সেঞ্চুরিতে মুশফিকের জবাব
কোনো কথা নেই বার্তা নেই। নেই কোনো আগাম সংকেতও। হুট করেই বিসিবি সভাপতি যেন দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের নিয়ে বোমা ফাটালেন। কোনো রকমের রাখঢাক না করেই তাদের বিদায়ের বা অবসরের কথা জানিয়ে দেন। বিষয়টি তিনি তাদের উপরই ছেড়ে দেন। নতুবা তারা নিজেরাই তখন দেখবেন বলে জানানও। সিনিয়র ক্রিকেটার কারও নাম উল্লেখ না করলেও বিসিবির সভাপতি একপর্যায়ে মুশফিকুর রহিমের নাম সরাসরি উল্লেখ করেন। সিরিজ শুরু হওয়ার আগে এ রকম বক্তব্য যেকোনো ক্রিকেটারের মনোবলের উপর বিরাট আঘাত হানে। মুশফিকের উপর প্রভাব ফেলাটাও অবাক হওয়ার কিছু নয়। কিন্তু মুশফিক এ নিয়ে কোনো রকম উচ্চবাচ্য করেননি। ব্যাট হাতে ২২ গজকেই তিনি জবাব দেওয়ার মোক্ষম অস্ত্র মনে করেন। কিন্তু মুশফিক কোনো কথা না বললেও দলের ব্যাটিং কোচ কথা বলেছিলেন। চট্টটগ্রাম টেস্টে ব্যাটসম্যানরা ভালো করার দৃঢ় ঘোষণা দেন তিনি। তার সে কথার প্রতিফলন ব্যাটসম্যানরা দিয়ে যাচ্ছেন। তামিম ইকবাল সেঞ্চুরি করেছেন। মাহমুদুল হাসান জয়, লিটন দাস হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন। লিটন দাস তো অল্পের জন্য সেঞ্চুরি বঞ্চিত হয়েছেন। কিন্তু মুশফিকুর রহিম সেঞ্চুরি করেছেন। তার তিন অংকের সাজানো বাগান যেন অন্য রকম বার্তা বহন করছে। তার এক একটি রান বিসিবির সভাপতির বলা এক একটি কথার যেন জবাব। বিসিবির সভাপতির বলা কথার জবাব মুশফিক এক সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই দিয়ে দিলেন। যে কারণে সেঞ্চুরি করার পর উচ্ছ্বাসের ভঙ্গিতে ছিল প্রতিবাদের ভাষায়ও। এটি তার ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি। সেঞ্চুরির আগে তিনি প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে পাঁচ হাজার রানও পূর্ণ করেন।
মুশফিকের সেঞ্চুরিটি ছিল ধৈর্য্যের এক জীবন উদাহরণ। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সর্বশেষ টেস্টে দলের ক্রান্তিকালে রির্ভাস সুইপ নামক বিলাসি শট খেলতে গিয়ে আউট হওয়ার পর চারিদিকে সমালোচনায় দগ্ধ হওয়ার পর এই ইনিংসে ছিল না সে রকম কোনো ভুল ভ্রান্তি কোনো লোভ তাকে প্রলুব্ধ করতে পারেনি। বল বেছে খেলেছেন। গুণাগুণ বিচার করেছেন। নিজেকে লুকিয়ে রেখেছেন সব রকমের লোভ-লালসা থেকে। মগ্ন হয়েছিলেন সেঞ্চুরির মিশনে। ৯০ ঘর থেকে সেঞ্চুরি করতে তিনি বলে খেলেন ২৯টি। তবে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন রাজকীয়ভাবে আশিতা ফার্নান্ডোকে ফাইন লেগ দিয়ে বাউন্ডারি মেরে। বল খেলেন ২৭০টি। মজার বিষয় যে বাউন্ডারি মেরে মুশফিক তিন অংকের মালা গাঁথেন, সেখানে বাউন্ডারি ছিল মাত্র চারটি। এতেই বুঝা যায় তিনি কতোটা ধৈর্য্যের প্রতীক হয়ে ছিলেন। মুশফিক এই সেঞ্চুরি পেয়েছেন ২৭ মাস পর। তার সর্বশেষ সেঞ্চুরি ছিল ২০২০ সালে মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অপরাজিত ২০৩ রান।
মুশফিকের সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ চা বিরতিতে গিয়েছে ছয় উইকেটে ৪৩৬ রান নিয়ে। এগিয়ে আছে ৩৯ রানে। এই সেশনে বাংলাদেশ তিন উইকেট হারিয়ে ২১ ওভারে যোগ করে ৫১ রান। মুশফিক ১০৪ ও নাঈম হাসান ৪ রান নিয়ে আবার ব্যাট করতে নামবেন। এই সেশনে শুরুর প্রথম দুই বলেই বাংলাদেশ হারায় লিটন দাস ও তামিম ইকবালকে। ঘাতক ছিলেন কনকাশন সাব কাসুন রাজিথা। লিটনকে উইকেটের পেছনে নিরোশান ডিকাভেলার ক্যাচে পরিণত করার পরের বলে তামিম ইকবালকে বোল্ড করেন। সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে লিটন আউট হন ৮৮ রানে। মুশফিকের সঙ্গে চতুর্থ উইকেট জুটিতে তিনি যোগ করেন ১৬৫ রান। আগের দিন মাসলপুল হওয়তে তামিম ইকবাল চা বিরতির পর আর ব্যাট করতে পারেননি। লিটন আউট হওয়ার ব্যাট করতে নেমে প্রথম বলেই তিনি বোল্ড হয়ে যান। সাকিব এসেও বেশ সময় ঠিকতে পারেননি। ২৬ রান করে তিনি আশিতা ফার্নান্ডোর বলে ডিকাভেলার হতে ধরা পড়েন।
এমপি/এসএন