নাঈম শেখের সেঞ্চুরিতে মোহামেডানকে পাত্তাই দিল না আবাহনী
ফুটবল, ক্রিকেট কিংবা হকি আবাহনী-মোহামেডানের ম্যাচ মানেই ছিল অন্যরকম উত্তেজনায় ঠাসা। সেই দিন এখন গত। মোহামেডান-আবাহনীর ম্যাচ এখন আর বানের পানির মতো দর্শকদের টানে না। উতলা করে না। অনেকটা নীরবেই হয়ে যায় ম্যাচ।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) এবারও তাই হয়েছে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে জাতীয় দলের সিরিজের মাঝেই আজ (২২ মার্চ) মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচটি ছিল অনেকটা একপেশে। যেখানে আবাহনীর সামনে দাঁড়াতেই পারেনি মোহামেডান। ৬ উইকেটে ম্যাচ জিতে আবাহনী চলতি লিগে তুলে নিয়েছে টানা তৃতীয় জয়। বিপরীতে সমান ম্যাচে মোহামেডান এখনো জয়শূন্য। বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হওয়া ম্যাচ থেকে তারা একটি পয়েন্ট পেয়েছিল।
আবাহনীর সহজ জয়ের নায়ক ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম শেখ। তিনি অপরাজিত ১১০ রানের ইনিংস খেলে ১৫ ওভার থাকতেই আবাহনীকে জয় এনে দেন ৬ উইকেটে। মোহামেডানের করা ৮ উইকেটে ২৩৫ রান, আবাহনী অতিক্রম করে ৩৪.৩ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ২৩৬ রান করে।
আবাহনী যে এত সহজে ১৫.৩ ওভার ও ৬ উইকেট হাতে রেখে ম্যাচ নিজেদের করে নেবে, সেরকম সূচনা ছিল না। ২৩৫ রান অতিক্রম করার লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট করতে নেমে খুব দ্রুতই হারায় ওপেনার এনামুল হক বিজয় (১৭), মাহমুদুল হাসান (২৪) ও ইন্দ্রজিত বাবাকে (৯)। তখন দলের রান ছিল ১৭.১ ওভারে ৩ উইকেটে মাত্র ৮৬। জয় থেকে তখনো ১৫০ রান দূরে। ওভার বাকি ৩২.৫টি। সেই রান করতে আবাহনী উইকেট হারায় মাত্র ১টি আর ওভার খেলে ১৭.২টি। আর এটি সম্ভব হয়েছিল মোহাম্মদ নাঈম শেখের কারণে। এসময় তাকে দারুণ সঙ্গ দেন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ওয়ানডে ম্যাচে দল থেকে বাদ পড়া আফিফ হোসেন। দুইজন চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৯২ রান যোগ করেন মাত্র ১১.৫ ওভারে।
আফিফ ১ রানের জন্য হাফ সেঞ্চুরি বঞ্চিত হয়ে আউট হন ৪৯ রানে সৌম্য সরকারের বলে সাইফুল ইসলাম রুবেলের হাতে ক্যাচ দিয়ে। আফিফ আউট হওয়ার সময় আবাহনীর রান ছিল ৪ উইকেটে ১৭৮। জয়ের বাকি কাজ সারেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে নিয়ে। দুইজনে ৫.৩ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ৫৮ রান সংগ্রহ করেন। ম্যাচসেরা নাঈম শেখ ৮৬ বলে ৪ ছক্কা ও ১১ চারে ১১০ রান করে অপরাজিত থাকেন। সাইফুল ইসলাম রুবেলের বলে ডিপ এক্সটা কাভারে চার মেরে ৫৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি ও কামরুল ইসলাম রাব্বির এক ওভারে ৪, ৪, ও ৬ মেরে ৮৭ রান থেকে একলাফে সেঞ্চুরি করেন ৮০ বলে। মোসাদ্দেক অপরাজিত থাকেন ১৮ বলে ২৫ রানে। মোহামেডানের হয়ে একটি করে উইকেট নেন সৌম্য, এনামুল হক জুনিয়র, রুহেল মিয়া ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
এর আগে মোহামেডান ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেটে যে ২৩৫ রান করে, এত কম রান হওয়ার কথা ছিল না তাদের। ইমরুল কায়েস ও মুহিদুল ইসলাম অঙ্কন উদ্বোধনী জুটিতে ২৮.৩ ওভারে ১৩৭ রান এনে দেন। দুইজনেই হাফ সেঞ্চুরি করে ৮ রানের ব্যবধানে আউট হয়ে যান। প্রথমে আউট হন অধিনায়ক ইমরুল কায়েস ৯৬ বলে ২ ছক্কা ও ৫ চারে ৬৮ রান করে তানভীর ইসলামের বলে মাহমুদুল হাসানের হাতে ধরা পড়ে। ইমরুল কায়েস ৮৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন রকিবুলের বলে ১ রান নিয়ে।
অঙ্কন আউট হন ৮৫ বলে ২ ছক্কা ও ৭ চারে ৭০ রান করে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বলে তারই হাতে ধরা পড়ে। তিনি হাফ সেঞ্চুরি করেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের বলে ১ রান নিয়ে। বল খেলেন ৬৬টি। এই দুইজনের মাঝে আবার আউট হয়ে যান সৌম্য সরকার ১ রান করে তানভীরের বলে ইন্দ্রজিত বাবার হাতে ধরা পড়ে। ফলে বিনা উইকেটে ১৩৭ রান থেকে মোহামেডানের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ১৪৫।
শুরুর এই চমৎকার সূচনা মোহামেডানের পরবর্তী ব্যাটাররা আর ধরে রাখতে পারেননি। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও ফিরে যান ৩ রান করে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বলে আফিফের হাতে ক্যাচ দিয়ে। এরপর পঞ্চম উইকেট জুটিতে অনুষ্টুপ মজুমদার ও আরিফুল হক ৪৫ রানের জুটি গড়ে বিপর্যয় সামলে দলের রান বাড়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু এই জুটি ভাঙার পর আবার বিপর্যয় নেমে আসে।
অনুষ্টুপ মজুমদার ৩৩ বলে ২ চারে ৩০ রান করে তানজিম হাসান সাকিবের বলে মোহাম্মদ নাঈম শেখের হাতে ধরা পড়ে বিদায় নেওয়ার পরপরেই আউট হয়ে যান শুভাগত হোমও প্রথম বলেই। তখন ওভার শেষ হয়েছে ৪২টি। দলের রান ৬ উইকেটে ১৯৫। এরপর আরিফুল হক ছাড়া আর কেউ রান করতে না পারলে শেষ ৮ ওভারে মোহামেডান সংগ্রহ করে ২ উইকেট হারিয়ে ৪০ রান। আরিফুল হক ৪৮ বলে ২ চারে ৩৭ রান করে অপরাজিত থাকেন।
আবাহনীর হয়ে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ৪৫ রানে ৪ উইকেট নেন। ২টি করে উইকেট শিকার করেন তানজিম হাসান সাকিব ও তানভীর ইসলাম।
এমপি/এসজি