‘সাকিব-তামিম-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহরা বাংলাদেশে ক্রিকেটের মা-বাবা’
সাধারণত কোনো দেশের বিপক্ষে খেলতে যাওয়ার আগে ভালো-মন্দ ফলাফল কী হবে এ বিষয়টির দিকেই নজর থাকে সবার। কিন্তু এবার জিম্বাবুয়ে সফরে এই বিষয়টি গণ্য হয়ে গেছে। পড়ে গেছে আড়ালে।
পরিস্থিতি এমন যে জিম্বাবুয়ে সফরে বাংলাদেশের জয় প্রকার নিশ্চিত। মাঠে নামলেই দৌড়ে চলে আসবে বাংলাদেশের ঘরে! তাই এখন সেখানে সামনে চলে এসেছে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দল।
একদিকে নিয়মিত অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ বাদ। নেতৃত্বও নেই, দলেও নেই। নেই পঞ্চ পান্ডবের কেউ। মাশরাফি-তামিম অবসরে। সাকিব ছুটিতে। মাহমুদউল্লাহ-মুশফিককে পাঠানো হয়েছে বিশ্রামের আড়ালে বাদ দিয়ে? এদের ছাড়া বাংলাদেশ একটি তারুণ্য নির্ভর দল। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নতুন দিনের গান শুনতে চাইছে বিসিবি। তাই এই পথে হাঁটা। এই দল ভালো করবে এমন আশা অন্তরে। তাই প্রশ্ন আসছে পঞ্চপাণ্ডবহীন বাংলাদেশ কেমন করবে। অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান পঞ্চপাণ্ডবকে বলেছেন দলের ‘মা-বাবা হিসেবে।
মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টা ৪০ মিনিট জিম্বাবুয়ের পথে রওয়ানার আগে মিরপুরে সাংবাদিকদের মেহেদি হাসান বলেন, ‘আপনি পরিবারে যখন ছোট থাকেন, তখন আপনাকে বড় করতে বাবা মা সব দায়িত্ব নেন। যখন প্রতিষ্ঠিত হয়ে যান, তখন নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেন। সেক্ষেত্রে এ সিরিজ থেকে বলতে পারব, আমাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেদের নিতে হবে। যেহেতু সাকিব ভাই, রিয়াদ ভাই, তামিম ভাই, মুশফিক ভাই নেই। তারা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেটের মা-বাবাই ছিলেন।’
এটিকে তাদের গড়ে উঠার একটা সুযোগ বলেও মনে করেন তিনি। বাংলাদেশের এই দলটিকে তারুণ্য নির্ভার বলা হলেও দলে নতুন কেউ নেই বলে জানান মেহেদি হাসান।
তিনি বলেন, ‘এই দলে একদমই তরুণ কেউ না। সবাই ৩, ৪, ৫ বছর খেলে ফেলেছে। ১০ বছর ক্রিকেট খেলা কোনো খেলোয়াড় নেই। ৬, ৭, ৮ বছর খেলা খেলোয়াড় আছে। তাই বেশিরভাগই তরুণ না। তরুণ বলতে মুনিম শাহরিয়ার আর পারভেজ ইমন যারা একদমই নতুন। সবাই পরিপক্ব, মোটামুটি অভিজ্ঞ। সবার বোঝার সামর্থ্য আছে, সবাই সামর্থ্যবান। যে কারণে সিনিয়র না থাকলেও নিজেদের প্রমাণ করার কিছু দেখছেন বলেও জানান তিনি।
মেহেদি হাসান বলেন, ‘প্রমাণ করার আসলে কিছুই নেই। একটা সময় তো সিনিয়র ক্রিকেটাররা থাকবেন না। আমাদের ব্যাচ থেকে অনেকেই সিনিয়র হয়ে যাবে। সাকিব ভাই, রিয়াদ ভাইরাও জুনিয়র হয়ে জাতীয় দলে এসেছিলেন। ২০১১ বিশ্বকাপে সাকিব ভাই নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তখন ওনার বয়স ছিল ২২। খেলতে খেলতে ওনারা এ পর্যায়ে এসেছেন। এখন যে তরুণ দলটা আছে, সময় লাগবে। নেতৃত্ব ধীরে ধীরে গুছিয়ে নিতে পারবে।’
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে রানের খেলা। চার-ছক্কার ফুলঝরি থাকতে হবে। থাকতে হবে কব্জিতে জোর। কিন্তু বাংলাদেশ দলে এর ঘাটতি আছে পাওয়ার হিটার নেই বলেলই চলে। কিন্তু তাই বলে চাইলেই আন্দ্রে রাসেল বা পোর্লাডের মতো পাওয়ার হিটার হওয়া সম্ভব নয় বলেও জানান মেহেদি হাসান।
তিনি বলেন, ‘দেখুন, আমরা বাংলাদেশি, আমরা কেউই পাওয়ার হিটার না। আমরা চাইলে আন্দ্রে রাসেল বা পোলার্ড হতে পারব না। আমাদের সামর্থ্যের মধ্যে যেটুকু আছে তা দিয়ে যতটা উন্নতি করা যায়। পাওয়ার হিটারের জন্য বিশেষজ্ঞ কোচের প্রয়োজনের কথা বললেও খুব বেশি যে উন্নতি করা সম্ভব তাও মনে করেন না মেহেদি হাসান।
তিনি বলেন,`পাওয়ার হিটিং কোচের দরকার। তবে আপনার যে স্কিল আছে, একে কোচ হয়তো ১০ শতাংশ এগিয়ে দেবে। কিন্তু ৩০ শতাংশকে ১০০ শতাংশে পৌঁছে দিতে পারবে না। আমরা জন্মগতভাবেই এরকম। রাতারাতি পরিবর্তন করা মনে হয় না সম্ভব।’
চাইলেই বাংলাদেশে পাওয়ার হিটার তৈরি করা সম্ভব নয় বলেও মনে করেন এই তরুন। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রায় ১৫ বছরের মতো আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলে ফেলেছি। হলে আরও আগেই হয়ে যেত। যেহেতু হচ্ছে না, আমাদের এটা নিয়ে আরও কাজ করতে হবে। পাওয়ার হিটিংয়ের কথা সবসময়ই আসে। কিন্তু এটা ঠিক না। আমাদের সামর্থ্যের বাইরে চাইলেও করতে পারব না। এটা আপনাদের সবাইকে বিশ্বাস করতে হবে।’
এমপি/এমএমএ/