আফগানিস্তানকে পাত্তাই দেয়নি বাংলাদেশ
টি-টোয়েন্টিতে ১৫৫ রান খুব বড় পুঁজি নয়। নিরাপদও নয়। আবার তা নিরাপদ হয়েও উঠতে পারে, যদি বোলাররা উইকেট ত্রাস সৃষ্টি করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে অনেক সময় এ রকম মাঝারিমানের পুঁজিও নির্ভরতা এনে দেয়। এই যেমন আজ মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে। মোট আট উইকেটে ১৫৫ রান করেও বাংলাদেশ জিতেছে বোলারদের দাপুটে ৬১ রান। নাসুমের ঘূর্ণিতে আফগানরা শুরুতেই কপোকাত হয়ে যায়।
নাসুম টানা ৪ ওভার বোলিং করে ১০ রানে ৪ উইকেট তুলে নিয়ে সেই যে ম্যাচের লাগাম টেনে ধরেছিলেন, তা আর পরবর্তিতে আফগান ব্যাটসম্যানদের পক্ষে টেনে ধরা সম্ভব হয়নি। তাদের রান শুধুই দলের বড় হার এড়াতে পালন করে ভুমিকা।
আফগানরা ১৭.৪ ওভারে মাত্র ৯৪ রান করে অলআউট হয়ে যায়। দুই ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ এগিয়ে গেল ১-০ ব্যবধানে। দ্বিতীয় ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ৫ মার্চ শনিবার। ম্যাচ সেরা হয়েছেন নাসুন আহমেদ।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নতুন সেনশেসন নাসুম আাহমেদ। বল হাতে ইনিংসের শুরু করে প্রায়ই দলকে সাফল্য এনে দেন। কখনো কখনো এমনই সাফল্য পান যে তার শুরুর এই সফলতাই ম্যাচের চিত্রনাট্য লেখা হয়ে যায়। ম্যাচের বাকিটুকু হয়ে পড়ে শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। কিংবা হারের ব্যবধান কমিয়ে আনা। আজ তার নেতৃত্বে তাই করে দেখালেন বাংলাদেশের বোলাররা।
আফগানদের মূল শক্তি হলো বোলিং। এই বোলিং দিয়ে তারা প্রতিপক্ষকে কাবু করে বেশি রান জমা করতে দেয়না। এর ফলে ব্যাটসম্যানদের কাজটা সহজ হয়ে যায়। বাংলাদেশের বিপক্ষেও ব্যতিক্রম হয়নি। ৮ উইকেটে বাংলাদেশের করা ১৫৫ রান অতিক্রম করতে হবে। মাঝারি মানের সংগ্রহ। কিন্তু বাংলাদেশ দলে যে নাসুম আহমেদ নামে একজন বাঁহাতি আছেন। যার কাছে ঘরের মাঠে নাবিশ্বাস উঠেছিল অস্ট্রেলিয়া-নিউ জিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের। এবার আফগান ব্যাটসম্যানদের নাবিশ্বাস তুলে ছাড়েন। তার ও ইনিংসের প্রথম ওভারে ১টি, দ্বিতীয় ওভারে ২টি, চতুর্থ ওভারে গিয়ে আরও একটি। পাঁচটিও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আম্পায়ার আউট দিলেও রিভিউ নিয়েং বেঁচে যান আফগান কাপ্তান মোহাম্মদ নবী। ফলে নাসুমের আর ক্যারিয়ারে সেরা বোলিং হয়নি। আগের সেরার সমান হয়ে থাকে তার ১০ রানে নেয়া ৪ উইকেট। এর আগে তিনি নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ১০ রানে নিয়েছিলেন ৪ উইককেট। তবে প্রথম তিনি ৪ উইকেট নিয়েছিলেন অস্ট্রেলয়ার বিপক্ষে ১৯ রানে।
নাসুমের এই সূচনায় উজ্ঝীবিত হয়ে উঠেন দলের বাকি বোলাররাও। সাকিবের বলও খেলতে পারেননি ব্যাটসম্যানরা তিনিও ৪ ওভারে ১৮ রানে তুলে নেন ২ উইকেট। দুই বাঁহাতি স্পিনার মিলে টপ অর্ডারের ছয়জনকে ঘায়েল করার পর দুই বাঁহাতি পেসার শরিফুল ও মোস্তাফিজ মিলে আফগানদের লেজ ছেটে দেন। শরিফুল ২৯ রানে নেনে ৪ উইকটে। মোস্তাফিজের ১ উইকেটের জন্য খরচ ছিল ১৯ রান। আফগানরা বাংলাদেশের ইনিংসের ১০৬ বল খেলেছিল, যেখানে তারা অর্ধেকেরও বেশি ৫৮ বলে কোনো রানই নিতে পারেননি। সবচেয়ে বেশি ডট বল দিয়েছেন নাসুম ১৭টি। এরপর শরিফুল ১৩টি। ১১টি ছিল সাকিবের। এ ছাড়া মোস্তাফিচ ৯টি, মেহেদি ৮টি ডট বল দেন। আফগানদের ইনিংসে তিনজন মাত্র ব্যাটসম্যান দুই অংকের রান করতে পেরেছিলেন।
এর আগে ওয়ানডে সিরিজের মতো টি-টোয়েন্টি সিরিজেও টস হাসে বাংলাদেশের দিকে। কিন্তু ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতেই হারিয়ে বসে দুই ওপেনারকে। বাজে সময় কাটানো মোহাম্বমদ নাঈমকে (১) দিয়ে শুরু। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেয়ে ভালোই শুরু করেছিলেন মুনিম শাহরিয়ার। ১৮ বলে ৩ চারে ১৭ রান করে রশিদ খানের এলবিডব্লির ফাঁদে পড়েন। রিভিউ নিয়েও বাঁঁচতে পারেননি। সাকিব (২) মাহমুদউল্লাহ (১০) দ্রুত বিদায় নিলে বাংলাদেশষ চাপে পড়ে যায়। পঞ্চম উইকেট জুটিতেদ লিটন দাস আফিফকে নিয়ে ৪৬ রানের জুটি গড়লে বাংলাদেশের লড়াকু সংগ্রহের পুঁজি দাঁড়ায়। শেষের দিকে রান বাড়ানোর তাড়া থেকেই প্রথমে লিটন দাস, পরে আফিফও বিদায় নিলে বাংলাদেশের পূঁজি আর বাড়তে পারেনি।
শেষ দুই ওয়ানেডতে ১৩৬ ও ৮৬ রান করার পর লিটন দাস তা ওয়ান ডাউনে নেমে টি-টোয়েন্টিতেও টেনে এনে ৩৪ বলে ফিফটি তুলে নেন। এটি ছিল তার পঞ্চম হাফ সেঞ্চুরি। আউট হন ফজলহকব ফারকীর বলে শট ফাইন লেগে আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে। আফিফ আউট হন আজমতউল্লাহর বলে মোহাম্মদ নবীর হাতে কাভারে ক্যাচ দিয়ে। ইয়াসির আলী ৭ বলে ৮ রান করে রান আউট হয়ে গেলে তিনিও অভিষেককে রাঙাতে পারেননি। রান আউট হয়ে যান মেহেদি হাসানও ৭ বলে ৫ রান করে। উইকেট পতনের এই ধারাবাহিকতায়ও বাংলাদেশ শেষ ৫ ওভারে সংগ্রহ করে ৪৫ রান। উইকেট পড়ে ৪টি। ফজলহক ফারুকী ২৭ ও আজমতউল্লাহ ওমরজাই ৩১ রানে ২টি করে উইকেট। ১টি করে উইকেট নেন রশিদ খান ও কায়েস আহমেদ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ ১৫৫/৮, ওভার ২০ ( লিটন ৬০, আফিফ ২৫, মুনিম ১৭, মাহমুদউল্লাহ ১০, ইয়াসির আলী ৮, মেহেদি হাসান ৫, শরিফুল ৪*, নাসুম ৩*, মোহাম্মদ নাঈম ২, ফজলহক ফারুকী ২/২৭ আজমতউল্লাহ ওমরজাই ২/৩১, রশিদ খান ১/১৪, কায়েস ১/২১)।
আফগানিস্তান ৯৪/১০, ওভার১৭.৪ (নজিবুল্লাহ জাদরান ২৭, আজমতউল্লাহ ওমরজাই ২০, মোহাম্মদ নবী ১৬ কােেয়স আহমেদ ৮৯, হযরতউল্লাহ জাজাই ৬, করিম জানাত ৬, মুজিব উর রহমান ৪,দারউইস রাসুল ২, রশিদ খান ১,রহমানউল্লাহ গুরবাজ ০, ফজলহক ফারকী ০, নাসুম ৪/১০, শরিফুল ৩/২৯, সাকিব ২/১৮, মোস্তাফিজ ১/১৯ )
এমপি/আরএ/এমএমএ/