বাংলাদেশের আজ সুখের গল্প লেখার দিন
সুখ তুমি কি বড় জানতে ইচ্ছে করে-রুনা লায়লার হাওয়া গানটির প্রথম লাইনের সন্ধান পেয়েছে বাংলাদেশ দল। সুখের সাগরে ভাসছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। চারিদিকে সুখের শীতল বাতাস। দেহ-মনে শান্তির পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে। সুখের রাজ্যে ব্যর্থতা উধাও। হারিয়ে গেছে দূরে কোথাও।
এই সুখ একদিনে আসেনি। অনেক কষ্টের সাগর পাড়ি দিয়ে তবেই ধরা দিয়েছে। একটা সময় বাংলাদেশ খেলতে নামলেই হারের নোনা জ্বলে আকন্ঠ ভিজে জিতে। অনেক যাতনার পর তিল তিল করে তবেই ধরা দিয়েছে জয়। শুরুটা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচ জয় দিয়ে। এরপর ৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়। ইংল্যান্ডের পর বাংলার ভুখণ্ডে আগমন আয়ারল্যান্ডের। এখানেও বহমান থাকে জয়ের স্রোতধারা। ওয়ানডে সিরিজ নিজেদের কব্জায় নেয়ার পর টি-টোয়েন্টি সিরিজও শুরু করেছে জয় দিয়ে। সব মিলিয়ে টানা ৭ ম্যাচে জয়। এমন আত্মতৃপ্তি অতীতে বাংলাদেশ পায়নি।
বাংলাদেশ যদিও ঘরের মাঠে এক সময় একে একে ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে ধরাশায়ী করেছে। কিন্তু তা ছিল শুধুমাত্র ওয়ানডে সিরিজকে ঘিরে। এবার সেখানে ‘মাল্টি’ সাফল্য। ওয়ানডের সঙ্গে টি-টোয়েন্টিও । যেভাবে খেলছে বাংলাদেশ, তাতে করে টেস্ট ম্যাচেও জয় পাওয়া হয়তো আর দূরে থাকবে না। আইরিশদের বিপক্ষে ৪ এপ্রিল ঢাকায় শুরু হতে যাওয়া একমাত্র টেস্টেই বাংলাদেশ পেয়ে যেতে পারে কাঙ্খিত জয়! তবে সেটি পরের বিষয়। সেখানে জিতে পূর্ণতা আনতে হলে বাংলাদেশকে আরও কিছু ধাপ পার করতে হবে। সেই ধাপের প্রথমটি হচ্ছে আজ টি-টোয়েন্টি সিরিজে দ্বিতীয় ম্যাচ নিজেদের পকেটস্থ করা, তা হলেই যে সিরিজ হয়ে যাবে বাংলাদেশের।
তাই আয়রল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ নিশ্চিতকরণ ম্যাচে বাংলাদেশ দলের কোনও কার্যক্রমই ছিল না। অন্যান্য সময় ঐচ্ছিক অনুশীলন করে থাকেন কেউ কেউ। মিডিয়াতেও কথা বলেন কেউ একজন। কিন্তু গতকাল (মঙ্গলবার) তার কোনো কিছুই ছিল না। অভাব না থাকলে যা হয়। অভাব থাকলে তো অন্ন সংস্থানের জন্য পরিশ্রম করতে হয়। আর যদি পকেট ভর্তি টাকা থাকে, তা হলে যখন ইচ্ছে খরচ করা যায়। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ক্রমাগত সাফল্যে বাংলাদেশ দলের যেন এখন পকেট ভর্তি টাকা। এই টাকা হলো ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স। যখন প্রয়োজন হবে মাঠে নেমে খেলতে নেমে পারফরম্যান্স দেখিয়ে দেবে। পরিশ্রম করার দরকার কি? এ জন্য মঙ্গলবার ক্রিকেটাররা ঘুরে বেড়িয়েছেন। সময় কাটিয়েছেন। সুখের সময় যেভাবে পার করতে হয়। সাকিব ব্যস্ত ছিলেন যথারীতি একটি পন্যের বিজ্ঞাপনের শ্যুটিং নিয়ে। সর্বত্রে ছিল একটি সুখী পরিবারের ছাপ। নির্ভার, ভাবনামুক্ত।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ যে অপ্রতিরোধ্য ক্রিকেট খেলছে তাতে করে আইরিশরা আজ আর পথের কাঁটা হয়ে উঠার কথা নয়। বাংলাদেশের বিশ্বাসের পালে বাতাস দিচ্ছে টি- টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ৩ ম্যাচের সিরিজে ‘বাংলাওয়াশ’ করা। এটি ছিল বাংলাদেশের কাছে হিমালয় জয় করার মতোই। কারণ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বাংলাদেশের কাছে ছিল রীতিমতো এক ধাঁধা। খেলতে নামলেই তাল-গোল পাঁকিয়ে ফেলত। মাঠে নেমে খেত হাবুডুবু। খেলা দেখে মনে হতো দুগ্ধশিশু।
টানা ৩ ম্যাচ সিরিজ জেতার পর সবার বদ্ধমূল ধারণা হয়, না বাংলাদেশ এখন আর এই ফরম্যাটে দুগ্ধ শিশু নয়। পায়ের তলার মাটি শক্ত করে ফেলেছে। এখান থেকে তাদের সহজে টলানো সম্ভব নয়। সেটি যে আসলেই সম্ভব নয় তা বুঝতে পেরেছে আইরিশরা প্রথম ম্যাচে। লড়াই করতে পারেনি তারা। বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশ জিতেছিল ২২ রান।
এই বৃষ্টি কিন্তু প্রথম ম্যাচে আইরিশদের মান বাঁচিয়েছে। নতুবা ওয়ানডে সিরিজে জয় পাওয়া দুইটি ম্যাচেই বাংলাদেশ রান ও উইকেটের ব্যবধানে জয়ের নতুন রেকর্ড গড়েছে তেমনি প্রথম টি-টোয়েন্টিতেও হতে পারত। সঙ্গে আরও কিছু নতুন রেকর্ডও!
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ ১৯.২ ওভারে ৫ উইকেটে ২০৭ রান করার পর বৃষ্টি আসে। পরে বৃষ্টি আইনে আইরিশদের সামনে নতুন করে টার্গেট দেওয়া হয়েছিল ৮ ওভারে ১০৭ রান। ১০ উইকেট হাত নিয়ে এই রান অতিক্রম করার একটা চ্যালেঞ্জ তারা নিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের বোলাররা অগ্নিমূর্তি ধারণ করলে তাদের সেই চ্যালেঞ্জ বিদ্যুৎ চমকানোর মতোই। এক ঝলক দিয়েই হারিয়ে গিয়েছিল। ২ ওভারে বিনা উইকেটে ৩২ রান। এই শেষ। এরপর ছিল শুধুই বাংলাদেশের পেসারদের উপখ্যান। আইরিশ ব্যাটসম্যানদের সংহারমূর্তির সামনে হাসান মাহমুদ ৪ রান দিয়ে ১ উইকেট নেয়ার পর তাসকিন এক ওভারে ৩ উইকেট তুলে নেন। পরে নেন আরও ১ উইকেট।
ম্যাচে বাংলাদেশের বোলারা যে রকম রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছিলেন, তাতে করে পুরো ২০ ওভার খেলে আইরিশদের হয়তো খুঁজেই পাওয়া যেত না! ম্যাচে রনি তালুকদার করেছিলেন প্রথম ফিফটি (৩৮ বলে ৩ ছক্কা ও ৭ চারে ৬৭ রান)। তাসকিন ১৬ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং করেছিলেন। এমন দুর্বার বাংলাদেশের সামনে আজ আইরিশদের সিরিজ আর মান বাঁচানোর পালা।
নিজেদের মান বাঁচাতে গতকাল তারা টেনিস বল দিয়ে অনুশীলন করেছে। এভাবে করার কারণ বাংলাদেশের পেসত্রয়ী তাসকিন-মোস্তাফিজ-হাসানের কাছ থেকে নিস্তার পেতে। এই তিন গতির বোলারদের যে আইরিশরা এবার খেলতেই পারছেন না। গ্যারি উইলসন জানিয়েছেন, ‘ আমরা এখন পর্যন্ত যা করেছি,তার চেয়ে ভালো করতে হবে আমাদের। দলে আমাদের বেশ কয়েকজন ভালো ক্রিকেটার আছেন। এখন পর্যন্ত তারা তাদের সেরাটা দেখাতে পারেনি। ’এই বিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে আইরিশরা আজ ঘুরে দাঁড়নোর স্পৃহা দেখাচ্ছে। ঘুরে দাঁড়াতে হলে তাদের ব্যাটসম্যানদের যেমন বাংলাদেশের বোলারদের থাবা থেকে বাঁচতে হবে তেমনি তাদের বোলারদের আত্মরক্ষা করতে হবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের থেকে।
আজকের ম্যাচে বাংলাদেশের একাদশে একটি পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। শুধুমাত্র নেট বোলিং দেখে দলে ডাক পাওয়া লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনকে আজ বাজিয়ে দেখতে পারেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। তিনি তাকে দলে নিয়েছেন পরখ করে নেয়ার জন্য। রিশাদকে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ করে দিতে বিশ্রামে পাঠিয়ে দেওয়া হতে পারে বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদকে। আজকের ম্যাচও ব্যাটিং উইকেটে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
এমপি/এসআইএইচ