৪ উইকেট হারিয়ে বিপাকে বাংলাদেশ
ডারবান টেস্টের দ্বিতীয় দিন একটুর জন্য বাংলাদেশের হয়েও হয়নি। শেষ বিকালে মাত্র ১৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বেশ ভালোই বিপাকে পড়েছে লাল-সবুজের দেশটি। দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩৬৭ রানে অলআউট করে চা বিরতির আধ ঘণ্টারও কিছু বেশি সময় আগে ব্যাট করতে নেমে সাদমানের (৭) উইকেট হারালেও শেষ সেশন ভালোভাবেই পার করে দিচ্ছিল মাহমুদুল ও নাজমুলের ব্যাটে। কিন্তু এই জুটি ভেঙে যাওয়ার পর ছোট-খাটো একটা মড়ক লাগে। একে একে বিদায় হন নাজমুল ৩৮, মুমিনুল ০, মুশফিক ৭ রানে। আর এতেই বাংলাদেশের রান ১ উইকেটে ৮০ থেকে পরিণত হয় ৪ উইকেটে ৯৪।
বাংলাদেশের ইনিংসে এমন ধস নামান অফ স্পিনার সাইমন হার্মার। তিনি একাই তুলে নেন বাংলাদেশের সবকটি উইকেট। পরে বাংলাদেশ দিন শেষ করেছে ৪ উইকেটে ৯৮ রানে। মাহমুদুল ৪৩ ও নাইট ওয়াচ ম্যান তাসকিন ০ রানে আগামীকাল তৃতীয় দিন ব্যাট করতে নামবেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসে ছড়ি ঘুরিয়েছেন বাংলাদেশের পেসাররা। বিশেষ করে খালেদ ও এবাদত। এই দুইজন ৬ উইকেট তুলে নেন। অফ স্পিনার মিরাজ নেন ৩ উইকেট। একটি ছিল দৃষ্টিনন্দন রানআউট। কিন্তু বাংলাদেশের ইনিংসে বিপরীত চিত্র। দক্ষিণ আফ্রিকার পেসাররা এখানে কোনো প্রভাবই ফেলতে পারেননি। ৪৯ ওভারের মাঝে ২ পেসার অলিভার ও উইলিয়ামস মাত্র ৯ ওভার বোলিং করেছেন। বাকি ৪০ ওভারই করেছেন তিন স্পিনার হার্মার, কেশভ মহারাজ ও এলগার।
অধিনায়ক এলগার করেন অবশ্য মাত্র ১ ওভার। হার্মার ২০ ও মহারাজ ১৯ ওভার বোলিং করেন। এই ৪০ ওভার তারা টানা করেছেন। মহারাজ কোনো উইকেট না পেলেও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সব সময় তটস্থ রেখেছেন। রানই করতে দেননি। তার ১৯ ওভারে রান আসে মাত্র ২৪। সাড়ে ৬ বছর পর টেস্ট খেলতে নামা হার্মারতো রীতিমতো নাকানি-চুবানি খাইয়েছেন। উইকেটের এ রকম আমুল পরিবর্তনে তৃতীয় দিন থেকে কোন দিকে মোড় নেয় তা দেখার বিষয়।
হার্মারের ঘূর্ণিতে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা কুপোকাত হলেও দিনের শেষ ১২ ওভারের আগে সে রকম কোনো আভাস ছিল না। ২৫ রানে ওপেনার সাদমানকে হারানোর পর কিছুটা ধীরে হলেও মাহমুদুল ও নাজমুল মিলে বেশ ভালোই এগুচ্ছিলেন। জুটিতে তারা ৫৫ রান যোগ করেন ২৭.২ ওভারে। এ সময় হার্মারের বলে নাজমুল আউট হয়ে যান। তার ৮৭ বলের ৩৮ রানের ইনিংসে ছিল ২টি করে চার ও ছয়। তখনো বুঝা যায়নি বাংলাদেশের সামনে কি বিপদ অপেক্ষা করছে। হার্মার তার পরের ওভারে অধিনায়ক মুমিনুলকে কোনো রানই করতে না দিয়ে ফিরিয়ে দেন সিলি মিড অফে পিটারসন ক্যাচ ধরলে। অধিানয়ক হিসেবে মুমিনুল এই নিয়ে পঞ্চমবারের মতো শূন্য রানে আউট হলেন। তার সমান ৫ বার শূন্য রানে আউট হওয়ার রেকর্ড আছে মোহাম্মদ আশরাফুলের। দুই জনেই ২৫ ইনিংস খেলেছিলেন। অধিনায়ক হিসেবে এই নোনা কীর্তি এখন এই দুইজনেরই। আস্থার প্রতীক মুশফিকও দিতে পারেননি তার প্রতিদান। ৭ রান করে তিনিও সাজ ঘরমুখি হন উইকেটের পেছনে ভেরাইনা ক্যাচ ধরলে। এক প্রান্তে যখন সঙ্গিরা আসা-যাওয়া করছেন, অপরপ্রান্তে তখন আস্থার প্রতীক হয়ে তা দেখেছেন মাহমুদুল হাসান জয়। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে স্মরণীয় জয়ে অভিষেক টেস্ট খেলতে নেমে ৭৮ রানের দৃষ্টিনন্দন ইনিংস খেলে সবার নজর কাড়ার পর দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে পারেননি ইনজুরির কারণে। এরপর খেলতে নামেন এই টেস্ট। এবারও তার ব্যাটে সেই ধৈর্য্যের ছাপ। ১৪১ বল খেলে ৪ বাউন্ডারিতে ৪৩ রানে অপরাজিত। তার সঙ্গে নাইট ওয়াচম্যান তাসকিন ৬ বল খেলে শূন্য রানে অপরাজিত।
এর আগে বাংলাদেশ বোলারদের কৃতিত্বে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংস বেশ বড় হয়নি। তারা ৩৬৭ রানে অলআউট হয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংস: ৩৬৭/১০, ওভার ১২১ (বাভুমা ৯৩, এলগার ৬৭, এরউই ৪১, হার্মার ৩৮*, ভেরাইনা ২৮, রিকেলটন ২১, পিটারসেন ১৯, মহারাজ ১৯, উইলিয়ামস ১২, অলিভার ১২, মুল্ডার ০।
তাসকিন ২৩-৪-৬৯-০, এবাদত ২৯-১০-৮৬-২,খালেদ ২৫-৩-৯২-৪, মিরাজ ৪০-৮-৯৪-৩, মুমিুনল ৪-০-১৭-০।
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৯৮/৪, ওভার ৪৯ (মাহমুদুল হাসান জয় ৪৩*, নাজমুল হাসান শান্ত ৩৮, সাদমান ইসলাম ৯, মুশফিকুর রহিম ৭, মুমিুনল হক ০, তাসকিন ০*, হার্মার ৪/৪২)
এমপি/আরএ/