বৃষ্টির বাধার পরেও বাংলাদেশের রানবন্যা
মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি পেয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। আগের দিন রবিবার (২৬ মার্চ) চট্টগ্রামের পিচ দেখে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বলেছিলেন ফ্ল্যাট উইকেট। মানে ব্যাটিং স্বর্গ। এমন উইকেটে টস জিতে ব্যাটিং বেছে নিতে দ্বিতীয়বার অধিনায়ক চিন্তা করবেন না। কিন্তু নিজেদের ১০০তম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান টস জিততে পারেননি। কিন্ত টস না জিতেও তিনি কাঙ্ক্ষিত ব্যাটিং পেয়ে যান।
আর ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে কয়েকটি নতুন রেকর্ড করে ৫ উইকেটে ২০৭ সংগ্রহ করার পর বৃষ্টি আসলে শেষ ৪ বল আর খেলতে পারেনি। এই ৪ বল খেলতে পারলে বাংলাদেশ আগে ব্যাট করে দলগত সংগ্রহের নতুন রেকর্ডও গড়তে পারত। আগে ব্যাট করে বাংলাদেশের আগের সর্বোচ্চ রান ছিল ২১১। ২০১৮ সালে মিরপুরে উইন্ডিজের বিপক্ষে ৪ উইকেটে করেছিল এই রান। তবে এর চেয়ে বেশি রানও বাংলাদেশের আছে পরে ব্যাট করে। ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার করা ২১৪ রান বাংলাদেশ ১৯.৪ ওভারে অতিক্রম করেছিল ৫ উইকেটে ২১৫ রান করে।
আয়ারল্যান্ডকে কব্জায় পেয়ে বাংলাদেশ দলগত ও ব্যক্তিগত সংগ্রহের রেকর্ডগুলো বেশ ঝালাই করে নিচ্ছে। বৃষ্টির কারণে আজ অল্পের জন্য দলগত সংগ্রহ হাতছাড়া হলেও আরও কয়েকটি দলগত সংগ্রহের রেকর্ড হয়েছে। ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে দুই ওপেনার রনি তালুকদার ও লিটন দাস ৮১ রান যোগ করে নতুন রেকর্ড গড়েন। অ্যাডায়ারের করা পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে রনি তালুকদার ৬, ৪, ৪ ও ৪ মেরে আগের রান ছাড়িয়ে নতুন রেকর্ড গড়তে বড় ভূমিকা পালন করেন। আগের রেকর্ড ছিল ২০১৩ সালে মিরপুরে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪ উইকেটে ৭৬ রান। নিউ জিল্যান্ডের ৫ উইকেটে ২০৪ রানের জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত যেতে পেরেছিল ৯ উইকেট হারিয়ে ১৮৯ রানে।
আজকের ম্যাচটি ছিল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের ১০০তম ম্যাচ। এমন ম্যাচে রনি তালুকদার তার ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন মাত্র ২৪ বলে। ক্যারিয়ারের পঞ্চম ম্যাচে এসে রনি হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন হোয়াইটকে বাউন্ডারি মেরে। ৩৮ বলে ৩ ছক্কা ও ৭ চারে ৬৭ রান করে হিউমের বলে বোল্ড হন।
ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রিত হয়ে বৃষ্টির আগে খেলা বন্ধ হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ৯টি ছক্কা ও ১৭টি চার মেরেছিলেন। তারপরও ডট বল ছিল ৩৪টি। বৃষ্টির কারণে যেখানে থেমেছে বাংলাদেশের ইনিংস, সেই রান তখন আরও বেশি হতে পারত। কিন্তু না হওয়ার কারণ ১৫ ওভারের পর আইরিশ বোলাররা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের আর সেভাবে রান করতে দেননি। ১০ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ১১৬। ১৫ ওভার শেষে রান বেড়ে দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ১৬৫। সেখানে বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার সময় ৪.২ ওভার খেলে রান যোগ করতে পেরেছে ৪২। ১৬তম ওভারে ৭, ১৭তম ওভারে ৮, ১৮তম ওভারে ৮, ১৯তম ওভারে ১৩ ও ২০তম ওভারের প্রথম ২ বলে আসে ৫ রান।
দলীয় শততম ম্যাচে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রিত হওয়ার পর রনি ও লিটন আগ্রাসী ব্যাটিং শুরু করেন। কেউ কারও চেয়ে কম ছিলেন না। দুইজনেই সমান তালে এগিয়েছেন। যদিও লিটনের ৩৯ রানের সময় রনির রান ছিল ১৯। কিন্তু তখনই রনি ৩ চার ও ১ ছক্কার সঙ্গে ১ রান নিয়ে ১৯ রান সংগ্রহ করে নিজের রানকে লিটনের কাছাকাছি ৩৮-এ নিয়ে যান। এসময় লিটনের রান ছিল ৪০।
ব্যাটিং পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পরও রান বাড়ানোর তাড়না থেকে লিটন আউট হয়ে যান ৪৭ রানে। ক্রেইগ ইয়াংর স্লোয়ার ডেলিভারিতে ড্রাইভ খেলতে গিয়ে মিড অফে তিনি ধরা পড়েন অধিনায়ক পল র্স্টালিংয়ের হাতে। তার ২৩ বলের ইনিংসে ছিল ৩টি ছক্কা ও ৪টি চার।
লিটন আউট হওয়ার পর নাজমুল হোসেন শান্ত (১৩ বলে ১ ছক্কায় ১৪), প্রথমবারের মতো চারে নেমে শামীম হোসেন পাটোয়ারী (২০ বলে ১ ছক্কা ও ২ চারে ৩০), তাওহিদ হৃদয় (৮ বলে ১ ছক্কায় ১৩), সাকিব আল হাসান (১৩ বলে ৩ চারে অপরাজিত ২০) খেলেন ছোট ছোট ইনিংস। মিরাজ ১ বলে খেলেই করেন ৪ রান। তাদের এই সংগ্রহ যা বাংলাদেশের রানকে চতুর্থবারের মতো দুইশ পার করতে ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশের এই রান এখন তৃতীয় সর্বোচ্চ রান।
আয়ারল্যান্ডের ক্রেইগ ইয়ং ৪৫ রানে নেন ২ উইকেট। ১টি করে উইকেট নেন হ্যারি টেক্টর, গ্রায়াম হিউম, মার্ক অ্যাডায়ার।
এমপি/এসজি