প্রতিকূল কন্ডিশনেও বাংলাদেশের দুরন্ত ব্যাটিং
এ যেন দুঃসাহসিক এক বাংলাদেশ। ভয় নেই, ডর নেই। সমস্ত প্রতিকূলতাকে জয় করে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাওয়াই যেন মূলমন্ত্র। যে মূলমন্ত্রের সামনে সব বাধাই হয়ে উঠছে তুচ্ছ। নতুবা দমকা বাতাস, ঝড়ো বৃষ্টি। এমন কন্ডিশনে পেসাররা হয়ে উঠেন অপ্রতিরোধ্য। ব্যাটসম্যানদের কাঁপন ধরিয়ে দেন। রান করা হয়ে উঠে কঠিন। সেখানে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সামনে এসব যেন কিছুই না। ফর্মের তুঙ্গে থাকায় সব প্রতিকূল পরিবেশ আপন যোগ্যতায় নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসেন তারা। যার ফলাফল শোভা পাচ্ছে দলীয় সংগ্রহে।
বৃষ্টির কারণে ২০ ওভারের ম্যাচ ১৭ নেমে আসে। আর সেই ১৭ ওভারেই বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ২০২ রান। পরপর দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ দুইশোর্ধ্ব রানের বেশি করল। আগের ম্যাচে ১৯.২ ওভারে ৫ উইকেটে করেছিল ২০৭ রান।
৮, ১৩, ১৬, ১৭, ১৯, ১০, ১৬, ৮, ১৬, ৭, ৪, ৪, ১৪, ১৭, ৯, ১১ ও ১৩-এই সংখ্যাগুলো হলো বাংলাদেশের ইনিংসের যথাক্রমে ১ থেকে ১৭তম ওভারে সংগৃহীত রান। ওভারগুলোর প্রতি দৃষ্টি ফেরালে দেখা যায় ৬ ওভারে রান এসেছে দুই অঙ্কের নিচে। যেখানে সর্বনিম্ন রান ছিল ৪। বাকি ১১ ওভারে রান এসেছে ১০ থেকে সর্বোচ্চ ১৯। ১০ থেকে ১২ নম্বর ওভারে ক্রমান্বয়ে আবার বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা রান সংগ্রহের ঝড় বজায় রাখতে পারেননি। এসময় ক্রিজে ছিলেন বিস্ফোরক ব্যাটিং করা লিটন দাস। তিনি খেলেছিলেন ৪১ বলে ৩ ছক্কা ও ১০ চারে ৮৩ রানের ইনিংস। এসময় তিনি আউটও হন। তখন ১২তম ওভারের শেষ বল। হঠাৎ করে রান করতে না পারা লিটন ওয়াইড বল জোর করে খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে টাকারের হাতে ধরা পড়েন। আউট হওয়ার আগে তিনি বাংলাদেশের হয়ে করেন ১৮ বলে দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরি রেকর্ড। আগের রেকর্ড ছিল মোহাম্মদ আশরাফুলের। ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে উইন্ডিজের বিপক্ষে তিনি করেছিলেন ২০ বলে।
লিটন যেভাবে নিখুঁত ইনিংস খেলছিলেন, তাতে করে যদি একটু ধৈর্যের পরিচয় দিতে পারতেন তাহলে প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পেয়ে যেতে পারতেন। আউট হওয়ার পর তাকে কিছুক্ষণ ক্রিজে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। আবার বের হয়ে আসার সময়ও হতাশা ছিল। লিটনের মতো হতাশা ছিল দলগত সংগ্রহেও। অন্য সব ওভারের মতো সেই ৩ ওভারও মেরে খেলতে পারলে বাংলাদেশ ১৭ ওভারেই দলগত সংগ্রহের নতুন রেকর্ড গড়তে পারত! আর পুরো ২০ ওভার খেলতে পারলে সেটিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো। কিন্তু বৃষ্টির কারণে তা আর সম্ভব হয়নি। যেমনটি সম্ভব হয়নি প্রথম ম্যাচেও বৃষ্টির কারণে ৪টি বল খেলতে না পারায়।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের সিরিজ হয়ে উঠেছে দলগত ও ব্যক্তিগত রেকর্ডের ঝুড়ি। সমানতালে হচ্ছে দলগত ও ব্যক্তিগত রেকর্ড। চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্টেডিয়ামে আজ সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে লিটনের দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরি করা ছাড়াও উদ্বোধনী জুটিতে হয়েছে নতুন রেকর্ড। আজ উদ্বোধনী জুটিতে রান আসে ৯.২ ওভারে ১২৪। উদ্বোধনী জুটিতে আগে সর্বোচ্চ রান ছিল ১০২। ২০২১ সালে মোহাম্মদ নাঈম শেখ ও সৌম্য সরকার এই রান করেছিলেন।
বৃষ্টির কারণে খেলা ১৭ ওভারে নেমে আসায় ব্যাটিং পাওয়ার প্লে নেমে আসে ৫ ওভারে। উদ্বোধনী জুটিতে যখন রান আসে নতুন রেকর্ড গড়ে ১২৪, তখন বোঝায় যায় ব্যাটিং পাওয়ার প্লেকে কীভাবে কাজে লাগানো হয়েছে। রান আসে ৭৩।
লিটন-রনির উদ্বোধনী জুটি ভাঙে রনি ৪৪ রান করে আউট হলে। টানা দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে তিনি ওয়াইড বলে মার্ক অ্যাডায়ারের হাতে ধরা পড়েন। তার ২৩ বলের ইনিংসে ছিল ৩টি চার ও ২টি ছক্কা।
রনি আউট হওয়ার পর সাকিব চলে আসেন ক্রিজে। খেলেন ২ ছক্কা ও ৩ চারে ২৪ বলে ৩৮ রানের অপরাজিত ইনিংস। চারে নামা তাওহিদ হৃদয়ের সঙ্গে তিনি তৃতীয় উইকেট জুটিতে যোগ করেন ৪.৫ ওভারে ৬১ রান। তাওহিদ ১৩ বলে ১ ছক্কা ও ৩ চারে ২৪ রানের কার্যকরী ইনিংস খেলেন। সচরাচর তিনে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত শেষ বল খেলতে নেমে ২ রান করেন। বেন ওয়াইট ২৪ রানে নেন ২ উইকেট।
এমপি/এসজি