আয়ারল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে বাংলাদেশের ছেলেখেলা
আয়ারল্যান্ড দলের বাংলাদেশ সফরে টস জয় হয়ে উঠেছে শাঁখের করাত। পড়েছে উভয় সংকটে। প্রথম দুই ম্যাচে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে চরম খেসারত দিয়েছিল। বাংলাদেশ নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়ার মিশনে নেমে গড়েছিল নিজেদের দলগত সংগ্রহের নিত্য নতুন রেকর্ড। আইরিশ বোলারদের নিয়ে ছেলেখেলায় মেতে উঠে বাংলাদেশ দল প্রথম ম্যাচে করেছিল ৮ উইকেটে ৩৩৮, পরের ম্যাচে ৬ উইকেটে ৩৪৯।
আজ (২৩ মার্চ) শেষ ওয়ানডে ম্যাচে তাই আইরিশরা টস জিতে আর বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠায়নি। নিজেরাই নামে ব্যাট করতে। কিন্তু এতে করেও তাদের বিপদ কাটেনি। এবার তাদের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে ছেলেখেলায় মেতে উঠেন বাংলাদেশের বোলাররা। মাত্র ১০১ রানে অলআউট হয় আয়ারল্যান্ড। ওভার খেলে ২৮.১টি। এটিই বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে আয়ারল্যান্ডের সর্বনিম্ন সংগ্রহ। হাসান মাহমুদ ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো নেন ৩২ রানে ৫ উইকেট। এটি তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং।
আগের দিন বুধবার বাংলাদেশ দলের পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড দলের পেসারদের নিয়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন। দলের সব পেসারদের নিয়ে সিলেটে সিরিজের শুরুতে তোলা একটি ছবি নজর কাড়ে সবার। ডোনাল্ডের সেই বিশ্বাসের চূড়াকে এবারও আরও উঁচুতে নিয়ে গেছেন দলের তিন পেসার হাসান মাহমুদ-তাসকিন আহমেদ-এবাদত হোসেন। আজ আইরিশ ব্যাটসম্যানদের বধ কাব্য নামায় বল হাতে ত্রাস সৃষ্টি করতে নেমেছিলেন তিন পেসার। তিনজন মিলে ছারখার করে দিয়েছেন অতিথিদের ব্যাটিং লাইন। তাদের তোপে পড়ে ২২ গজে হাবুডুবু খেয়েছেন আয়ারল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা। ১০ উইকেটই ভাগাভাগি করে নিয়েছেন তিন পেসার। হাসান মাহমুদ ৩২ রানে ৫টি, তাসকিন ২৬ রানে ৩টি ও এবাদত ২৯ রানে নেন ২টি উইকটে নেন। এর মাঝে আবার তিন জনেরই ছিল ওভারে জোড়ায় জোড়া উইকেট। এই প্রথম ওয়ানডেতে টাইগার পেসাররা ১০ উইকেট শিকারের কীর্তি গড়েছে।
তিন পেসারের রাজত্বের কারণে দুই স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ ও নাসুম আহমেদ তেমন একটা বোলিং করারই সুযোগ পাননি। নাসুম ৩ ও মিরাজ ১ ওভার বোলিং করেন। যে কারণে ১০০ ওভারে খেলা হয়তো ৫০ ওভারেই শেষ হয়ে যেতে পারে! আইরিশদের ২৮.১ ওভারে করা ১০১ রান পাড়ি দিতে এখন দেখার বিষয় বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা কত ওভার ব্যবহার করেন।
এই সিরিজের আগে কোচ হাথুরুসিংহে আগেই বলেছিলেন সিরিজ হবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার। এই পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রথম দুই ম্যাচে ব্যাটসম্যানরা ১০০ তে ১০০ নম্বরই পেয়েছেন। বোলাররা প্রথম ম্যাচে ১০০ পেলেও দ্বিতীয় ম্যাচে তারা আর পরীক্ষা দিতে পারেননি। বৃষ্টি এসে তাদের সুযোগ বঞ্চিত করেছিল। আজ আবার শেষ ম্যাচে সুযোগ পেয়ে প্রথম ম্যাচের চেয়ে তারা নিজেদের ছাড়িয়ে যান। প্রথম ম্যাচে আয়ারল্যান্ড ১৫৫ রানে অলআউট হয়েছিল। আজ তাদের মাত্র দুই ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের রান করেন। কার্টিস ক্যাম্পার ৩৬ ও লরকান টাকার ২৮ রান করেন।
পরীক্ষা-নিরীক্ষার ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় ম্যাচে মোস্তাফিজের পরিবর্তে সুযোগ পেয়েছিলেন হাসান মাহমুদ। দ্বিতীয় ম্যাচে বৃষ্টির কারণে আইরিশরা ব্যাটিং করতে না পারার কারণে হাসান মাহমুদও নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পাননি। আজ সুযোগ পেয়ে সেটিকে তিনি এমনভাবেই কাজে লাগান যে, তার তোপে পড়েই ভূমিধসের মতো আইরিশদেন টপ অর্ডার ভেঙে পড়ে। টপ অর্ডারের প্রথম তিন শিকারই ছিল তার। এসময় একে একে ফিরে যান স্টিফেন ডোহেনি (৮), পল স্টার্লিং (৭) ও হ্যারি টেক্টর (০)। দলের রান তখন ৮.৪ ওভারে ৩ উইকেটে ২২। পরের ওভারে তাসকিন অ্যান্ডি বালবার্নিকে (৬) আউট করে আইরিশদের অবস্থা আরও শোচনীয় করে তুলেন।
লরকান টাকার ও কার্টিস ক্যাম্পার জুটি বেঁধে দলের উইকেট পতন রোধ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। বেশ সফলও হন জুটিতে ৯.৩ ওভারে ৪২ রান যোগ করে। কিন্তু তাদের মধুর সময় বেশিক্ষণ থাকেনি। হাসান মাহমুদ ত্রাস ছড়াবেন তাসকিন উইকেট পাবেন, আর এবাদত চেয়ে চেয়ে দেখবেন, তা কি হয়? তাইতো তিনিও এগিয়ে এলেন উইকেট পাওয়ার মিছিলে। আঘাত হানেন মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর চেষ্টায় থাকা টাকার-টেক্টর জুটিতে। টাকারকে ২৬ রানে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেও সন্তুষ্ট থাকতে পারেননি এবাদত। পরের বলেই জ্য়ে ডকরেলকে ফিরিয়ে দেন স্টাম্পে আঘাত করে।
এবাদতের এই আঘাতের পর আবার আইরিশ শিবিরে ধস নামে। ইনিংসের শুরুর মতো পতন শুরু হয় আবার। ব্যাটসম্যানরা আবার আসা-যাওয়ায় শামিল হন। তাসকিন হানেন জোড়া আঘাত। ফিরিয়ে দেন ম্যাকবার্নি (১) ও অ্যাডায়ারকে (০)। এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে তা চেয়ে চেয়ে দেখতে থাকেন ক্যাম্পার। কিন্তু এটি আবার পছন্দ হয়নি হাসান মাহমুদের। ৪ চারে ৩৬ রানে তাকে সঙ্গীদের কাছে পাঠান তাসকিনের সহায়তায়। ৪ উইকেট নিয়ে তিনি ক্যারিয়ারের আগের ৪৭ রানে নেওয়া ৩ উইকেট ছাড়িয়ে যান। পরে গ্রায়াম হিউমকে আউট করে প্রথমবারের মতো এক বোলারের চির আরাধ্য ৫ উইকেট পূর্ণ করেন।
এমপি/এসজি