাণ করে দিল।