লিটনের ব্যর্থতাই তার সাফল্যের চাবিকাঠি
ব্যর্থতাই সাফল্যের চাবিকাঠি। এর জলন্ত প্রমাণ হতে পারেন লিটন দাস। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে লিটনের ব্যাট এমনই ঘুমিয়ে পড়েছিল যে তাকে নিয়ে চারিদিকে সমালোচনা আর বিদ্রুপ চলছিল সমান তালে। অথচ কী আশ্চর্য? এরপর তার ব্যাটে ছুটে চলেছে রানের ফল্গুধারা। তিন ফরম্যাটেই তিনি রান পেলেও টেস্টে ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি। আট টেস্টে সেঞ্চুরি তিনটি, হাফ সেঞ্চুরিও তিনটি। রান ৭৩০। একদিনের ম্যাচে এক সেঞ্চুরি আর দুই হাফ সেঞ্চুরিতে ৩৩৬ রান। বাদ যায়নি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও।
এখানে দুই ম্যাচ খেলে একটি হাফ সেঞ্চুরিতে রান করেছেন ৭৩। লিটনকে নিয়ে এ রকম উপমার কারণ ঢাকা টেস্টে তার ক্যারিয়ার সেরা ১৪১ রানের ইনিংসের পর। এর আগে চট্টগ্রাম টেস্টে তিনি মাত্র ১২ রানের জন্য সেঞ্চুরি বঞ্চিত হয়েছিলেন। তার ঢাকা টেস্টের সেঞ্চুরির মাহাত্ব্য আলাদা গুরুত্ব বহন করে। কারণ ২৪ রানে দলের পাঁচ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর মুশফিকের সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটে জুটি বেঁধে রেকর্ড ২৭২ রান করেন।মুশফিকুর রহিম করেন অপরাজিত ১৭৫ রান। দলের পরিস্থিতি যাই থাকুক লিটন নিজে সব সময় ‘চাপে’ থাকে। তাকে শূন্য থেকে শুরু করে ইনিংস টেনে নিয়ে যেতে হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি যখন ব্যাটিংয়ে যাই, তখন দলের রান ৩০০ হলেও আমি চাপে থাকি। কারণ আমাকে শুন্য থেকে শুরু করতে হয়। আমি ক্রিজে গেলেই আন্ডার প্রেসারে থাকি।’
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর কিভাবে নিজেকে এভাবে বদলে ফেলেছেন। পাচ্ছেন দ্রুত সাফল্য। লিটন জানালেন, ‘আমার কাছে মনে হয় প্র্যাকটিসের মেথডটা চেঞ্জ হয়েছে। কী কী বদলেছি বলতে পারব না। এটা বলা খুবই কঠিন। এ জিনিসটা আমার ভেতরেই থাক।’
নিজের বাজে সময়ে সমালোচনা নিয়ে তিনি বলেন, ‘সমালোচনা হবেই। জীবন যেহেতু ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে, ভালো খেললে আপনারা বাহবা দিবেন, জনগণ বাহবা দিবে, খারাপ খেললে উল্টোটা করবে। কারণ তারা চায় আমি পারফর্ম করি। এই জিনিসটা আমার ওপর এখন আর প্রভাব পড়ে না। আমি প্র্যাকটিসে কতটা মনোযোগী, প্র্যাকটি মেথড কী, সেই প্রসেস অনুসরণ করছি কি না। অনুসরণ না করলে আমি নিজের কাছে নিজে দোষী। ফলাফল ওপরওয়ালার হাতে।’
তিনি বলেন, ‘কিছু সময় সফল হই, কখনও ব্যর্থ হই। এটাই ক্রিকেট। এভাবেই চলতে থাকবে। আজকে ভালো করছি। কাল খারাপ হতেই পারে। এটাই জীবন। এটা মেনেই চলতে হবে।’
দলের দুঃসময়ে মুশফিকেরসঙ্গে জুটি বেঁধে রান করা প্রসঙ্গে লিটন বলেন, ‘চেষ্টা ছিল দলকে যতটুকু দেওয়া যায়। আমি আর মুশফিক ভাই চাপের মুখে ব্যাটিং করেছি। চাচ্ছিলাম একটা বড় পার্টনারশিপ করার জন্য।
যতটুকু হয়েছে, দলের জন্য খুব ভালো।’ রান করার সময় মুশফিকের সঙ্গে বলা কথা নিয়ে তিনি বলেন, ‘মুশফিক ভাইর সাথে এটাই কথা হয়েছিল- যেহেতু আমরা ব্যাকফুটে, যতদূর টানা যায়। গিয়েই তো একশ করতে পারব না। প্রথম লক্ষ্য ছিল লাঞ্চ পর্যন্ত খেলা। মুশফিক ভাইয়ের সাথে অনেক ম্যাচেই দেড়শ রানের মত পার্টনারশিপ হয়েছে। এটা তো ভালো দিক। একটা জিনিস চিন্তা করছিলাম মিরপুরে লড়াইয়ে থাকতে হলে অন্তত ৩০০ রান করতেই হবে। আমাদের মাথায় এই জিনিসটাই ছিল যত লম্বা সময় ব্যাটিং করা যায়।’
এমপি/এমএমএ/