শেষ ম্যাচে চেনা রূপে বাংলাদেশ
গত দুই ম্যাচে ৩০৩ ও ২৯০ রান করে যেখানে ম্যাচ জিততে পারেনি বাংলাদেশ। হার মেনেছিল সহজেই। সেখানে ২৫৬ রান করে ম্যাচ জেতার কথা চিন্তাও করা যায় না। আগেই সিরিজ হারানো বাংলাদেশের সামনে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার শঙ্কা।
কিন্তু এ যাত্রায় রক্ষা পেয়েছে বাংলাদেশ। এবার ২৫৬ রানেই নির্ভরতা খুঁজে পেয়েছে। দাপুটে জয়ে উড়তে থাকা জিম্বাবুয়েকে নামিয়ে এনেছে মাটিতে। সিরিজ হারিয়ে বিলম্বে হলেও বাংলাদেশ ফিরেছে চেনারূপে। যে চেনা রূপের সামনে পড়ে ছারখার হয়ে গেছে জিম্বাবুয়ে। দাঁড়াতেই পারেনি বাংলাদেশের সামনে।
হার মেনেছে ১০৫ রানের বিশাল ব্যবধানে। টস হেরে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের ৯ উইকেটে ২৫৬ রানের জবাব দিতে নেমে জিম্বাবুয়ে অলআউট হয়ের্ছে ৩২.২ ওভারে ১৫১ রানে।
তাদের হারের ব্যবধান আরও বড় হতে পারত। কিন্তু শেষ উইকেট জুটিতে এনগারাভা ও নিউয়াচি জিম্বাবুয়ের হয়ে যে কোনো দেশের বিপক্ষে রেকর্ড ৬৮ রান করলে দলীয় শতরান অতিক্র করার পাশাপাশি হারের ব্যবধানও কমিয়ে আনে। এই জয়ে আগেই সিরিজ হারানো বাংলাদেশ ব্যবধান কমিয়ে আনল ২-১ এ। একই সঙ্গে ৪০০তম ম্যাচে জয়ও পেল বাংলদেশ।
মাইলফলকের একশ ও দুইশতম ম্যাচে জিতেছিল বাংলাদেশ। হেরেছিল তিনশতম ম্যাচে। কিন্তু চারশতম ম্যাচে কী হবে? জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচেই দাঁড়াতেই না পারা বাংলাদেশ যখন আগে ব্যাট করে আফিফের অপরাজিত ৮৫, এনামুল হক বিজয়ের ৭৬ ও মাহমুদউল্লাহর ৩৯ রানে ভর করে ভাণ্ডারে মাত্র ২৫৬ রানের পূঁজি সংগ্রহ করেছিল, তখন ৪০০তম ম্যাচের ললাটে হারই লেখা হয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু যে বাংলাদেশ ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজেদের অন্য রকম চুড়ায় নিয়ে গেছে, সেই বাংলাদেশের বাজে সময় যেতেই পারে। তাই বলে সব সময়? এটা কী হতে পারে। এটা হওয়া মানে অবস্থানের পতন। কিন্তু বাংলাদেশ তা হতে দেয়নি। নিজেদের জাত চিনিয়েছে। প্রথম দুই ম্যাচে ব্যাটিং স্বর্গ উইকেটে ব্যাটসম্যানদের সংগ্রহ ভালোই ছিল।
কিন্তু বোলাররা নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি। তাই হারতে হয়েছিল অনায়েতে পাঁচ উইকেটে দুই ম্যাচেই। মান রক্ষার ম্যাচে ব্যাটসম্যানরা আবার খুব একটা ভালো করতে পারেননি। কিন্তু বোলাররা নিজেদের ফিরে পেলে ২৫৬ রানই নির্ভরতা এনে দেয়।
প্রথম দুই ম্যাচকে কার্বন কপি বানিয়ে জিম্বাবুয়ে ম্যাচ নিজেদের করে নিয়েছিল। তৃতীয় ম্যাচও ছিল অনেকটা সে পথেই। টস জয় থেকে শুরু করে জিম্বাবুয়ে বোলিং বেছে নেওয়া। বাংলাদেশকে আরও কম ৯ উইকেটে ২৫৬ রানে আটকে রাখা। তারপর সেই রান তাড়া করতে নেমে যথারীতি জিম্বাবুয়ে শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়। সাত রানে নেই দুই উইকেট। পরে ১৮ রানে নেই চার উইকেট।
যেখানে ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে আগের দুই ম্যাচে ‘রাজা’ হয়ে উঠা সিকান্দার রাজার উইকেটও। তিন ম্যাচে জিম্বাবুয়ের এটি ছিল সবচেয়ে নাজুক অবস্থা। দ্বিতীয় ম্যাচে তারা ৪৯ রানে হারিয়েছিল চার উইকেট। সেখান থেকে দলকে উতরে নিয়ে গিয়েছিলেন সিকান্দার রাজা অপরাজিত ১১৭ রানের ইনিংস খেলে। সঙ্গে পেয়েছিলেন অধিনায়ক রেজিস চাকাভাকে (১০২)। এই ম্যাচে চাকাভা নেই। রাজাও আউট। কিন্তু থেকে গিয়েছিলেন প্রথম ম্যাচে সিকান্দার রাজার সঙ্গে হাল ধরে জোড়[ সেঞ্চুরির এক মালিক ইনোসেন্ট কাইয়া (১১০)। তার ছিল আজ আবার ত্রিশতম জন্মদিন।
আজ জিম্বাবুয়ের পরিস্থিতি একটু বেশি নাজুক হলেও টার্গেট ছিল কমই। তাই আরেকটি কার্বন কপির ম্যাচ হওয়া অস্বাভাবিক ছিল না? কিন্তু তা আর আজ হয়নি। জয় পেতে মরিয়া বাংলাদেশ দলের সামনে জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরনা একে একে কাবু হতে থাকেন। ৮৩ রানে ৯ উইকেট হারানোর পর জিম্বাবুয়ের শতরান করাও কঠিন হয়ে পড়ে।
কিন্তু সেখান থেকে তারা শেষ পর্যন্ত ১৫১ রান পর্যন্ত যেতে পেরেছে এনগারাভা ও নিয়াউচির দশম উইকেট জুটিতে যে কোনো দেশের বিপক্ষে রেকর্ড ৬৮ রান যোগ করলে। ৯.২ ওভার খেলে তারা এই রান যোগ করেন। এ সময় দুই জনে মিলে ৯টি চার ও দুইটি ছক্কা মারেন। নিয়াউচিকে (২৬) মোস্তাফিজ বোল্ড করে চতুর্থ শিকার করলে শেষ হয় তাদের প্রতিরোধ। এনগারাভা ৩৪ রান করে অপরাজিত থাকেন। এ ছাড়া ২৪ রান করেন অভিষিক্ত ক্লাইভ মাদেন্দে।
জিম্বাবুয়েকে কব্জা করতে এদিন তামিম ইকবাল তার বোলিং আক্রমণে বেশ পরিবর্তন এনেছিলেন। হাসান মাহমুদের সঙ্গে মিরাজকে দিয়ে আক্রমণ শুরু করেন। দুই জনেই নিজ নিজ প্রথম ওভারে দুই ওপেনারকেই ফিরিয়ে দেন। ইনিংসের চতুর্থ ওভারেই তামিম আক্রমণে নিয়ে আসেন অভিষিক্ত এবাদতকে। তিনি দ্বিতীয় ওভারেই আনেন জোড়া আঘাত। ফিরিয়ে দেন ওয়েসলি মাধেভেরে ও এই ম্যাচর অধিনায়ক সিকান্দার রাজাকে। মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই রাজার দুইটি স্ট্যাম্পই ছত্রখান করে দেন এবাদত। যা ছিল দেখার মতোই। ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতেই তামিম আক্রমণে নিয়ে আসেন তাইজুলকে। তিনিও প্রথম ওভারেই সাফল্যের মুখ দেখেন।তার শিকারটিও ছিল বেশ বড় ইনোসেন্ট কাইয়া। এরপর তিনি ফিরিয়ে দেন দ্বিতীয় ম্যাচে অভিষেকেই মারমুখি ব্যাটিং করা তানাকা মুনয়োঙ্গাকে।
এই ম্যাচে তামিম ইকবাল মোস্তাফিজকে আক্রমণে আনেন ১৩তম ওভারে। এখানেও তামিম পরিকল্পনা শতভাগ সফল হয়। মোস্তাফিজকে দিয়ে এক ওভার বোলিং করানোর পর বিশ্রাম দেন। আবার যখন একুশতম ওভারে আক্রমণে নিয়ে আসেন, তখন মোস্তাফিজ নিজেকে ফিরে পান পুরানো রূপে। শেষ চার উইকেটই তুলে নেন তিনি। এর মাঝে ছিল আবার জোড়া আঘাতও। এভাবেই রচিত হয় বাংলাদেশের মান বাঁচানো ও চারশতম মাইলফলকের ম্যাচে জয়। মোস্তাফিজ ১৭ রানে নেন চার উইকেট। দুইটি করে উইকেট নেন তাইজুল ৩৪ ও এবাদত ৩৮ রানে। মিরাজ ১৬ ও হাসান মাহমুদ ৩৮ রানে নেন একটি করে উইকেট। ৮১ বলে ৮৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা হয়েছেন আফিফ হোসেন। সিরিজ সেরা হয়েছেন টি-টোয়েন্টি সিরিজের মতোই সিকান্দার রাজা।
এমপি/এমএমএ/