মাহমুদুলের সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৯৮
মাহমুদুল হাসান জয় যখন মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে গিয়েছিলেন, তখন হয়তো ঠিক মতো আহার করতে পারেননি। আর করবেনই বা কী করে? তিনি যে তখন ৮০ রানে অপরাজিত। মধ্যাহ্নভোজের পর সেঞ্চুরি হবে কি না এই চিন্তায় ছিলেন? সেই মাহমুদুল হাসান জয়ই যখন আবার চা বিরতিতে যান, তখন আরামছে চা পান করেছেন। কারণ তার নামের পাশে যে তখন শোভা পাচ্ছে একজন ব্যাটসম্যানের চির আরাধ্য তিন অংকের ম্যজিক ফিগার ‘সেঞ্চুরি’।
আর সেটা যদি হয় প্রথম সেঞ্চুরি, সেখানে মিশে থাকে অন্য রকম এক অনুভূতি। মাহমুদুল সেই কাঙ্খিত সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন আবার মাত্রই তৃতীয় টেস্ট খেলতে নেমে। তাও আবার দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে। তার ধৈর্য্যশীল সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের আকাশ থেকে কেটে গেছে কালো মেঘের ঘনঘটা। সেখানে শোভা পাচ্ছে ঝকঝক রোদের আলো। ২৯৮ রানে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে থেকে তারা পিছিয়ে ৬৯ রানে। দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংসে করেছিল ৩৬৭ রান। দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬ রান করার পর বৃষ্টি ও আলো স্বল্পতার কারণে পরে আর ব্যাট করতে পারেনি। তারা এগিয়ে আছে ৭৫ রানে।
মিরপুরে পাকিস্তানের বিপক্ষে অভিষেকে ব্যর্থ (শূন্য রানে আউট) হওয়ার পর মাউন্ট মঙ্গান্ইুয়ে বাংলাদেশের স্মরণীয় জয়ে মাহমুদুল হাসানের অবদান ছিল ৭৮ রানের। এই রানের চেয়েও বেশি ছিল ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্টেই নিউ জিল্যান্ডের পেস আক্রমণ সামাল দিয়ে সত্যিকারের টেস্ট মেজাজে খেলা। এরপর ইনজুরির কারণে আর কোনো টেস্ট খেলতে পারেনি। ডারবানে আবার খেলার সুযোগ পেয়ে তিনি সেই মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে যেখানে শেষ করেছিলেন, ঠিক যেন সেখান থেকেই শুরু করেন। একদিকে বাংলাদেশের উইকেট পড়ছে, আর আপরদিকে তিনি ধৈর্য্যের মূর্তিমান প্রতীক হয়ে এক প্রান্ত আগলে রেখে ইনিংস মেরামত করে চলেছেন।
এভাবে ইনিংস মেরামত করতে করতে তিনি দেখা পেয়ে যান তিন অংকের। কেশভ মহারাজের শর্ট বল পয়েন্টে খেলে ২ রান নিয়েই তিনি শূণ্যে শরীর ভাসিয়ে ক্ষনিকের জন্য যেন আকাশে উড়ে গিয়েছিলেন। তার সেঞ্চুরিতে বলের ব্যবহার ছিল ২৬৯টি। ১০টি চারের সঙ্গে ছিল ১টি ছক্কাও। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এটি ছিল প্রথম কোনো বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি। আগের সর্বোচ্চ রান ছিল কাপ্তান মুমিনুলের ৭৭। শেষ পর্যন্ত আউট হয়েছেন শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ১৩৭ রানে উইলিয়ামসের বলে হার্মারের হাতে স্লিপে ধরা পড়েন।
আজ তৃতীয় দিন শুরুতেই তাসকিনের উইকেট হারানোর পর লিটন দাসকে নিয়ে তিনি ৮২ রানের জুটি গড়নে। মধ্যাহ্নভোজের পর প্রথম ওভারেই লিটন দাস আর কোনো রান যোগ না করেই ৪১ রানে আউট হয়ে যান উইলিয়ামসের বলে বোল্ড হয়ে। ইয়াসির আলীর সঙ্গেও সপ্তম উইকেট জুটিতে জমে যান। কিন্তু জুটিতে ৩৩ রান আসার পর ভুল বোঝাবুঝিতে ইয়াসির আলী রান আউট হলে খুব বেশি দূর যাওয়া সম্ভব হয়নি। এরপর অষ্টম উইকেট জুটিতে মিরাজকে নিয়ে আবার এগুতে থাকেন।
এই জুটিতে রান আসে ৫১ রান আসার পর মিরাজ আউটচ হয়ে যান মুল্ডারের বলে ২৯ রানে। মিরাজ আউট হওয়ার পর মাহমুদুল হঠাৎ করে আগ্রাসী হয়ে উঠেন। শুরু করেন আগ্রাসী ব্যাটিং। কেমন আগ্রাসী ব্যাটিং তার একটা নমুনা হলো মুল্ডারের এক ওভারে মারেন ৪ বাউন্ডারি। হার্মারের এক ওভারে বাউন্ডারি ও ছক্কা। খালেদের সঙ্গে নবম উইকেট জুটিতে যে ২৭ রান আসে তার সব রানই ছিল মাহমুদুলের। খালেদকে অলিভ্রা ফিরিয়ে দেওয়ার পর মাহমুদুলকে আউট করে বাংলাদেশের ইনিংসের যবননিকা টানেন উইলিয়ামস। একর্টু জন্য ক্যারি দ্যা ব্যাট থ্রো দ্য ইনিংস খেলার রেকর্ড গড়তে পারেননি মাহমুদুল।
দ্বিতীয় দিন প্রোটিয়া অফ স্পিনার হার্মার বাংলাদেশের শিবিরে ভীতি ছড়িয়ে ৪ উইকেটই তুলে নেওয়ার পর তৃতীয় দিন শঙ্কা ছিল তাকে নিয়েই। কিন্তু তাকে খুবই সাবধানতার সঙ্গে মোকাবেলা করে কোনো উইকেট নিতে দেননি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। হার্মার ১০৩ রানে ৪টি, উইলিয়ামস ৫৪ রানে ৩টি উইকেট নেন।
এমপি/এমএমএ/