পিচ নিয়ে অভিযোগ নেই ডমিঙ্গোর
ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশ হেরেছে ১০ উইকেটে। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের এমন হার এই নিয়ে পঞ্চমবার। ১০ উইকেটের হারই বলে দেয় ব্যাটিং ব্যর্থতা প্রকট ছিল। যদিও বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৩৬৫ রান করেছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে গেছে মাত্র ১৬৯ রানে। এই ব্যাটিং ব্যর্থতার মাঝেও কিন্তু বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে আছে দুইটি সেঞ্চুরি। মুশফিকুর রহিমের অপরাজিত ১৭৫ ও লিটন দাসের ১৪১। আর দ্বিতীয় ইনিংসে সাকিবের ৫৮ ও লিটনের ৫২। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার ইনিংসে ছিল দুইটি সেঞ্চুরি আর তিনটি হাফ সেঞ্চুরি। দুই সেঞ্চুরি ছিল ম্যাথিউসের অপরাজিত ১৪৫ ও চান্দিমালের ১২৪ এবং তিন হাফ সেঞ্চুরিয়ান ছিলেন দিমুথ করুনারত্নের ৮০, ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার ৫৮ এবং ওশাদা ফার্নান্দোর ৫৭। পিচ নিয়ে এখানে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। কারণ পিচ যদি ভালোই না হতো শ্রীলঙ্কা দলের ব্যাটারদের কথা বাদ দিলেও নিজ দলে তো দুইটি করে সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরি আছে। কোচ রাসেল ডমিঙ্গো তাই পিচ নিয়ে কোনো অভিযোগ করেননি। পিচ ঠিকই আছে মনে করেন তিনি। এ রকম পিচে খেলতে হলে স্কিলের উন্নতি প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
ডমিঙ্গো বলেন, 'ব্যাটার ও বোলারদের জন্য এটি খুব ভালো একটি পিচ ছিল। একজন পেসার টেস্টে ১০ উইকেট পেয়েছে। সাকিব পাঁচ উইকেট পেয়েছে। আমরা পিচ নিয়ে তাই অভিযোগ করতে পারি না। এই ধরনের পিচে খেলতে হলে স্কিলের উন্নতি করা প্রয়োজন।'
বাংলাদেশের ব্যাটাররা ভালো করতে না পারার কারণ তিনি মনে করেন ঘরের মাঠে বাজে পিচে খেলা। তিনি বলেন, 'আমি হতাশাটা বুঝতে পারছি। বাজে উইকেটে খেলে ওরা অভ্যস্ত। যে কারণে তারা ভালো করতে পারছে না। যত ভালো উইকেটে খেলা হবে, ততই ক্রিকেটারদের উন্নতি হবে। আমি জানি সবাই জিততে চায়। কিন্তু চাইলেই তো আর জেতা সম্ভব নয়। ফলাফল আসা সম্ভব নয়। আপনি বাজে পিচে খেলে প্রতিপক্ষকে ১০০ রানে অলআউট করার পর আমরা ১২০ রান করলাম। কিন্তু এভাবে খেললে দল উন্নতি করবে না। এভাবে খেলেও কিন্তু সিরিজ জিততে পারিনি।'
শ্রীলঙ্কার কাছে সিরিজ হারলেও ডমিঙ্গো সিরিজ শুরুর আগে শিষ্যদের কাছে সিরিজ জেতার আশার বীজ বুনন করেছিলেন। কিন্তু তার আর হয়নি। সেই স্বপ্নের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, 'এই সিরিজের আগে আমি তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম জিম্বাবুয়ে ছাড়া বড় কোনো টেস্ট দলের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছ কি না? উত্তরে কোনো জবাব আসেনি। ওরা কখনো বড় কোনো দলের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জিততে পারেনি। যতক্ষণ না বড় দলের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জেতা শুরু না করব, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা পরবর্তী ধাপে যেতে পারব না। বড় দলের বিপক্ষে সিরিজ জেতার বিকল্প নেই।'
টেস্ট জেতা শুরু হলে মন-মানসিকতায় পরিবর্তন আসবে জানিয়ে তিনি বলেন, 'টেস্ট সংস্কৃতির একটা পরিবর্তন আসতে হবে। এই পরিবর্তনটা আসবে যখন আমরা আরো টেস্ট জিততে পারব। টেস্ট ক্রিকেট খেলার আগ্রহ, ইচ্ছা তখনই বাড়বে যখন আমরা বড় একটা টেস্ট সিরিজ জিতব। আমি মনে করি আমরা টেস্ট ক্রিকেটে ভালো দল হতে শুরু করেছি। আমাদের আরও এক ধাপ উন্নতি করতে হবে।'
বাংলাদেশ ঘরের মাঠে অতিথিদের আপ্যায়ন করে থাকে স্পিন উইকেট বানিয়ে। যে কারণে কখনো কখনো একাদশে একজন মাত্র পেসার দেখা যায়। আবার ক্ষেত্র বিশেষে একজনও পেসার থাকেন না। এভাবেই ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া ‘বধ’ কাব্য চেনা হয়েছিল। কিন্তু এবার আর পেরে উঠেনি। স্পিন পিচে লঙ্কানদের হয়ে ছড়ি ঘুরিয়েছেন দুই পেসার কাসুন রাজিথা আর আশিথা ফার্নান্দো। দুই পেসার ২০ উইকেটের ১৭টিই তুলে নিয়েছেন। আশিথা ১০ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা আর ফার্নান্দো নিয়েছেন সাত উইকেট। দুজনেই ইনিংসে প্রথমবারের মতো পাঁচ উইকেট করে নিয়েছেন। সেখানে আবার বাংলাদেশের হয়ে সমান রাজত্ব ছিল স্পিনার ও পেসারের।
ডমিঙ্গো মনে করেন এ রকম পিচ বানিয়ে সাফল্য আসলেও টেস্ট ক্রিকেটের উন্নতি কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না। বরং আরও বেশি ক্ষতি করেছে। টেস্ট ক্রিকেটে উন্নতি করতে হলে স্পোর্টিং উইকেটের বিকল্প নেই। তিনি বলেন, 'এটা (স্পিন পিচ) হয়তো আমাদের একটা টেস্ট ম্যাচের জন্য সাহায্য করবে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে কোনো ফল বয়ে আনতে সহায়তা করবে না। আগের জেতা টেস্টগুলোর প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই বলছি, সেই সকল টেস্ট জয় পরে আমাদের হয়তো ক্ষতিই করেছে। কারণ এরপর যখনই আমরা ভালো পিচে খেলেছি, তখন ভালো করতে পারিনি। যদি আমরা এভাবে স্পিন সহায়ক পিচ বানিয়ে খেলি, পরে আবার যখন ঘরের বাইরে ভালো পিচে খেলব, তখন আমাদের ভালো করার কোনো সুযোগই থাকবে না।'
এমপি/এসজি/