ভালো করতে পারলে আফিফের জন্য জাতীয় দলের দরজা খোলা
ঘরোয়া ক্রিকেট নজর কাড়া নৈপুণ্য দেখিয়ে জাতীয় দলের অন্ধরে প্রবেশ করেছিলেন আফিফ হোসেন। কিন্তু তার শুরুটা ভালো ছিল না। প্রথমে টি-টোয়েন্টিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কোনো রান করতে পারেননি। ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করেছিলেন ৭ রান। কিন্তু শুরুর এই ব্যর্থতা তিনি পরে ঢেকে দিয়েছিলেন নিজের সাবলীল ব্যাটিং দিয়ে। হয়ে ওঠেন দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
কয়েকটি ম্যাচে দলের জয়ে রাখেন বড় ভুমিকা। এর মাঝে ছিল নিশ্চিত হারা ম্যাচও। কিন্তু সেই আফিফ হোসেন তার প্রতি দলের সেই নির্ভরতা আর ধরে রাখতে পারেননি। ব্যর্থতা এসে জগদ্দল পাথরের মতো ঘাড়ে চেপে বসে। অনেক চেষ্টা করেও সরাতে পারেননি। পরে সেই ব্যর্থতাকেই কাঁধে নিয়ে দল থেকেই বাদ পড়েন। এখন জাতীয় দলে আবার তাকে ফিরতে হলে করতে হবে ঘরোয়া ক্রিকেটে রান। তবেই যদি খোলে দরজা!
আফিফ প্রথমে জায়গা হারান ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচের একাদশে। এরপর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম দুই ওয়ানডে ম্যাচে দলে থাকলেও খেলার সুযোগ পাননি কোনো ম্যাচ। শেষ ম্যাচেতো তাকে বাদই দেওয়া হয়। এরপর বাদ পড়েন একই দলের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজেও। এই সিরিজ শুরু হবে আগামীকাল ২৭ মার্চ।
আফিফের দল থেকে বাদ পড়া নিয়ে ছিল ধোঁয়াশা। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডে দল থেকে আপিফ বাদ পড়ার পর প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু জানিয়েছিলেন, বিশ্রামে। তাই প্রিমিয়ার লিগ খেলার জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার পরদিনই তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকেই বাদ পড়নে আফিফ।
এভাবে আফিফের বাদ পড়াটা ছিল অবাক করার মতোই। এটা ঠিক যে তার ব্যাট কথা বলছিল না। কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে তার কয়েকটি ম্যাচ জেতানো ইনিংসের পাশাপাশি নিচের দিকে নেমে দ্রুত রান তুলে দলকে সহায়তা করার ক্ষেত্রে তার ভুমিকা ছিল খুব ভালো। যদিও এভাবে তিনি সব সময় রান তুলতে পারেননি। ব্যর্থও হয়েছেন। সেই ব্যর্থতারই ‘বলি’ হলেন আফিফ।
অনেকেই মনে করেছেন হাথুরুসিংহে না আসলে আফিফকে হয়তো নির্বাচকরা এখনই বাদ দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করতেন না। কিন্তু হাথুরুসিংহের প্রেসক্রিপশনে তাকে বাদ দিতেই হয়েছে। এটা আরও পরিষ্কার হয়ে গেছে আজ চট্টগ্রামে ৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজকে সামনে রেখে সংবাদ সম্মেলনে আফিফ প্রসঙ্গে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের বলা কথায়।
তিনি বলেন, আফিফকে বাদ দেওয়া হয়েছে পারফরম্যান্সের কারণে, চেহারা দেখে নয়। যখন কেউ দল থেকে বাদ পড়ে, তখন পারফরম্যান্সের কারণেই বাদ পড়ে। কখনো কখনো আমরা কৌশলগত কারণেও কাউকে কাউকে বাদ দিয়ে থাকি। যেমন আমরা যদি কাউকে পরখ করে নিতে চাই, তখন। এ রকম কারণেও কেউ কেউ বাদ পড়ে থাকেন।
আফিফ বাদ পড়লেও তার জন্য দরজা খুলাই বলে জানান হাথুরুসিংহে। তবে সেই দরজা দিয়ে ডুকতে হলে আফিফকে পারফরম করতে হবে ঘরোয়া ক্রিকেটে। তারপর বিবেচনা। হাথুরুর ভাষ্য ছিল এ রকমই।
এবারের বিপিএলে আফিফ চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে ১২ ম্যাচ খেলে রান করেন ৩৪৪। হাফ সেঞ্চুরি ছিল দুইটি। সর্বোচ্চ রান ছিল অপরাজিত ৬৯। স্ট্রাইকরেট ১২৮.৩৫।
জাতীয় দলের হয়ে সর্বশেষ হাফ সেঞ্চুরি এসেছিল গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুবাইয়ে অপরাজিত ৭৭ রানের ইনিংস। এই শেষ। এরপর তার ব্যাটে নেমে আসে খরা।
প্রচণ্ড খরার সময় সবাই যখন একটু বৃষ্টির জন্য হাহাকার করতে থাকেন, কিন্তু বৃষ্টি আর আসে না। আফিফের অবস্থা হয়েছিল অনেকটা সে রকমই। অপরাজিত ৭৭ রানের ইনিংস খেলার পর তিনি খেলেন ১২টি ম্যাচ। সর্বোচ্চ রান এসেছিল অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৩৮। তার অপর ইনিংসগুলো ছিল ১৮, ২৫ ২৪, ৪, ১১, ১, ২৯,৩ অপরাজিত ২৪, অপরাজিত ১৫ ও ২।
এখন পর্যন্ত তিনি ৬২ ম্যাচ খেলে রান করেছেন ১০২০। হাফ সেঞ্চুরি আছে ৩টি। সর্বোচ্চ আরব আমিরাতের বিপক্ষে অপরাজিত ৭৭।
ওয়ানডেতে অবস্থা ছিল আরও শোচণীয়। গত বছর অগাস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অপরাজিত ৮৫ রানের ইনিংস খেলার পর ভারত ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেন ৬টি ম্যাচ। এই ৬টি ইনিংস ছিল যথাক্রমে ৬, ০,৮, ৯, ২৩ ও ২৫।
হাথুরু বলেছেন, ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো করতে পারল আফিফ জাতীয় দলে আবার ফিরতে পারবেন। জাতীয় দলে থেকে বাদ পড়ার পরদিনই তিনি প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে আবাহনীর হয়ে মোহামেডানের বিপক্ষে খেলতে নেমেই করেছিলেন ৪৯ রান। এর আগে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ শুরু হওয়ার আগে প্রিমিয়ার লিগের শুরুর দিন আবাহনীর হয়ে ব্রাদার্সের বিপক্ষে করেছিলেন ৬৫।
এমপি/এমএমএ/