আজকের এই দিনেই ৭ গোল খেয়েছিল ব্রাজিল
ছবি: সংগৃহীত
জুলাই মাস এলেই আক্ষেপে পুড়তে হয় ব্রাজিল ভক্তদের। এই মাসটি যে সেলেসাওদের জন্য সুখকর নয় সেটি প্রমাণিত হল আবারো। কেন যেন জুলাই এলেই ছন্দ হারিয়ে ফেলে এক সময়ে শৈল্পিক ফুটবল খেলা দলটি। কাকতালীয়ভাবে আরেকবার ৭ জুলাই কোপা আমেরিকার কোয়ার্টার ফাইনালের শেষ ম্যাচে উরুগুয়ের কাছে হেরে ভক্তদের কাঁদিয়ে বিদায় নিয়েছে নেইমারবিহীন ব্রাজিল।
এই পরাজয়টি বিগত জুলাইয়ের ঘটে যাওয়া ব্রাজিলের হতাশাগুলোকেও পুনরায় প্রতিফলিত করে। ২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপে ৬ জুলাই কোয়ার্টার ফাইনালে বেলজিয়ামের বিপক্ষে হৃদয়বিদারক ২-১ গোলে হেরে যায়। ছন্দে থাকা ব্রাজিল সেই সময় শিরোপা জয়ের অন্যতম ফেবারিট হওয়ায় এই পরাজয়টি ব্রাজিল ভক্তদের কাছে বিশেষভাবে তিক্ত।
আরও পিছে ফিরে দেখা যাক। ২০১৪ ফিফা বিশ্বকাপের ৮ জুলাইয়ের সেমিফাইনালে স্বাগতিক ব্রাজিল জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে হেরে যায়৷ ঘরের মাটিতে আয়োজিত এই ম্যাচটি ব্রাজিলের ফুটবল দুনিয়ায় একটি জাতীয় ট্র্যাজেডি; যা লাখো সমর্থকদের এখনও কাঁদায়। বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে বেদনাদায়ক ফলাফলগুলির মধ্যে এটি অন্যতম৷
২০১৪ সালের ৮ই জুলাই। স্বাগতিক হিসেবে ‘হট ফেভারিট’ ব্রাজিল মারাকানা স্টেডিয়ামে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে সেমিফাইনালে দাঁড়ানো ছিল জার্মানি। ম্যাচের আগে সবাই ধরেই নিয়েছিল জার্মানদের উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে যাবে ব্রাজিল। তবে কে জানতো, সেই দিন ব্রাজিলের ইতিহাসের অন্যতম বিভীষিকাময় দিন হতে চলেছে। সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে শুরু হলো খেলা! দর্শকরা তখনও স্টেডিয়ামে নিজেদের সিটে ভালোভাবে বসেননি। জোয়াকিম লো’র শিষ্যরা প্রথম থেকেই মরিয়া গোলের জন্য।
ম্যাচের ১১ মিনিট চলছে। জার্মানির হয়ে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে প্রথম গোল করেন টমাস মুলার। চোখের পলক ফেলার আগেই ম্যাচের ২৯ মিনিটের মধ্যে ব্রাজিলের জালে জার্মানির ৫ গোল। জার্মানি ৫, ব্রাজিল ০! বিশ্বকাপ ইতিহাসে কোনো সেমিফাইনালের প্রথমার্ধে৫ গোল হয়নি এর আগে।
২৩ মিনিটে মিরোস্লাভ ক্লোসা দ্বিতীয় গোল করার পরই পাশের গ্যালারিতে গায়ে হলুদ জার্সি, গালে জাতীয় পতাকা আঁকা এক তরুণীকে দেখা যায় হাউমাউ করে কাঁদতে। পরের ৭ মিনিটের মধ্যে জার্মানি আরও ৩ গোল করে ফেলার পর সেই কান্না সংক্রামক হয়ে ছড়িয়ে পড়ে গোটা মারাকানা স্টেডিয়ামে।
সেই ম্যাচে ক্লোসা, মুলার, ক্রুস এবং ওজিল; সবাই মিলে যেন ব্রাজিলের সাথে নিছকই মশকরা করছিলেন। পাসিং ফুটবল দলগতভাবে কীভাবে খেলতে হয়, সেটাই যেন ব্রাজিলকে শেখাচ্ছিল জার্মানরা। বিশেষ করে, টনি ক্রুসের দ্বিতীয় গোলটি। ২৬ মিনিটে, ব্রাজিলের ডিফেন্ডারের থেকে বল কেড়ে নিয়ে আক্রমণে জার্মানরা। সেই গোলটি খুব সহজেই ৬ নম্বর জার্সির সামি কাদিরা করতে পারতেন। কিন্তু তিনি নিঃস্বার্থভাবে বলটি পাস দেন ক্রুসকে। বল পেয়ে ভুল করেননি ক্রুস।
জার্মানির সেই বিজয়ী দলের খেলোয়াড় ম্যাটস হামেলস পরে জানিয়েছিলেন, তারা ইচ্ছা করেই বিরতির পর আর কোনো জাদুকরী খেলা খেলতে চাননি। তারা শুধু চেয়েছিলেন ম্যাচটি শেষ করতে। ম্যাটস হামেলস বলেন, আমরা শুধু চেয়েছি খেলায় মনোযোগী থাকতে। খেলার মধ্যে সেলেসাওদের কোনোভাবেই অপমা ন করতে চাইনি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, খেলার মধ্যে সিরিয়াস থাকতে হবে। তবে ব্রাজিলকে অপমান করা হয়, এমন কিছু থেকে বিরত থাকব। খেলার মধ্যে জয়-পরাজয় থাকবেই। তবে প্রতিপক্ষকে সম্মান দেখাতে হবে। আমরা সে কাজ করেছি। দ্বিতীয়ার্ধের পর আমরা কোনো জাদুকরী খেলা দেখাইনি।
৯০ মিনিটে র খেলা শেষে ম্যাচের স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৭-১। খেলার শেষে জার্মানিরা সেলেসাওদের সান্ত্বনা দিয়েছিল। বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে জার্মানির জয়টি ছিল সর্বকালের সবচেয়ে বড় জয়। ব্রাজিলের হয়ে একমাত্র গোলটি করেছিলেন অস্কার।
আজ ব্রাজিলের ফুটবলের ইতিহাসে সেই দুর্বিষহ দিনের এক দশক পূর্তি।