নেতৃত্ব ফিরে পেলেন সাকিব, ডেপুটি লিটন
ক্রীড়াঙ্গণে বিশেষ করে ক্রিকেটের জন্য সপ্তাহের শেষ দিনটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ দিন বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের সভা। যে সভা থেকে আসবে বাংলাদেশের পরবর্তি টেস্ট অধিনায়কের নাম। যদিও সাকিবের নাম এক প্রকার চুড়ান্ত হয়েই আছে। শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বাকি। কিন্তু সাকিব এক রহস্যময় চরিত্র হওয়াতে কিছুটা অনিশ্চয়তা থেকেই গিয়েছিল। তাই বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে সাংবাদিকদের উপচে পড়া ভীড়। সভা শুরু হতে না হতেই যে যার মতো করে বোর্ড সভার সিন্ধান্ত জানার চেষ্টা করতে থাকেন। এরই মাঝে জানা যায় সভার আলোচ্যসূচিতে নেই অধিনায়কের বিষয়টি। তখনই বুঝা যায় যতোই অধিানয়কের বিষয়টির গুরুত্ব থাকুক না কেন, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসব সভার শেষের দিকে বিবিধ আলোচানতে। শেষ পর্যন্ত হয়েছে তাই। এদিকে সভা শুরু হওয়ার পর বাতাসে ভাসতে থাকে সাকিবের পাশাপাশি নিভু নিভু করে কিছু নাম। সভার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই নজরদারি আরো বাড়তে থাকে। এরই মাঝে বোর্ড সভার খবর বাইরে চলে আসে সাকিব অধিনায়ক, তার ডেপুটি লিটন দাস। অনেকেই এর সততা যাচাই করার চেষ্টা করতে থাকেন। নিশ্চিত হওয়ার পর তা ব্রেকিং নিউজ হিসেবে সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হতে থাকে।
এর ঘন্টাখানিক পর বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন কয়েকজন পরিচালককে সঙ্গে নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন। কিন্তু তিনিও শুরুতেই অধিনায়কের বিষয়টি বলেননি। দেখে দেখে সভার আলোচ্যসূচি অনুযায়ী একটি একটি করে বলার পর দ্বিতীয় সর্ব শেষ বিষয় হিসেবে অধিনায়কের নাম ঘোষণা করেন সাকিবের। সঙ্গে ডেপুটি হিসেবে লিটন দাসের নাম। এই দুই জনের নাম চুড়ান্ত করা হলেও তিনজনের নাম নিয়ে আলোচনা হয়ে। অধিনায়ক ও ডেুপটি অধিনায়কের নাম ঘোষণা করতে গিয়ে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘আমার কাছে তিনটা নাম ছিল। যারা এটার দায়িত্বে ওরা চিন্তা-ভাবনা করে তিনটি নাম দিয়েছিল। এদের একজন অধিনায়ক হবে, আরেকজন হবে সহ অধিনায়ক। তো সাকিব যদি অধিনায়ক না হতে চাইত, তাহলে আমরা বাকি দুজনকে দায়িত্ব দিতাম।’ তৃতীয় জনে নাম বিসিবি সভাপতি না বললেও সে নামটি ছিল মেহেদি হাসান মিরাজের।
সাকিবের তৃতীয় দফা নেতৃত্ব শুরু হবে উইন্ডিজ সফর দিয়ে। আগের দুইবারও তিনি শুরু করেছিলেন উইন্ডিজ সফর দিয়ে। কিন্তু সাকিবকে নেতৃত্বের ভার দেয়া হলেও কতোদিনের জন্য করা হয়েছে সে ব্যাপারে বিসিবি সভাপতি নির্দিষ্ট করে কোনো কিছু জানাতে পারেননি। তিনি বলেন ‘পরবর্তি ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত।’ এ সময় বিসিবি সভাপতিকে কিছুটা ইতস্তত দেখা গেছে। তিনি বলেন, ‘দিন হিসেবে আমরা বলছি না ( সাকিবদের দায়িত্ব)কত দিনের জন্য । কতদিন থাকবে (সাকিব), এটা বলা মুশকিল।’ উইন্ডিজ সফরের পর বাংলাদেশ দলের জিম্বাবুয়ে সফর। সেই সফরে আবার সাকিবকে পাওয়া নিয়ে শঙ্কার কথাও জানান তিনি। বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘ওর সঙ্গে কথা বলে যেটা জেনেছ এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের পর আমাদের জিম্বাবুয়ে সিরিজ আছ।, সেই সিরিজটায় ও নিশ্চিত নয়। তবে এরপর যত সংস্করণে যত খেলা আছে, সব খেলবে ও। এই হচ্ছে ওর সঙ্গে কথা।’
সাকিব প্রথম নেতৃত্ব পেয়েছিলেন ২০০৯ সালে। তবে সেটা ছিল শূন্যস্থান পূরন।দুই টেস্টের সিরিজে নিয়মিত অধিনায়ক ছিলেন মাশরাফি। প্রতিপক্ষ উইন্ডিজ ছিল দ্বিতীয় সারির দল। দুইটি টেস্টেই বাংলাদেশ জয়ী হয়েছিল। সেন্ট ভিনসেন্টে মাশরাফি মাত্র ৬.৩ ওভার বোলিং করার পর ইনজুরিতে পড়লে তার পরিবর্তে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সাকিব। বাংলাদেশ জয় পেয়েছিল ৯৫ রানে। সেটি ছিল দেশের বাইরে বাংলাদেশের প্রথম জয়। কিন্তু এই জয়ে নাম লেখা থাকে মাশরাফির। কারণ তিনি টস করেছিলেন। কিন্তু গ্রানাডাতে পরের টেস্টে সাকিবই টস করেছিলেন। সেই টেস্টেও বাংলাদেশ জিতেছিল ৪ উইকেটে। প্রথম দফা সাকিব যে ৯ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, সেখানে জয় ছিল এই একটিই। পরে নেতৃত্ব হারিয়েছিলেন দলের ভরাডুবির কারণে। সাকিব নেতৃত্ব হারিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিমের কাছে।
দ্বিতীয় দফা তিনি দায়িত্ব পান মাহমুদউল্লাহর কাছ থেকে ২০১৮ সালে। এবার তিনি দলকে পাঁচটি টেস্টে নেতৃত্ব দিয়ে দুইটিতে জয় পেয়েছিলেন। দুইটি জয়ই ছিল এই উইন্ডিজের বিপক্ষে ঘরের মাঠে। চট্টগ্রামে ৬৪ রানে জেতার পর ঢাকায় জয়ী হয়েছিলেন ইনিংসও ১৮৪ রানে। দ্বিতীয় দফা তিনি সর্বশেষ দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন টেস্ট ক্রিকেটের নবীনতম সদস্য আফগানিস্তানের কাছে। সেই নবিন সদস্যের কাছেই সাকিবকে হারতে হয়েছিল ২২৪ রানের বড় ব্যবধানে। সাকিব তৃতীয় দফা দায়িত্ব পেলেও দুর্দান্ত ফমে থাকা লিটন দাস ডেপুটি হিসেবে প্রথমবারের মতো দায়িত্ব পেয়েছেন।
এমপি/এনএইচবি/এমএমএ/এএজেড