ব্যাটিং ধস সামলে মুশফিক-লিটনে বাংলাদেশের প্রতিরোধ
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বাংলাদেশ দল প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৫৩ রানে অলআউট হয়েছিল। তা’হলে কী আরেকটি ব্যাটিং ব্যর্থতার দু:সহ চিত্রনাট্য মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছে? এবারের পরিস্থিতি যে আগের চেয়েও খারাপ। দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশ পাঁচ উইকেট হারিয়েছিল ১৬ রানে। ওভার ছিল ৮.৫। আজ মিরপুরে ২৪ রানে নেই পাঁচ উইকেট। ওভার আরও কম ৬.৫।
দক্ষিণ আফ্রিকারটা ছিল বাংলাদেশের দ্বিতীয় আর টেস্টের চতুর্থ ইনিংস। সে হিসেবে এ রকমটি হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। প্রথম দিন আধঘণ্টা না যেতেই এ রকম ভয়াবহ অবস্থার? তা’হলে কী লাঞ্চের আগেই বাংলাদেশ অলআউট হয়ে যাবে? দুই পেসার কাসুন রাজিথা ও আশিথা ফার্নান্ডোর বলে যেভাবে গতি আর সুইংয়ের সংমিশ্রণে খেলা কঠিন হয়ে পড়েছিল, তাতে করে লাঞ্চের আগে অলআউট হওয়ার ভাবনা কেউ করে থাকলে খুব একটা ভুল করেননি। কিন্তু বাংলাদেশ অলআউট হয়নি। এমন কি প্রথম সেশনের বাকি সময় আর কোনো উইকেটও পড়তে দেয়নি। ম্যাচের পরিস্থিতিতে এ রকম অসাধারণ কাজটি করেন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম ও টেস্ট ক্রিকেটে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা লিটন দাস। তারা দুই পেসার গোলা সামলে ১৬.১ ওভার খেলে যোগ করেন ৪২ রান। দলের রান পাঁচ উইকেটে ৬৬। মুশফিক ২২ ও লিটন ২৬ রান নিয়ে গেছেন লাঞ্চে।
যারা টসের শুরু থেকে খেলার দিকে নজর রাখেননি, তারা যদি হঠাৎ করে স্কোর কার্ড দেখে থাকেন, তা’হলে দেখেই অধিনায়ক মুমিনলের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করবেন? কেন টস জিতে ব্যাটিং বেছে নিলেন। পিচ বুঝতে পারেননি। মুমিুনল কোনো ভুল করেননি। পিচে সামান্য ঘাস ছিল। প্রথম ঘণ্টা ব্যাটসম্যানদের সহায়তা করবে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ব্যাটসম্যানদের জন্য খেলা কঠিন হয়ে পড়বে। একই কথা বলেছিলেন লঙ্কান দলপিতও। আবার পিচ রিপোর্টে ধারভাষ্যকার ছিলেন আরেকটু বেশি সরস। তিনি জানিয়েছিলেন শুরুর দিকে পেসাররা সহায়তা পেলেও পরের দিকে স্পিনারদের হয়ে কথা বলবে। মূলত এই দৃষ্টিকোন থেকেই মুমিনুলের টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেওয়া। তবে এভাবে উইকেট পতনের পেছনে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদেরও দায় আছে। ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় ও নাজমুল হোসেন শান্ত বোল্ড হলেও আউট হওয়া বাকি তিন ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল, মুমিনুল ও সাকিব নিজেদের দায় এড়াতে পারবেন না।
ইনিংসের ও রাজিথার দ্বিতীয় বলেই মাহমুদুল হাসান জয় ক্যারিয়ারে চতুর্থবারের মতো শূন্য রানে আউট হওয়ার পর আশিতা ফার্নান্ডোর পরের ওভারে (ইনিংসের দ্বিতীয়) চতুর্থ বলে তামিম ইকবালও ক্যারিয়ারে দশমবারের মতো শূন্য রানে সাজঘরমুখি হন পয়েন্টে জয়াভিক্রমার ডাইভিং ক্যাচে পরিণত হয়ে। তামিম ফ্লিক করতে গিয়ে লাইন মিস করে ফেলেন। বলটি এমন কোনো কঠিন ছিল না। এই আশিতা ফার্নান্ডোই আবার মুমিনুলের ব্যর্থতার পাল্লা ভারি করেন নয় রানে উইকেটের পেছনে নিরোশান ডিকভেলার ক্যাচে পরিণত করেন। মুমিনুল খেলবেন কি খেলবেন না এই সিদ্ধান্তে দিধাগ্রস্ত হয়ে দেরি করে উইকেট দিয়ে আসেন। রাজিথা তার দ্বিতীয় শিকার করেন রাউন্ড দ্য উইকেটে নাজমুলকে আট রানে বোল্ড করে। পরের বলেই সাকিবকে শূন্য রানে এলবিডব্লির ফাঁদে ফেলে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেন। তার রাউন্ড দ্য উইকেটে বল ভেতরে ঢোকার মুহূর্তে সাকিব লেগ সাইটে খেলতে গিয়ে ব্যাটে-বলে মিলন ঘটাতে পারেননি। বল গিয়ে আঘাত হানে প্যাডে। লঙ্কানদের আবেদনে একটু ভেবে আম্পায়ার সিন্ধান্ত দেন। সাকিব সঙ্গেসঙ্গেই রিভিউ নিয়েও বাাঁচতে পারেননি। ক্যারিয়ারের পঞ্চম আর প্রথম বলে দ্বিতীয়বার তিনি শূন্য রানে আউট হলেন। রাজিথাকে হ্যাটট্রিক বঞ্চিত করেন লিটন দাস। মুশফিকের সঙ্গে জুটি বাঁধার পর দুই ব্যাটসম্যান ধীরে ধীরে লঙ্কান বোলারদের উইকেট নেওয়ার উত্তেজনা প্রশমিত করতে থাকেন। পরে যা লাঞ্চের আগে নেমে আসে শূন্যের কোটায়।
এমপি/আরএ/