নিজেদের ফাঁদে আটকা বাংলাদেশ
টস জেতাই কি তাহলে বাংলাদেশের জন্য কাল হলো? আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টানা ৫ ম্যাচে টস জিততে পারেনি বাংলাদেশ। প্রতিবারই টস জিতে আয়ারল্যান্ডের নেওয়া সিদ্ধান্ত বুমেরাং হয়েছিল। ৪ ম্যাচে আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ রানের পাহাড় গড়েছিল। একটি ম্যাচে আয়ারল্যান্ড আবার আগে ব্যাট করতে নেমে মুখ থুবড়ে পড়েছিল।
শুক্রবার (৩১ মার্চ) আয়ারল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করার ম্যাচে টস জিতে বাংলাদেশ ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়ে সেই সিদ্ধান্তকে নিজেরাই বুমেরাং করে তুলে। ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে ১৯.২ ওভারে ১২৪ রান করে অলআউট হয়।
ওয়ানডে সিরিজে প্রথম দুই ম্যাচে আয়ারল্যান্ড টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে উচিত শিক্ষা পেয়েছিল রানের নিচে চাপা পড়ে। পরে শেষ ম্যাচে টস জিতে নিজেরাই ব্যাটিং করতে নেমে আবার মুখ থুবড়ে পড়েছিল। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ১৮৩ রানের জয় ছিল রানের ব্যবধানে সবচেয়ে বড় জয়। আর শেষ ম্যাচে ১০ উইকেটর জয়ও ছিল প্রথম। দ্বিতীয় ম্যাচ বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত না হলে এই ম্যাচও বাংলাদেশ জিততে পারত। কারণ তারা রান করেছিল ৬ উইকেটে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৩৪৯ রান।
টি-টোয়েন্টির প্রথম দুই ম্যাচেও আয়ারল্যান্ড একইভাবে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিং করতে পাঠায়। পরে একইভাবে রানের নিচে চাপা পড়ে। আজ আয়ারল্যান্ড টস জিতলে তারাও হয়তো আগেই ব্যাটিং নিত! সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে হয়তো আর এরকম আকাশ থেকে মাটিতে নেমে আসতে হতো না।
আগের ৫ ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে চরমভাবে বিধ্বস্ত হওয়া আইরিশ খেলোয়াড়দের আজকের শারীরিক ভাষা ছিল অন্যরকম। ছিল জিঘাংসা। ফিরে আসার প্রত্যয়। অসাধারণ বোলিং করে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের বোতলবন্দী করে রাখার পাশাপাশি তাদের ফিল্ডিং ছিল চোখে পড়ার মতো। কোনো ক্যাচ হাতছাড়া হয়নি। দৃষ্টিনন্দন ফিল্ডিং করে একাধিক রান সেভ করেছেন।
বাংলাদেশের আবহাওয়ার পূর্বাভাসের যেমন মিল থাকে না, তেমনি বাংলাদেশের আজকের ব্যাটিংয়েও। প্রথম বলেই লিটন যখন বাউন্ডারি মেরেছিলেন, তখন পূর্ব দিগন্তে সবাই দেখেছিলেন বাংলাদেশের আরেকটি রানবন্যার ইনিংস। সেখানে ঘটে ছন্দপতন। বাটিং পাওয়ার প্লেতেই উইকেট হারিয়ে ফেলে ৪টি। রান উঠে ৪১। এসময় একে একে বিদায় নেন লিটন দাস ৫, নাজমুল হোসেন শান্ত ৪, রনি তালুকদার ১৪, সাকিব আল হাসান ৬ রান করে। সবাই বিগ শট খেলতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন। একের পর এক উইকেট পড়লেও কেউ নিজেদের সংযত করার চেষ্টা করেননি।
ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে ৪ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর দলের এরকম বিপর্যস্ত অবস্থায়ও বাংলাদেশের পরবর্তী ব্যাটসম্যানরা নিজেদের আক্রমণাত্মক ঢংয়ের পরিবর্তন আনেননি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশ যে পরিবর্তনের ডাক দিয়েছে, সেখানে অন্যতম ফর্মুলা হলো আগ্রাসী ক্রিকেট। কিন্তু স্থান-কাল-পাত্র বলে একটা কথা আছে। সেটা আর মানেননি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। তাওহিদ হৃদয় (১২) তাসকিন আহমেদও (০) দলের বিপর্যয়ে সেই আগ্রাসী ক্রিকেট খেলতে গিয়েই আউট হন। অভিষিক্ত রিশাদ ছক্কা মেরে রানের খাতা খুললেও ৭ বলে ৮ রান করে আউট হন।
আগ্রাসী ক্রিকেট খেলেছেন শামীম হোসেন পাটোয়ারীও এবং একমাত্র সফল তিনিই। তার ৪২ বলে ২ ছক্কা আর ৫ চারে করা ৫১ রানের ইনিংস বাংলাদেশের সংগ্রহকে শতরান পার করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। তিনি ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন পরপর ২ বলে ছক্কা ও চার মেরে। হাফ সেঞ্চুরি করতে তিনি বল খেলেন ৪০টি। নাসুমকে নিয়ে অষ্টম উইকেট জুটিতে তিনি সর্বোচ্চ ৩৩ রান যোগ করেন। নাসুম করেন ১৩ রান। শামীম আউট হন শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ফিওন হ্যান্ডের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে।
মার্ক অ্যাডায়ার ২৫ রানে নেন ৩ উইকেট। অভিষিক্ত ম্যাট হ্যামফ্রেস প্রথম বলেই আরেক অভিষিক্ত রিশাদ হোসেনর উইকেটসহ ২ উইকেট নেন ১০ রানে। আজ অধিনায়ক পল স্টার্লিং ৭ জন বোলার ব্যবহার করেন। সবাই উইকেট পান। বাকি ৫ জন নেন ১টি করে উইকেট। তারা হলেন- ফিওন হ্যান্ড, হারি টেক্টর, কার্টিস ক্যাম্ফার, বেন হোয়াইট ও গ্রেথ ডিলানি।
এমপি/এসজি