বাংলাদেশের সিরিজ জয়, না বৃষ্টির সঙ্গে লড়াই!
বিভাগীয় শহর সিলেটে নেই কোনো সাগর। আছে নদী। নাম তার সুরমা। কিন্তু আগের মতো করে খরস্রোতা নয়। পড়ন্ত যৌবন। দেখা যায় না ঢেউ। দুই পার এখন আর দূরে মনে হবে না। যেন হাত ছোঁয়া দূরত্ব।
সুরমা নদীতে ঢেউ না থাক। না থাকুক কোনো সাগর। তাতে কী? রবিবার সেই শহরে শোনা গেছে গর্জন। বাঘের গর্জন। বনের বাঘ নয়, মাঠের বাঘ। একটি দুইটি বাঘ নয়, ১১টি বাঘ। এদের সম্মিলিত আওয়াজে কেঁপে উঠেছিল সিলেট। ভয়ে কুঁকড়ে গিয়েছিল অতিথি আইরিশরা। ২২ গজে রচিত হয়েছিল বাংলাদেশের নতুন ইতিহাস। ওয়ানডে ক্রিকেটে দলগত সর্বোচ্চ সংগ্রহ আর রানের ব্যবধানে সবচেয়ে বড় জয়। ২০১৭ সালে টেস্ট মযার্দা পাওয়ার পর প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে আসা আইরিশদের যেন খেলাই শেখাল বাংলার দামাল ছেলেরা। ম্যাচের সারমর্ম ছিল বাংলাদেশ ৮ উইকেটে ৩৩৮, আয়ারল্যান্ড ১৫৫। ফলাফল বাংলাদেশ ১৮৩ রানে জয়ী।
প্রথম ম্যাচে এমন তেজোদ্দীপ্ত জয়ের পর বাংলাদেশ দলের সামনে এখন সিরিজ জেতার বাসনা। সেই বাসনার রচনা লেখার দিন আজ। সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়ামেই বেলা ২টায় শুরু হবে বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের পরীক্ষা। যে পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশের প্রস্তুতি দুর্দান্ত। ঘাটতি বলতে নেই তেমন কিছু। যা কিছু ঘাটতি, তা’হলো মিরাজকে না পাওয়া! কিন্তু এই ঘাটতিও তেমন কোনো বড় সমস্যা তৈরি করতে পারেনি। রেকর্ড জয় যেন সেই আভাসই দিচ্ছে। স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গণা হেরাথ তো জানিয়েই দিয়েছেন, প্রথম ম্যাচের মতই আগ্রাসী ক্রিকেট খেলবে বাংলাদেশ দল।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে এই সিরিজ বাংলাদেশ ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই দেখছে। যে কারণে সিরিজকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ল্যাবরেটরি বানিয়ে ফেলেছে। এই ল্যাবরেটরি থেকে প্রচুর উৎপাদন চায়। যেগুলো শুধু মান সম্পন্ন নয়, হতে হবে আবার উচ্চ মান সম্পন্ন। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের প্রেসক্রিপশন আবার সে রকমই।
প্রথম ম্যাচে হাথুরুর এই প্রেসক্রিপশন অনেকটা ফলপ্রসূ হয়েছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা সর্বশেষ ওয়ানডে ম্যাচের একাদশে চারিটি পরিবর্তন এনে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। পরিবর্তনগুলো খুবই কার্যকর হয়েছিল। অভিষিক্ত তৌহিদ হৃদয় খেলেন ৯২ রানের ইনিংস। আবার ফিরে এসে নাসুম ৪৩ রানে নেন ৩ উইকেট।
১৬.৩ ওভারে ৮১ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর সাকিব (৮৩),হৃদয় (৯২), মুশফিক (৪৪) রসায়নে পরের ব্যাটসম্যানদের তেমন কিছু করার ছিল না। শুধুমাত্র রান বাড়ানোর তাগিদ ছাড়া। ফিরে আসার তালিকায় থাকা ইয়াসির আলীও সেই চেষ্টা করেছিলেন ১০ বলে ১৭ রান করে। বাকি থাকেন তাসকিন। তিনিতো আর ফিরে আসেন না। মাঝে মাঝে তাকে দেওয়া হয় বিশ্রাম। যাতে করে পরের ম্যাচে আবার ফিরে আসতে পারেন পূর্ণ উদ্যমে। তাসকিন সেই কাজটিও করেন খুবই নিখুঁতভাবে। ৬ ওভারে মাত্র ১৫ রানে নেন ২ উইকেট।
এই সিরিজে আরও চলবে পরীক্ষা। না খেলার তালিকায় থাকা হাসান মাহমুদ, শরিফুল, রনি তালুকদাররা যে কোনো সময় পেয়ে যেতে পারেন খেলার ভিসা। আর্ মিরাজের না খেলাতো ইনজুরির কারণে। তার খেলা যেন অন অ্যারইভেল ভিসার মত। সুস্থ হলেই খেলা নিশ্চিত। পরীক্ষা-নিরীক্ষার ল্যাবরেটরিতে আজকের ম্যাচে সেরা একাদশে পরিবর্তনের সম্ভাবনা কমই।
কিন্তু বাংলাদেশের পরিকল্পনা গুড়ে বালি হয়ে যেতে পারে ক্রিকেটের আজন্ম শক্র বৃষ্টির কারণে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আছে আজ সারাদিন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসকে সত্য প্রমাণ করে আজ সকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে সিলেটে!
এমপি/আরএ/