ঢাকা টেস্ট: তিন সেশনে তিন পক্ষের রাজত্ব
মাঠে প্রতিপক্ষ দুই দল। বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। কিন্তু ঢাকা টেস্টের প্রথম দিন তিন শেসনে রাজত্ব করেছে তিন পক্ষ! প্রথম শেসনে বাংলাদেশ, দ্বিতীয় সেশনে পাকিস্তান। আর তৃতীয় সেশনে প্রকৃতি। ফলে দিনটি কারোরই হয়নি।
প্রথম সেশনে বাংলাদেশ পাকিস্তানের ২উইকেট তুলে নিয়েছিল। পাকিস্তানের রান ছিল ৩১ ওভারে ৭৮। দ্বিতীয় সেশনে তারা আর কোনো উইকেট হারায়নি। এ সময় রান যোগ করে ৮৩। ফলে তাদের রান দাঁড়ায় ২ উইকেটে ৫৭ ওভারে ১৬১। আর তৃতীয় শেসনেতো কোনো খেলাই হয়নি। আলোর স্বল্পতার কারণে আম্পায়াররা বিকাল ৪টা ৬ মিনিটে দিনের খেলা শেষ করে দেন আম্পায়াররা। আলোর স্বল্পতার আগে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিও হয়েছিল। আজ আধ ঘন্টা আগে সকাল সাড়ে ৯ টায় শুরু হবে দ্বিতীয় দিনের খেলা।
ঢাকার আকাশে সকাল থেকেই ছিল কিছুটা মেঘাচ্ছন্ন। সিরিজে প্রথমবারের মতো টস জিতেছিল পাকিস্তান। নিয়েছিল ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত। ৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের পর প্রথম টেস্টেও বাংলাদেশ দল টস জিতে আগে ব্যাট করেছিল।
পাকিস্তান তাদের সেরা একাদশে কোনো পরিবর্তন না আনলেও বাংলাদেশ দল তিনটি পরিবর্তন আনে। সাইফের জায়গায় অভিষেক হয় মাহমুদুল হাসান জয়ের, ইয়াসির আলীর জায়গায় সাকিব আল হাসান আর আবু জায়েদ রাহীর জায়গায় খালেদ আহমেদ। সাকিব দলে ফেরাতে বাংলাদেশ দল ৫ জন বোলার নিয়ে খেলতে নামে। চট্টগ্রামে ছিল ৪ জন বোলার।
আবাহাওয়ার যে অবস্থা ছিল, তাতে করে পেস বোলাররা ফায়দা নেয়ার কথা। কিন্তু বাংলাদেশের দুই পেসার এবাদত হোসেন ও খালদে আহমেদ তা থেকে কোনো ফায়দাই নিতে পারেননি। ফলে পাকিস্তানের দুই ওপেনার আবিদ আলী ও আব্দুল্লাহ শফিক দলকে ভালোই সূচনা এনে দেন। কিন্তু সেখান থেকে পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের লাগাম টেনে ধরেন বাংলাদেশের দুই স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও সাকিব আল হাসান। পরে সেখান যোগ দেন মেহেদী হাসান মিরাজও। ফলে পাকিস্তানের উড়ন্ত সূচনায় ছেদ পড়ে। উইকেটর পতন ঘটে। রান সংগ্রহের গতিতেও ভাটা পড়ে। প্রথম ঘন্টায় যেখান রান সংগ্রহ ছিল ওভার প্রতি ৩.৬, সেখান দিন শেষে তা ছিল ২.৮২। তিন স্পিনারই ওভার প্রতি রান দিয়েছেন ওভার প্রতি তিনের নিচে। সাকিব ১৫ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে উইকেট শুন্য। ওভার প্রতি রান ছিল ২.২০। মেহেদী হাসান মিরাজ ১২ ওভার বোলিং করে ওভার প্রতি ২.৫৮ গড়ে রান দিয়েছিলেন ৩১।
দিনের সবচেয়ে সফল ও একমাত্র উইকেট শিকারি তাইজুল ইসলাম ১৭ ওভারে ৪৯ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন ওভার প্রদি ২.৮৮ গড়ে। কিন্তু দুই পেসারের রান ছিল ওভার অনেক বেশি। এবাদত হোসেন ৯ ওভারে ২৮ রান দেন। তার ওভার প্রতি রান দেয়ার গড় ছিল ৩. ১১। ওভার প্রতি সবচেয়ে বেশি রান দেন খালেদ আহমেদ। ২১ মাস পর টেস্ট খেলতে নেমে তিনি বোলিং করেন মাত্র ৪ ওভার। রান দেন ১৯। ওভার প্রতি রান ছিল ৪.৭৫। এবাদতের সাথে বোলিং সূচনা করে তিনি এই ৪ ওভার বোলিং করেছিলেন। পরে তার হাতে দলপতি মুমিনুল আর বলই তুলে দেননি। দিনের যে ৫৭ ওভার খেলা হয়েছে তাতে দুই পেসার মিলে বোলিং করেছেন মাত্র ১৩ ওভার। বাকি ৪৪ ওভার করেন তিন স্পিনার তাইজুল-সাকিব-মিরাজ।
চট্টগ্রাম টেস্টের সফল দুই ওপেনার আবিদ আলী ওআব্দুল্লাহ শফিক দুই পেসারের ধারহীন বোলিংয়ের কারণে দলকে আবারো ভালো সূচনা এনে দেয়ার ভীত গড়তে থাকেন। কিন্তু স্পিনারদ্বয় আক্রমণে আসার পরই তাদের রান সংগ্রহে স্বাচ্ছন্দতা হারিয়ে যায়। বিশেষ করে তাই তাইজুলের বল খেলতে খুবই সমস্যা হয় দুই ব্যাটসম্যানের। দুইজনই শিকার হন তার। দুই জনই বোল্ড আউট হন। প্রথমে আব্দুল্লাহ শফিক ২৫ রানে। প্রধম টেস্টের দুই (৫২ ও ৭৩) ইনিংসেই ফিফটি করেছিলেন তিনি। আবিদ আলী ফিরে যান ৩৯ রানে। প্রথম টেস্টে তার ব্যাট ছিল আরো সফল। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি (১৩৩) করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে অল্পের জন্য সেঞ্চুরি বঞ্চিত হয়েছিলেন ৯১ রানে আউট হয়ে। এই দুই ব্যাটসম্যান বিদায় নেন ১১ রানের ব্যবধানে। দলীয় ৫৯ ও ৭০ রানে। এরপরই পাকিস্তানের রান সংগ্রহে ভাটা পড়ে। আজহার আলী ও দলপতি বাবর আজম জুটি বাঁধার পর দেখে-শুনে খেলতে থাকেন উইকেট রক্ষা করে। তাইজুলের বলে দুই জনেই বেশ কয়েকবার পরাস্থও হয়েছিলেন। কিন্তু উইকেট হারাতে দেননি। আজহার আলী অতিমাত্রায় রক্ষণশীল। ফলে দিনের খেলা বন্দ হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ৩৬ রান করতে বল খেলেছিলেন ১১২টি। সেখানে বাবর আজম সফরে প্রথমবারের মতো রানের দেখা পান। ফিফটি তুলে নেন মাত্র ৭৫ বলে সাতটি চারের সাথে একটি ছয়ে। ৬০ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছেড়ে আসার সময় তিনি বলের ব্যবহার করেন ৯৯টি। দুই জনে জুটিতে ৯১ রান যোগ করে আব আবার ব্যাট করতে নামবেন।
এমপি/কেএফ/