বিপিএলের মতো খেলার নির্দেশনা ছিল রনির
এবারের বিপিএল শুরু হওয়ার আগে নানা অসংগতির কারণে সফল আয়োজন নিয়ে শঙ্কা ছিল। সেই সঙ্গে ছিল মানসম্পন্ন বিদেশি ক্রিকেটারের অভাবও। সঙ্গে গোদের উপর বিষফোড়া হয়ে দেখা দিয়েছিল ডিআরএস না থাকায়। কিন্তু বিপিএল শুরু হওয়ার পর প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেটের পাশাপাশি স্থানীয় ক্রিকেটারদের নজরকাড়া নৈপুণ্যে সব সমস্যা আড়াল পড়ে যায়। বিপিএলে হয়ে উঠে ইতিহাসের সেরা আসর।
বিপিএলকে এমন চিত্তাকর্ষক করার পেছনে যাদের অবদান ছিল, তাদের একজন ছিলেন রনি তালুকদার। রংপুর রাইডার্সের হয়ে প্রথম ম্যাচেই মারমুখী হাফ সেঞ্চুরি করে যাত্রা শুরু। পরে ১৩ ইনিংস খেলে ৪২৫ রান করে আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক হন। সর্বোচ্চ রান ছিল সিলেট স্ট্রাইকার্সের নাজমুল হোসেন শান্তর, ৫১৬ রান।
৮ বছর আগে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে একটি মাত্র ম্যাচ খেলে বাদ পড়ার পর রনির জাতীয় দলে ফেরার পেছনে এবারের বিপিএলের ফর্মই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। যে কারণে জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নামার আগে তাকে বিপিএলে যেমন খেলেছিলেন, তেমন করে খেলার জনই টিম ম্যানেজমেন্টের নির্দেশনা ছিল। তার প্রতিচ্ছবি তিনি রেখে চলেছেন ইংল্যান্ডের পর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি খুব একটা ভালো করতে পারেননি। খেলেছিলেন ২১, ৯ ও ২৪ রানের ইনিংস। কিন্তু স্বল্পমেয়াদি এই তিনটি ইনিংসেই তিনি নিজের আত্মনির্ভরশীল মনমানসিকতা তুলে ধরতে পেরেছিলেন। যা ভীষণ মনে ধরেছিল কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের। তাইতো তাকে সুযোগ করে দেন আইরিশদের বিপক্ষে। ব্যস এবার আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি রনিকে। প্রথম ম্যাচে ৬৭ রান করার পথে ২৪ বলে করেছিলেন ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি। পরের ম্যাচে করেন ৪৪ রান।
বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) চট্টগ্রামে রনি সাংবাদিকদের তার এরকম খেলার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে ফিরে যান বিপিএলে। বলেন, ‘বিপিএলে উনারা আমার খেলা দেখছেন। ইংল্যান্ড সিরিজের আগে বলল, বিপিএলে যা করছো, একেই জিনিসটা এখানে করবে।’
রনি বলেন, ‘আমার এখানে হারানোর কিছু নেই। শুরু থেকেই আমার খেলার ধরনটা এই রকম ছিল। আমি ইতিবাচক ইন্টেন্ট নিয়ে মাঠে নামি। আমার টিম ম্যানেজমেন্ট আমাকে যেই (ভূমিকা) দিয়েছে সেটা আমার খেলার ধরন।’
৮ বছর পর জাতীয় দলে ফিরে রনি নিজেকে মেলে ধরার পাশাপাশি বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটিতে রানের যে ‘খরা’ চলছিল, তা দূর করতে পেরেছেন। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুইটি ইনিংসে জুটিতে রান এসেছে ৯১ ও ১২৪। তার সঙ্গী লিটন দাসের ব্যাটিংয়ের ভূয়সী প্রশংসা ঝরেছে রনির কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এখন বাংলাদেশ দলের মূল ব্যাটসম্যান (লিটন)। তার সঙ্গে ব্যাটিং করতে পারাটা সত্যি অনেক আনন্দের বিষয়। আমরা সব সময় চেষ্টা করি, স্ট্রাইক রোটেট করার। ওর সঙ্গে ব্যাটিং করলে মনে হবে যে কীভাবে রান হয়ে যাচ্ছে। ব্যাটিং দেখলে মনে হয় যে ব্যাটিং দেখেই যাই। তাকে দেখে অনেক কিছু শেখারও আছে।’
টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের উন্নতি প্রসঙ্গে রনি তালুকদার বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি যে আমাদের একটা পরিকল্পনা থাকে। টিম ম্যানেজমেন্ট আমাদের একটা পরিকল্পনা দিয়ে দেয়। সেই অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করি।’
সেই পরিকল্পনা কী জানতে চাইলে রনি বলেন, ‘খুব সাধারণ পরিকল্পনা হলো ইতিবাচক থাকা। আমরা যেন ইতিবাচক মানসিকতা দেখাতে পারি। টিম ম্যানেজমেন্ট ড্রেসিংরুমে একটা জিনিসই করার চেষ্টা করে সবাই যেন ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলতে পারি। এটাই আমাদের মূল কাজ।’
৮ বছর পর দলে ফিরেছেন। জায়গা এখনো পাকাপোক্ত হয়নি। যেভাবে আক্রমণাত্মক খেলছেন, তাতে করে যখন-তখন আউট হয়ে যেতে পারেন। অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে জাতীয় দলের জায়গা। কিন্তু রনি সেরকম কোনো ভয় করেন না। তার এই ভয় না পাওয়ার কারণ টিম ম্যানেজমেন্ট। তারা তাকে ‘ফ্রি লাইসেন্স’ দিয়েছে এভাবে খেলার।
এমপি/এসজি