টস জিতে আয়ারল্যান্ড, ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ!
ক্রিকেট খেলায় ‘টস’ জয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই টস অনেক সময় পিচ ও কন্ডিশনের উপর বেশি গুরুত্ব বহন করে। পিচে যদি সবুজের (ঘাস) ছোঁয়া থাকে, তাহলে যেকোনো দলই চাইবে টস জিততে। কারণ টস জেতা মানেই বোলারদের হাতে তুলে দেওয়া। প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের উপর ষাঁড়াশি আক্রমণ করা। আবার কন্ডিশন যদি মেঘলা হয় কিংবা বৃষ্টিস্নাত থাকে, তখনো টস জয়টা খুবই বড় ভূমিকা পালন করে। এখানেও টস জেতা দল আগে বোলিং বেছে নেবে। আবার দিবা-রাত্রির ম্যাচেও টস জয় ‘ভাইটাল’ রোল পালন করে থাকে। বোলাররা যাতে শিশিরের পরশ না পান সেজন্য টস জিতে আগে ব্যাটিং নিতে পছন্দ করেন অধিনায়ক।
এবার বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড সিরিজে সেই টস জয় খুব একটা ভূমিকা পালন করতে পারছে না। টস জিতে আয়ারল্যান্ড, ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত সিরিজের পাঁচটির ম্যাচের সব কটিতেই টস জিতেছে আয়ারল্যান্ড। একটি ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়। বাকি সব ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ।
২০১৭ সালে টেস্টে মর্দাদা পাওয়ার পর আয়ারল্যান্ড প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এসেছে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে। ৩টি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির পাশাপাশি খেলবে ১টি টেস্টও।
সিরিজ শুরু হয় ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে। টস জয়টা আইরিশ অধিনায়কের জন্য শাঁখের করাত হয়ে উঠে। কারণ আগে ব্যাটিং করলে বাংলাদেশ দলগত সংগ্রহের নতুন নতুন রেকর্ড গড়ে। আবার পরে নিজেরা ব্যাট করতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে।
আয়ারল্যান্ড প্রথম দু্ই ম্যাচে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিং করতে পাঠিয়েছিল। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ৮ উইকেটে ৩৩৮ রান করে দলগত সংগ্রহের নতুন রেকর্ড গড়ার পর ১৮৩ রানে ম্যাচ জিতেও গড়ে নতুন রেকর্ড। আয়ারল্যান্ড অলআউট হয়েছিল ১৫৫ রানে। পরের ম্যাচে বাংলাদেশ নিজেদের ছাড়িয়ে গিয়ে করে ৬ উইকেটে ৩৪৯ রান। বাংলাদেশের ইনিংসের পর বৃষ্টি শুরু হলে পরে পরিত্যক্ত হয়ে যায় ম্যাচটি। এই ম্যচে মুশফিকুর রহিম ১০০ বলে সেঞ্চুরি করে দেশের হয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরির নতুন রেকর্ড গড়েন। ম্যাচ পরিত্যক্ত হলেও রেকর্ড বুকে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশের এই সব অর্জন।
প্রথম দুই ম্যচের শিক্ষা থেকে আইরিশরা তৃতীয় ম্যাচে টস জিতে আর বাংলাদেশকে ব্যাটিং করতে পাঠায়নি। নিজেরাই ব্যাট করতে নামে আগে। কিন্তু হরিষে বিষাদ নেমে আসে তাদের শিবিরে। বাংলাদেশের পেসত্রয়ী হাসান-তাসকিন-মোস্তাফিজের সংহার মূর্তির সামনে পড়ে মাত্র ১০১ রানে অলআউট হয়ে যায়। বাংলাদেশ সেই রান অতিক্রম করে কোনো উইকেট না হারিয়ে । ১০ উইকেটে ম্যাচ জয় ছিল বাংলাদেশের প্রথম। এই ম্যাচে বাংলাদেশের পেসাররা প্রথমবারের মতো ম্যাচের ১০ উইকেট তুলে নেন। আর হাসান মাহমুদ ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতোনেন ৫ উইকেট।
ওয়ানডে সিরিজের পর আসে টি-টোয়েন্টি সিরিজ। অধিনায়ক বদলের পরও এখানেও টস জয় অব্যাহত থাকে আইরিশদের। অ্যান্ডি বালবার্নির পরিবর্তে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন পল স্ট্যার্লিং। প্রথম দুই ম্যাচেই বৃষ্টি হানা দেয়। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ১৯.২ ওভারে ৫ উইকেটে ২০৭ রান করার পর বৃষ্টি শুরু হয়। পরে বৃষ্টি আইনে আইরিশদের সামনে লক্ষ্য দেওয়া হয় ৮ ওভারে ১০৪ রান। তারা করতে পারে ৫ উইকেটে ৮১। ম্যাচ হারে ২২ রানে। রনি তালুকদার ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরির দেখা পান। তাসকিন ১৬ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং করেন। ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে বিনা উইকেটে ৮১ রান করে দলগত নতুন রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় ম্যাচে টস হয় মেঘাচ্ছন্ন ও দমকা বাতাসের মাঝে। টসের পর শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। এমন কন্ডিশনে টস জেতা দল ফিল্ডিংই বেছে নেবে। কিন্তু এতেও রক্ষা হয়নি আইরিশদের। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের রানের ক্ষুধা তারা আটকে রাখতে পারেননি। ১৭ ওভারে করে ২০২ রান। যে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশ বাংলাদেশ খেত হাবুডুবু, খেলা দেখে মনে হতবুদ্ধি শিশু, সেখানে টানা দুই ম্যাচে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো করে দুইশোর্ধ রানের ইনিংস। এই ম্যাচে বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি দলগত ও ব্যক্তিগত রেকর্ড করে। ২১ বলে দলীয় দ্রততম ৫০ রান।
করার পর দলীয় শতরান করার ক্ষেত্রেও দ্রুততম রেকর্ড করে ৪৩ বল খেলে। লিটন ১৮ বলে করেন দেশের হয়ে দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরি। পরে সাকিব প্রথমবাংলাদেশি বোলার হিসেবে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বার মতো নেন ২৫ রানে ৫ উইকেট। তাদের আগের ৫ উইকেট ছিল ২০ রানে। এই ৫ উইকেট নিয়ে সাকিব আবার নিউ জিল্যান্ডের টিম সাউদির ১৩৪ উইকেট টপকে নিজেকে নিয়ে যান ১৩৬-এ। বাংলাদেশ ম্যাচ জিতেছিল ৭৭ রানে। এই জয়ে বাংলাদেশে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো টানা ৫ ম্যাচ জয়ের মধুর স্বাদ পেল। আগের টানা জয় ছিল ৪টি।
এখন দেখার বিষয় আয়ারল্যান্ড অবশিষ্ট দুই ম্যাচেও টস জিতে কি না এবং সেই দুই ম্যাচের ফলাফল বাংলাদেশের পক্ষে আসে কি না?
এমপি/এসএন