এগারো জন যদি সেঞ্চুরি করে তাহলে রান হবে এগারোশো : মুমিনুল
১৫ শেসনের টেস্টে চট্টগ্রামে উত্তেজনার বালাই ছিল না বললেই চলে। তারপরও ছিটেফোঁটা যা কিছু ছিল তা চতুর্থ দিনের শেষ শেসনের শেষ ঘণ্টা ও পঞ্চম দিনের প্রথম শেসন। বাকিটা ছিল শুধুই খেলার জন্য খেলা। যার পরিণতি একটা নিষ্প্রাণ ড্র। প্রচণ্ড গরমে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দর্শকের অভাবে খা খা করছিল। যেভাবে ম্যাচের সমাপ্তি ঘটেছে, এ রকম টেস্ট দেখার জন্য ঘাটের পয়সা খরচ করে দর্শকরা অন্তত আসতে চাইবেন না।
চট্টগ্রাম টেস্টের অর্জন ছিল দুই দলের চার পয়েন্ট করে ভান্ডারে যোগ করা। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে এটাই তাদের প্রাপ্তি। তবে বেশ কিছু ব্যক্তিগত অর্জন ছিল মুশফিকুর রহিমের ধীলগতির টেস্ট সেঞ্চুরি ও প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে পাঁচ হাজার রান করা, তামিম ইকবালের সেঞ্চুরির সঙ্গে লিটন দাস ও মাহমুদুল হাসান জয়ের ফিফটি, টেস্ট ক্রিকেটে আবার ফিরে এসে নাঈম হাসানের ছয় উইকেট, শ্রীলঙ্কার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের এক রানের জন্য ডাবল সেঞ্চুরি করতে না পারা। অধিনায়ক মুমিনুল এই সবকেই দেখছেন অর্জন হিসেবে। তিনি বলেন, ‘প্রাপ্তির জায়গা বলতে দল হিসেবে সবাই ভাল খেলেছে। এটাই দরকার। আমরা যখন দল হিসেবে খেলি তখন ফলাফল করি।' কিন্তু তিনি নিজে রান পাননি। টানা পাঁচ ইনিংসে দুই অংকের ঘরে যেতে পারেননি। নাজমুল হোসেন শান্তও রান পাননি। বিষয়টি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে মুমিনুলের দৃষ্টি আকষর্ণ করা হলে তিনি বলেন, ‘'সত্যি কথা বলতে সবারতো পারফর্ম করা কঠিন। এগারো জন যদি সেঞ্চুরি করে তাহলে রান হবে এগারোশো (হাসি)। ক্রিকেট খেলাটা তো এরকম। হয়ত দুজন পারফর্ম করবে অথবা তিনজন করবে। যারা করবে তারা বড় করবে।’ তিনি জানান তার ব্যাটিং নিয়ে তিনি চিন্তিত নন। তিনি বলেন, ‘ ‘আমি আসলে আমাকে নিয়ে ভাবি না। আমি আমার ব্যাটিং নিয়ে চিন্তিত নই।’
চতুর্থ দিন হাতে সাত উইকেট থাকার পরও দিনের মন্থর ব্যাটিং করে বাংলাদেশ। ২৭ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে রান করে মাত্র ৬৭। এর কারণ ব্যাখ্যা করে মুমিনুল বলেন, ‘যদি পাঁচদিন আপনি ওদের ব্যাটিংও দেখেন, আমাদের ব্যাটিংও দেখেন। এই উইকেট এমন ছিল আপনি টিকে থাকতে পারবেন। কিন্তু একটু বেশি যদি এক্সালারেট করতে যান তাহলে হয়ত উইকেট পড়ার সুযোগ বেশি থাকবে। যেটা আমার কাছে মনে হয়। ওই সময়ে লিটন যদি আউট না হতে তাহলে হয়ত আমরা সুযোগটা নিতে পারতাম। ওই সময় দুই তিনটা উইকেট পড়ে গেল। তামিম ভাই আউট হলো, লিটন আউট হলো। লিটন যদি মুশফিক ভাইয়ের সঙ্গে এক ঘণ্টা খেলতে পারত তাহলে আমরা অন্যরকম কিছু করতে পারতাম। আপনি যেটা বলছেন এটা সত্যি কিন্তু বেশি মারতে গেলে আউট হওয়ার ঝুঁকি থাকে।'
পেসারদের কাছে আরেকটু ভালো বোলিং প্রত্যাশা করেছিলেন জানিয়ে মুমিনুল বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় পেস বোলাররা আরেকটু ভালো বল করতে পারত। যেহেতু পেস বোলারদের কাছে সবার প্রত্যাশা একটু বেড়েছে। আমার কাছে মনে হয় প্রথম ইনিংসে আরেকটু ভালো বল করতে পারত। দ্বিতীয় ইনিংসে শরীফুল ছিল না। খালেদ আরেকটু লেংথে বল করতে পারলে আরেকটু খুশি হতে পারতাম। তাহলে ভালো হতো। স্পিনে এই উইকেটে উইকেট পাওয়া কঠিন। পেস বোলারদেরও তাই । স্পিনারদের ভেতরে নাঈম, সাকিব ভাই তাঁর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আপনি যদি দেখেন, প্রথম ইনিংসে ওদের রান বাড়ছিল। ওই সময়ে সাকিব ভাই ও তাইজুল এসে ওটা ঠেকিয়েছেন। আমি মনে করি প্রথম ইনিংসে সাকিব ভাইয়ের কাজ খুব ভালো ছিল। দ্বিতীয় ইনিংসও ভালো বল করেছেন এই ট্র্যাকে।’
শ্রীলঙ্কা সিরিজ শেষ হওয়ার আগেই আগামী মাসে উইনন্ডিজ সফর নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। শ্রীলঙ্কা সিরিজ শুরু হওয়ার আগের মতো দলের একাধিক পেসার ইনুজরিতে। তাসকিন আগে থেকেই ইনজুরিতে। চট্টগ্রাম টেস্টে গিয়ে ইনজুরিতে পড়েছেন আবার শরিফুর। ফলে দেখা দিয়েছে মান সম্পন্ন পেসারের সংকট। এ রকম পরিস্থিতি আবার এসেছে আলোচনায় মোস্তাাফিজের খেলার বিষয়টি। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু আজ সকালে মোস্তাফিজের খেলার বিষয়ে কথা বলেছেন। মুমিনুলের কাছেও জানতে চাওয়া হয় এ নিয়ে। তিনি বলেন, ‘আসলে আপনার যেটা দেখতে হবে, মোস্তাাফিজ লাল বলে কতদিন খেলেছে। এখানে কিন্তু অনেক কিছু নির্ভর করে। কতদিন খেলছে-না খেলছে। আর ফিটনেসের একটা ইস্যু থাকে। এখন যদি ওকে দরকার হয়, তাহলে অবশ্যই খেলবে। দেখেন আমাদের ফ্রন্টলাইনার দুই পেসার নেই- শরিফুল ও তাসকিন।’
মোস্তাফিজ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘ আমি জানি না মোস্তাফিজ কয়টা টেস্ট খেলছে। আর বাংলাদেশের কোনো পেসারই অভিজ্ঞ না। শুনলে অবাকই হবেন। সবার মিলিয়ে ২০টা টেস্ট হয়েছে কি না জানি না। আমার কাছে মনে হচ্ছে না, এখন অভিজ্ঞতা খুব একটা বড় কিছু ওদের কাছে। আর মোস্তাফিজের ব্যাপারে বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে।’
এমপি