বাংলাদেশে অভিজ্ঞতার কোনো দাম নেই: মুশফিক
মুশফিককে ভীষন প্রয়োজন ছিল মিডিয়ার। কিন্তু কিছুতেই তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। কিংবা বলা যায় তিনি নিজ থেকেই আগ্রহী ছিলেন না। ডারবান টেস্টে দলের বিপর্যয়ের মুখে দারুণ খেলতে থাকার পর হাফ সেঞ্চুরির করার সঙ্গে সঙ্গেই অহেতুক রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে আউট হয়ে দলের বারোটা বাজান।
কেন তিনি এ রকম শট খেলতে গেলেন-তা অজানাই থেকেই যায় মুশফিককে না পাওয়াতে। আবার কয়েকদিন আগে সিনিয়রদের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মুশফিকের নাম উল্লেখ করে বিসিবির সভাপতি নিজ থেকে সরে যেতে বলা, না গেলে নিজেরাই ব্যবস্থা নেওয়ার হুংকার দেয়ার পরও মুশফিকের বক্তব্য জানাটা ছিল ভীষন জরুরি। কিন্তু এখানেও মুশফিক নীরব।
প্রবাদ আছে নীবরতা অবলম্বন, সম্মতির লক্ষণ। তাহলে কী মুশফিকের নীরবতা সব তিনি নিজের উপর নিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু মুশফিকের চরিত্রের যে বৈশিষ্ট্য, তাতেতো এভবে সবকিছু নীরবে হজম করার ছেলে নন তিনি। অবশেষে নীরবতা ভেঙে মুশফিক প্রকাশ্যে আসেন আজ চট্টগ্রাম টেস্টের চতুর্থ দিন দুইভাবে। প্রথমে ২২ গজে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ব্যাট উঁচিয়ে ক্ষেপাটে উল্লাস করে, পরে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলে। একই দিন মুশফিকে দুইভাবে জবাব দিলেন। এর চেয়ে ভালা জবাব আর কী হতে পারে?
বাইশ গজে ব্যাট হাতে জবাব সবাই জেনে গেছেন। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে তার বলা কথা অনেকেই জেনে গেছেন, অনেকেই জানতে পারেননি। কী বলেছেন মুশফিক সংবাদ সম্মেলনে।
অবসর নেওয়ার প্রশ্নে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি অবসর নেবেন না। দলের প্রয়োজনে তিনি তিন ফরম্যাটেই খেলে যাবেন। বিসিবি সভাপতি সিনিয়রদের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সরসরি মুশফিকের নাম উল্লেখ করার কারণও ছিল। পঞ্চম পাণ্ডবের মাঝে মাশরাফি এখন আর নেই কোনো ফরম্যাটেই। মাহমুদউল্লাহ টেস্ট থেকে অবসর নিয়েছেন। তামিম ইকবাল অভিমানে টি-টোয়েন্টি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। সাকিবকে টেস্ট ক্রিকেটে নিয়মিত পাওয়া যায় না। শুধু মুশফিকই তিন ফরম্যাটে খেলে চলেছেন। মুশফিক তিন ফরম্যাটেই খেলে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল আছেন। তিনি বলেন, ‘না ভাই, আমার আপাতত এমন কোনো ভাবনা নেই। আমার ইচ্ছা বাংলাদেশের হয়ে যতগুলো ম্যাচ খেলার সুযোগ আসবে এবং তারা আমাকে যেভাবে চাইবে, ইনশাআল্লাহ আমি চেষ্টা করে যাব আমার ফিটনেস ও পারফরম্যান্স দিয়ে সেটা ধরে রাখার। আমার মনে হয় বাংলাদেশে অভিজ্ঞতার কোনো দাম নেই।’
‘সেখানে আমি মনে করি ১৭ বছর যে খেলেছি, আলহামদুলিল্লাহ। এতটুকু যে আসতে পেরেছি, এটা আমার কাছে অনেক বড় ব্যাপার। সামনে আল্লাহ যতটুকু রেখেছেন, উনি লিখেই রেখেছেন। ইনশাআল্লাহ এতটুকু যেন ভালো মতো খেলতে পারি।’
ডারবান টেস্টে তার রিভার্সসুইপ নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। আজো তিনি সেঞ্চুরি করার পর সুইপ শট খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন। তার এ সব শট খেলা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান দাবি অনুযায়ী তিনি এ সব শট খেলেন। এমন কি তার যে দুইটি ডাবল সেঞ্চুরি আছে সেগুলো তিনি সবাইকে দেখে আসার আহবান জানান ।
তিনি বলেন,‘ আমি ভেবেছিলাম প্র্র্রথম প্রশ্নই এটা হবে যে সুইপ শট খেলে আউট হয়ে গেলেন। উইকেট কেমন এর ওপর নির্ভর করে। এটা অনেক ভালো, ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি উইকেট। এখানে থিতু হলে অন্যান্য শট খেলা যায়। সোজা ব্যাটে খেলা যায়। আরেকটা জিনিস- আমি কিন্তু রিভার্স সুইপ খেলে দুইটা ডাবল সেঞ্চুরিও করেছি। এটা আমি একটু বলে রাখতে চাই। শুধু একটা না, দুইটা ডাবল সেঞ্চুরি। যাদের কাছে ভিডিও আছে দেখলে বুঝতে পারবেন। প্রতি ইনিংসে ৩-৪টা রিভার্স সুইপ আছে।এটা অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ শট। কিন্তু আমি ভবিষ্যতেও এটা খেলতে ভয় পাব না।’
মুশফিকের আজকের অষ্টম সেঞ্চুরি ছিল তার করা সবচেয়ে মন্থর সেঞ্চুরি। সবচেয়ে বেশিষ ২৭০ বল খেলেছেন। বাউন্ডারি মেরেছেন মাত্র চারটি। আগের দিন হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন ১২৫ বরে। আজ বাকি ৫০ রান করতে বল খেলেন ১৪৫টি। এতো বেশি বল যেমন আগ কখনো খেলে কোনো সেঞ্চুরি করেননি,তেমনি এতো কম বাউন্ডারিও ছিল না তার কোনো সেঞ্চুরিতে। এর আগে তার মন্থরতম সেঞ্চুরি ছিল ২০১৭ সালে হায়দরাবাদে ভারতের বিপক্ষে ২৩৫ বলে।
এমপি/এমএমএ/