ব্যাটিং ব্যর্থতা উত্তরণে মুমিুনলের অঙ্গীকার
বাংলাদেশের জন্য নতুন বছর শুরু হয়েছিল আলোর ঝর্ণাধারায়। যে নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে তিন ফরম্যাটে কোথায়ও জয় ছিল না বাংলাদশের, সেখানে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে টেস্টে নিউ জিল্যান্ডকে হারিয়ে দেয় ৮ উইকেটে। যেখানে নিউ জিল্যান্ড গিয়ে বিশ্বের অনেক সেরা সেরা দলও পেরে উঠে না। সেখানে বাংলাদেশের এই জয় টেস্ট ক্রিকেটে নতুন ইতিহাস রচনা করে। এই জয়ের মাহাত্ব্যও আছে অনেক। কারণ টেস্ট ক্রিকেটে জিততে হলে প্রতিপক্ষের ২০ উইকেট নিতে হয়। বাংলাদেশ সেই কাজটি ঠিকই করেছিল, তবে তা অবিশ্বাস্যভাবে। কারণ বোলিং আক্রমণে সেনানি ছিলেন মাত্র চারজন।
যেখানে পাঁচ বোলার নিয়েও অনেকে পেরে উঠে না। এমন জয়ে তাই ক্রিকেট বিশ্ব রব উঠেছিল। বাংলাদেশের পায়ের তলার মাটিও অনেক শক্ত হয়ে উঠে। হয়ে উঠাটাই স্বাভাবিক। এমন জয়ে টেস্ট ক্রিকেটেও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা শুরু হলো- অনেকের কাছেই সেরকম মনে হয়েছে। এমন মনে হওয়াটাও কিন্তু বাড়াবাড়ি ছিল না। কিন্তু ক্রাইস্টচার্চে পরের টেস্টে বাংলাদেশ আবার ফিরে যায় নিজেদের চেনা রূপে। হার মানে ইনিংস ও ১২৭ রানের ব্যবধানে। এমন হারের পরও বাংলাদেশের মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট জয়ে নিয়ে কোনো প্রশ্ন দেখা দেয়নি। যে কারণে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়েও বাংলাদেশ টেস্ট সিরিজ জেতার পরিকল্পনা বুনন করে। এই বুননে বেশি করে হাওয়া লাগে ওয়ানডে সিরিজ জেতাতে।
নিউ জিল্যান্ডের মতা দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতেও বাংলাদেশের আগে কোনো জয় ছিল না। প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ জিতে সেই খরা দূর করার পর, ওয়ানডে সিরিজ জিতে সাফল্যর পাল্লা আরও ভারি করে তুলে। যার ঢেউ লাগে টেস্ট সিরিজ জেতারও? কিন্তু সে আশা এবার শুধু কাগজে-কলমেই থেকে যায়। বাস্তবে আর নেমে আসেনি। বাংলাদেশ ফিরে যায় টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের প্রাগঐতিহাসিক যুগে, যেখানে হারের ব্যবধান ছিল বড়! দক্ষিণ আফ্রিকাতেও বাংলাদেশ হার মেনেছিল যথাক্রমে ২২০ ও ৩৩২ রানে। এই হারের চেয়েও বড় ছিল দুই টেস্টেরই দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ দল ৫৩ ও ৮০ রানে অলআউট হওয়া।
এবার ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কা। এখানেও নেই তেমন কোনো সাফল্য। আছে একটিমাত্র জয়। তবে সেই জয়ের সৌন্দর্য্য ছিল খুব বেশি। সেটি ছিল বাংলাদেশের শততম টেস্ট। জয়টা তাই আগামীর জন্য মাইলফলক হয়ে উঠে। এরপর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ চারটি টেস্ট খেলে দুইটিতে হেরেছিল ২১৫ ও ২০৯ রানে। বাকি দুইটি ড্র করতে পেরেছিল। এবার সেখানে পরিবর্তন আনা কিংবা মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের স্মৃতি ফিরিয়ে আনা বাংলাদেশ দলের জন্য অতীব জরুরি হয়ে উঠেছে। বিষয়টি মুমিনুলেরও ভাবনায় আছে।
তিনি মনে করেন, সমস্যা আছে সমাধানেরও চেষ্টা করতে হবে। তিনি বলেন, ‘দেখেন প্রত্যেকটা সিরিজে এরকম ব্যর্থ হলে তো ব্যাটসম্যান হিসেবে সবাই জিনিসগুলো থেকে ওভারকাম করতে চায়। আমরা এগুলো নিয়ে কাজ করছি। আগের সিরিজে কী হয়েছে, সেটা নিয়ে চিন্তা করছি না।’
তিনি জানান দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশন আর বাংলাদেশের কন্ডিশন এক নয়। মুমিনুল বলেন, ‘ওই কন্ডিশন আর এই কন্ডিশন অনেক আলাদা। এখন এখানে কীভাবে মানিয়ে নেব, এটা হলো গুরুত্বপূর্ণ। ওই জায়গা থেকে কতটা শিখছি ও উন্নতি করছে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।’
সাকিব খেলাই মানেই পরিকল্পনায় অনেক পরিবর্তন। একজন বোলার ও ব্যাটসম্যান বেশি খেলা। সাকিবের অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশ সর্বশেষ চার টেস্ট খেলেছে চার বোলার নিয়ে। এবার কিন্তু পাঁচ বোলার নিয়ে খেলার সম্ভাবনা খুব বেশি। যদিও মুমিনলি বিষয়টি রেখে দিয়েছেন খেলার দিন পিচ দেখা পর্যন্ত।
তিনি বলেন, ‘কাল উইকেট দেখে সিদ্ধান্ত নিব, চারটা বোলার নাকি পাঁচটা বোলার নিয়ে খেলব। সাকিব ভাই এলে কম্বিনেশন ভালো হয়। হয়ত কাল সিদ্ধান্ত নিতে পারব তিন পেসার নাকি দুই পেসার। চট্টগ্রামে রান বেশি হয়, বোলারের চাহিদা বেশি থাকে। এটার প্রভাব পড়তে পারে।’
একাদশ যেমনই হোক মুমিনুল নামবেন জেতার জন্যই। বলেন, ‘যখন খেলি জেতার জন্য খেলি। এখানেও এই পরিকল্পনা নিয়েই খেলব। ম্যাচ জেতার জন্যই খেলব। আগে কী হল না হল এগুলো নিয়ে কখনও চিন্তা করতে পারবেন না। যারা ৫ দিন চাপ সামলাতে পারবে তারাই ম্যাচ জিতবে। অতীতে কী হয়েছে এসব ভূমিকা রাখে না।’
বিগত টেস্টগুলোতে বাংলাদেশ দল ‘রিভিউ’ নেয়ার ক্ষেত্রে বেশ ভুগেছিল। বিষয়টি মুমিনুলকে মনে করে দিলে তিনি বলেন, ‘ফাজলামো করে যদি বলি- আমার রোবট হতে হবে, এছাড়া কোনো অপশন নেই। আমার কাছে মনে হয় বোলার আর কিপারের ভিউটা সবচেয়ে ভালো থাকে। ওরা যদি ভালো ফিডব্যাক দেয়। আমি হয়ত মিড অফে থাকি। কিপার আর বোলার ভালো ফিডব্যাক দিলে ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। আমি আগেও অনেক রিভিউয়ে সফল হয়েছি। আমার মনে হয় মাঝেমাঝে এগুলোও আপনাদের দৃষ্টি দেওয়া উচিৎ। মাঝেমধ্যে হয়ত হয় না। শুধু আমি না, বিশ্বের সব অধিনায়কই এটার সম্মুখীন হয়। এজন্য আমার কিছু সাপোর্টও দরকার।’
এমপি/এমএমএ/