দ্রুততম সেঞ্চুরির দিনে ৭ হাজার রানের মাইলফলকে মুশফিক
গুঞ্জন ছিল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে মুশফিকুর রহিমকে বিশ্রাম দেওয়ার। কিন্তু পরে সে চিন্তা থেকে সরে আসে টিম ম্যানেজমেন্ট। এই সরে আসার কারণ ছিল মুশফিকের সাম্প্রতিক নৈপুণ্য। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ওয়ানডে ম্যাচে চট্টগ্রামে তিনি খেলেন ৭০ রানের ইনিংস। এরপর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেন মাত্র ২৬ বলে ৪৪ রানের ঝকঝকে মারমুখী ইনিংস।
এমন ইনিংস খেলার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য এরকম একজন অভিজ্ঞ পারফরমারকে বাদ দেওয়া হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই শেষ পর্যন্ত মুশফিক একাদশে টিকে যান। আর টিকে গিয়ে গড়েন বাংলার ইতিহাসে নতুন কীর্তি। মাত্র ৬০ বলে সেঞ্চুরি করে বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিক বনে যান। সিংহাসন থেকে হটিয়ে দেন সকিব আল হাসানকে। যিনি ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করেছিলেন ৬৩ বলে। আর মুশফিকের নিজের দ্রুততম সেঞ্চুরি ছিল ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬৯ বলে। এসব কিছুই এখন অতীত। ঝলঝলে মুশফিকের ৬০ বলের অপরাজিত সেঞ্চুরি।
দিনটি ছিল অধিনায়ক তামিম ইকবালের জন্মদিন। এমন দিনে নিজের কীর্তি গড়া সেঞ্চুরি করে মুশফিক যেন তামিমকে জন্মদিনের উপহারই দিলেন। নিজে এমন রেকর্ডের দিন মুশফিক আরেকটি ব্যক্তিগত মাইলফলকও গড়েছেন। বাংলাদেশের তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে তিনি ৭ হাজারি ক্লাবে প্রবেশ করেছেন। তিনি এই ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন ৫৫ রান কম নিয়ে। অপরাজিত ১০০ রান করার পর তার বর্তমান রান ৭০৪৫। এজন্য তাকে খেলতে হয়েছে ২৪৪ ম্যাচের ২২৯ ইনিংস। আগের ম্যাচে সাকিব করেছিলেন এই কীর্তি।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মুশফিকের ৭০ রানের ইনিংস ছিল ৯৩ বলে। কোনো ছক্কা ছিল না। বাউন্ডারি ছিল মাত্র ৬টি। সেই মুশফিক আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে সম্পূর্ণ বদলে গেছেন। এক আগ্রাসী ব্যাটার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। প্রথম ম্যাচে মাত্র ২৬ বল খেলেছিলেন ৪৪ রানের ইনিংস। চার ও ছয় ছিল সমান ৩টি করে। আজ ছিলেন আরও বেশি খুনে। রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরিই যেন তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হয়ে সিলেটের বৃষ্টি ভেজা আকাশে তারা হয়ে জ্বলছে।
মুশফিক যে সেঞ্চুরি করতে পারবেন, তাও ছিল অনেকটা অনিশ্চিত। শেষ ওভারের আগে তার রান ছিল ৯১। তিনি ছিলেন নন স্ট্রাইকিং প্রান্তে। প্রথম বলেই আউট হয়ে যান ইয়াসির আলী। পরের বলে নতুন ব্যাটার তাসকিন ১ রান নিয়ে মুশফিককে স্ট্রাইক দেন। হিউমের করা ওভারের তৃতীয় বলে ২ রান নেওয়ার পর মুশফিক চতুর্থ বল থার্ড ম্যান দিয়ে খেলে বাউন্ডারি মারেন। পরের বলে নেন ২ রান। তার রান হয় ৯৯। বল বাকি একটি। মিড উইকেটে খেলেই মুশফিক হেলমেট খুলে গর্জন করে উঠেন নবম সেঞ্চুরি উদযাপনে।
শেষ ওভারের অনিশ্চয়তাকে মুশফিক মুঠোবন্দী করলেও তিনি যখন ব্যাট করতে নামেন, সেখান থেকে সেঞ্চুরির লম্বা রাস্তা হিসেব করলে শিহরিত হতে হবে সবাইকে। তিনি ক্রিজে আসেন সাকিব আউট হওয়ার পর ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে। ওভার শেষ হয়েছে ৩৩.২টি। বাকি আছে ১৬.৪টি। দলের রান তখন ৩ উইকেটে ১৯১। সেখান থেকে মুশফিক খেলেন ১০০ বলের মাঝে ৬০ বল। যোগ হওয়া ১৫৮ রানের মাঝে তার অবদান ছিল ১০০ রানের। ২টি ছক্কার সঙ্গে বাউন্ডারি ছিল ১৪টি। দেখা যাচ্ছে ১০০ রানের ৬৮ রানই এসেছে না দৌড়ে।
মুশফিকের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের কারণেই শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশের রান এসেছে ২ উইকেটে ১০৮। ফিফটি করেন ৩৩ বলে। পরের ফিফটি আসে ২৭ বলে। প্রথম ফিফটিতে চার ছিল ৫টি, ছক্কা ২টি। পরের ফিফটিতে চার ৯টি। কোনো ছক্কা ছিল না। দ্রুত সেঞ্চুরি করার পথে সাকিবকে ছাড়িয়ে গিয়ে তিনি আবার সকিবকে স্পর্শ করেছেন নবম সেঞ্চুরি করে। সাকিবেরও সেঞ্চুরি ৯টি। এই দুইজনের উপরে আছেন ১৪ সেঞ্চুরি করে তামিম ইকবাল।
মুশফিকের আগের সেঞ্চুরিগুলো ছিল ১৪৪, ১২৫, ১১৭, অপরাজিত ১১০, ১০৭, ১০৬, অপরাজিত ১০২ ও ১০১।
এমপি/এসজি