মুশফিকের দ্রুততম সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের রেকর্ড সংগ্রহ
দুরন্ত দুর্বার বাংলাদেশ। বদলে যাওয়া অন্য এক বাংলাদেশ। পরীক্ষা-নীরিক্ষার ল্যাবরেটরিতে সফল প্রয়োগে অপ্রতিরোধ্য এক বাংলাদেশ। এমন বাংলাদেশকে আটকানো যে কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। আইরিশ বোলারদের পক্ষেও সম্ভব হয়নি আটকানো। বৃষ্টিভেজা কন্ডিশনে আগে ব্যাটিং করা কঠিন, দুরূহ। কিন্তু এই বাংলাদেশ এসবকে পাত্তাই দেয়নি।
দিনটি ছিল অধিনায়ক তামিম ইকবালের জন্মদিন। নিজে মনে রাখার মতো কিছু উপহার দিতে না পারলেও ইনিংসের শেষ বলে মুশফিকুর রহিম সেঞ্চুরি করে দিয়েছেন উপহার। লিটন-শান্ত দিয়েছেন হাফ সেঞ্চুরি উপহার। ১ রানের জন্য হৃদয় দিতে পারেননি হাফ সেঞ্চুরি উপহার। আর তাতেই দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের অবস্থান সমৃদ্ধ হয়েছে। ৬ উইকেটে ৩৪৯ রান করে দলীয় সংগ্রহের নতুন রেকর্ড গড়েছে। আগের ম্যাচে ২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে করা ৩৩৩ রানের রেকর্ড ছাড়িয়ে করেছিল ৮ উইেকেটে ৩৩৮ রান।
সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়ামে বৃষ্টি ভেজা কন্ডিশন ক্রিকেটের জন্য কোনো ভালো বার্তা বহন করে না। টস জয়টা ম্যাচের ফলাফলে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেখানে টস জিততে না পারাটা ছিল মন্দ কপাল। অগত্যা ব্যাটিং করতে নামার পর বাংলাদেশের ব্যাটাররা শুধু সাবধানই ছিলেন না, অতিমাত্রায় সাবধানী ছিলেন।
এই সাবধানতার সুফল বাংলাদেশ পেয়েছে ইনিংস পেটমোটা করে। শুরুর দিকে কন্ডিশনের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে আইরিশ পেসাররা চেপে ধরেছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটারদের। যার কারণে রান সংগ্রহের গতি ওভারপ্রতি তিনের নিচে নেমে আসে। কিন্তু উইকেটের পতন হতে দেননি। একপর্যায়ে রান ছিল ৭ ওভারে বিনা উইকেটে ১৮। এসময় লিটনের রান ছিল ২২ বলে মাত্র ৬, তামিমের ২০ বলে ১১। বাউন্ডারি ছিল মাত্র ২টি। ২টিই এসেছিল তামিমের ব্যাট থেকে।
অষ্টম ওভার থেকে দুই ব্যাটারই হাত খুলে খেলার চেষ্টা করেন, সফলও হন। পরের ৩ ওভারে রান আসে ২৪। কিন্তু পাওয়ার প্লের ১০ ওভারের শেষ বলে তামিম ইকবাল দুর্ভাগ্যজনকভাবে রানআউট হয়ে যান। নিজের ৩৪তম জন্মদিনে ভালো খেলার ঝলক দেখিয়ে ৩১ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ২৩ রান করেন। লিটন ফাইন লেগে খেলেছিলেন। সিঙ্গেল রান হওয়ার ছিল না। কল তামিমই দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি নিজেই পৌঁছাতে পারেননি। আ্যডায়েরে সরাসরি থ্রো স্টাম্পে আাঘাত হানলে জন্মদিনে তামিমকে হতাশায় ডুবায়।
তামিম আউট হলেও রান সংগ্রহের যে গতি তৈরি করে দিয়েছিলেন, সেখানে আরও গতি তৈরি করেন লিটনের সঙ্গে নাজমুল হোসেন শান্ত জুটি গড়ার পর। যে লিটনের রান ছিল ২২ বলে ৬, সেখানে তিনি হাফ সেঞ্চুরির জন্য বাকি ৪৪ রান যোগ করেন ৩১ বলে ছক্কা মেরে। এই ছক্কায় নবম বাংলাদেশি হিসেবে তার ২ হাজার রানও পূর্ণ হয়। তাদের মারমুখী ব্যাটিংয়ের কারণেই ১০ ওভার শেষে যেখানে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ৪২, সেখানে ১০০ রান আসে ১৯.৩ ওভারে। অর্থাৎ ৯.৩ ওভারে আসে ৫৮ রান। লিটন-শান্ত জুটি ভাঙে ৯৬ বলে ১০১ রান যোগ করার পর দলীয় ১৪৩ রানে। কার্টিস ক্যাম্পারের মোলায়েম বল ফ্লিক করকে গিয়ে মিডঅনে সহজ ক্যাচ ধরেন ম্যাকবার্নি। শেষ হয় লিটনের ৭১ বলে ৩টি করে চার ও ছয় মেরে ৭১ রানের ইনিংস।
লিটন আউট হওয়ার পর সাকিব আল হাসান ১৯ বলে ১৭ রান করে গ্রায়াম হিউমের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে থার্ডম্যানে হ্যারি টেক্টরের হাতে ধরা পড়েন। তিনি আউট হওয়ার আগেই বিপিএল থেকে দুর্দান্ত থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৫৯ বলে ১ ছক্কা ও ২ চারে। ৫ ম্যাচে এটি ছিল তার তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের সিরিজে তিনি করেছিলেন ২টি হাফ সেঞ্চুরি ৫৮ ও ৫৩ রানের ইনিংস খেলে। আজ তিনি নিজেকে ছাড়িয়ে গিয়ে আউট হন ৭৭ বলে ২ ছক্কা ও ৩ চারে ৭৩ রান করে। গ্রায়াম হিউমের বল তা গ্লাভসে লেগে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন টাকারের হাতে।
৮ রানের ব্যবধানে সাকিব-নাজমুলের বিদায়ের পর বাংলাদেশের দলীয় সংগ্রহের নতুন রেকর্ড গড়ার কাজটা আসে তৌহিদ হৃদয় ও মুশফিকের পঞ্চম উইকেট জুটিতে। দুইজনে ১২৮ রান যোগ করেন মাত্র ১৩.২ ওভারে। হৃদয় ১ রানের জন্য হাফ সেঞ্চুরি বঞ্চিত হলেও মুশফিক বাংলাদেশের হয়ে দ্রুত সেঞ্চুরির নতুন রেকর্ড গড়েন।
হৃদয় আগের ম্যাচে ৮ রানের জন্য অভিষেকেই সেঞ্চুরি করা থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন। এবার হলেন ১ রানের জন্য হাফ সেঞ্চুরি বঞ্চিত। ৩৪ বলে ১ ছক্কা ও ৪ চারে ৪৯ রান করে অ্যাডারের বলে টাকারের হাতে ধরা পড়েন। মুশফিক ৩৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি করার পর ইনিংসের শেষ বলে ১ রান নিয়ে ৬০ বলে সেঞ্চুরি করেন। এটি ছিল বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরি। এর আগে দ্রুততম সেঞ্চুরি ছিল সাকিবের ৬৩ বলে। ২০০৯ সালে তিনি এই সেঞ্চুরি করেছিলেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।
মুশফিকের রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরি ছিল কিছুটা অনিশ্চয়তার মাঝে। শেষ ওভারের আগে তার রান ছিল ৯১। তিনি ছিলেন নন স্ট্রাইকিং প্রান্তে। প্রথম বলেই আউট হয়ে যান ইয়াসির আলী। পরের বলে নতুন ব্যাটার তাসকিন ১ রান নিয়ে মুশফিককে স্ট্রাইক দেন। হিউমের করা ওভারের তৃতীয় বলে ২ রান নেওয়ার পর মুশফিক চতুর্থ বল থার্ড ম্যান দিয়ে খেলে বাউন্ডারি মারেন। পরের বলে নেন ২ রান। তার রান হয় ৯৯। বল বাকি একটি। মিড উইকটে খেলেই মুশফিক হেলমেট খুলে গর্জন করে উঠেন নবম সেঞ্চুরি উদযাপনে। একইসঙ্গে তামিম ও সাকিবের পর তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে তিনি ৭ হাজার রান পূর্ণ করেন। মুশফিকের আগের দ্রুততম সেঞ্চুরি ছিল ৬৯ বলে। ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিনি করেছিলেন।
শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশ ২ উইকেটে যোগ করে ১০৮ রান। যেখানে প্রথম ১০ ওভারে রান ছিল ১ উইকেটে মাত্র ৪২। দ্বিতীয় পাওয়ার প্লেতে ১১ থেকে ৪০ ওভারে বাংলাদেশ যোগ করেছিল ৩ উইকেটে ১৯৯ রান। গ্রায়াম হিউম ৫৮ রানে নেন ৩ উইকেট।
এমপি/এসজি