মনস্তাত্ত্বিক নির্ভরতাই হাথুরুর আসল মন্ত্র
হাথুরুসিংহের হাতে যেন যাদুর কাঠি আছে। তার পরশে জেগে উঠে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ২০১৪ সালে প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০১৫ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপে ক্রিকেটে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা, ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমি ফাইনাল খেলা, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে টেস্ট জয়, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজেদের শততম টেস্টে জয় পাওয়া, ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠা সবই ছিল হাথুরুসিংহের ২০১৪ সালে প্রথম মেয়াদের দায়িত্বকালীন।
এবার নতুন করে দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশ দল আছে সেই সাফল্যের মাঝেই। ইংল্যান্ডে কাছে প্রথম দুই ম্যাচে হেরে ওয়ানডে সিরিজ হারলেও শেষ ম্যাচ জিতে প্রথম জয়ের দেখা পায়। এরপর আর কোনো ম্যাচ হারেনি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছিল ‘বাংলাওয়াশ’ করে। এরপর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে ২-০ ব্যবধানে। বৃষ্টির কারণে দ্বিতীয় ম্যাচ পরিত্যক্ত না হলে এই ম্যাচও জয় পেত বাংলাদেশ।
আগামীকাল (২৭ মার্চ) আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে শুরু হবে ৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স বিবেচনায় এই সিরিজও বাংলাদেশ জিতবে বলে সবাই আশা করছেন। কোচের প্রত্যাশায়ও একই রকম। কিন্তু হঠাৎ করে এ রকম অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠার কারণ কী বাংলাদেশের। পরিবর্তনের পেছনে কী কাজ করছে?
টি-টোয়েন্টি সিরিজকে সামনে রেখে আজ চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলনে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের দিকে ছুটে গিয়েছিল এ রকমই প্রশ্ন। হাথুরুসিংহের সহজ জবাব: ‘তেমন কোনো কিছু পরিবর্তন হয়েছে বলে আমি মনে করি না। একই খেলোয়াড়। একই রকম স্কিল। শুধু ড্রেসিং রুমের পরিবেশের কিছু পরিবর্তন হয়েছে। আমরা যেভাবে এবং যা নিয়েই কথা বলি না কেন,আমি খেলোয়াড়দের মানসিকভাবে নির্ভার রাখার চেষ্টা করি। আমি তাদের এই মর্মে নিশ্চিত করেছি যে তোমরা সফল বা ব্যর্থ যাই হউ না কেন, সবার গুরুত্ব আমার কাছে সমান।’
আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, যদি এমন পরিবেশ আমরা তৈরি করতে পারি, তাহলে খেলোয়াড়রা তাদের সেরাটা দিতে পারবে। যদি তারা সেরাটা দিতে নাও পারে, তাহলেও বলব সব ঠিকঠাক আছে। এটা ছাড়া আর কোনও কিছু পরিবর্তন হয়নি। আগে কি হয়েছে আমি জানি না, তবে তাদের স্কিল একই, যোগ করেন তিনি।
হাথুরুসিংহে ‘মনস্তাত্ত্বিক’ বিষয়টির উপর গুরুত্ব দিয়েছেন বেশি। তিনি বলেন, ‘এটি খুব বড় একটি শব্দ। হয়তো বোঝা যায় না, কিন্তু এটির পেছনে অনেক কিছু কাজ করে। যেমন পরিবেশ তৈরি করা। ফলাফল নিয়ে না ভাবা, নির্ভার থাকা।
তিনি বলেন, ‘আমাকে কয়েকজন কোচ বলেছেন, খেলোয়াড়দের ভেতরে বড় পরিবর্তন এসেছে। যেটা আমি নিজে থেকে তৈরি করতে চেয়েছিলাম।’
দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশের উপচে পড়া সাফল্যে অনেকেই এটিকে হাথুরুর যুগ বলেও মন্তব্য করছেন। কিন্তু এখানে বেজায় আপত্তি হাথুরুসিংহের। তিনি বলেন, আমি নতুন যুগ হিসেবে দেখছি না। আমরা আগামীতেও এভাবে ক্রিকেটে খেলতে চাই। আক্রমণাত্বক ক্রিকেট খেলতে চাই।’
আক্রমণাত্বক ক্রিকেটের আবার ব্যাখ্যা দিয়ে হাথুরু বলেন, আক্রমণাত্মক মানে এই নয় যে ক্রিজে গিয়েই মেরে খেলতে হবে। সব দিকে দিয়েই আমরা আক্রমণাত্মক। দল নির্বাচন থেকে শুরু করে, ফিল্ডিং, শারীরিক ভাষা, ব্যাটিং এমনকি কৌশিলগত দিক দিয়েও।’
তিনি বলেন, ‘আমি ফল নিয়ে ভাবি না। নিজেদের সেরা খেলাটা খেলতে চাই। আমরা যখন স্বাধীনভাবে খেলতে পারব, দল তখন সব সময় ভালো করতে পারবে।’
এমপি/এমএমএ/