পরীক্ষা-নিরীক্ষার আড়ালে জয়টাই মুখ্য
সময়ের পাতা উল্টে পেছনে ফিরে যাওয়া যাক। ২০০০ সাল। বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছে। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার সুবাদে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার খরা কেটে যায়। হর-হামেশা খেলতে থাকে ম্যাচ।
এদিকে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার সুবাদে বাংলাদেশ দল যেন নদী থেকে সাগরে গিয়ে পড়ে। খেতে থাকে হাবুডুবু। হারকে মেনে নিয়েই খেলতে নামে। মাঝ মাঝে আসে জয়। সেই জয় আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে তুলে বঙ্গ সন্তানদের উল্লাসধ্বনিতে।
২০০০ সাল থেকে টাইম মেশিনে চড়ে আবার চলে আসা যাক ২০২৩ সালে। এখন আয়ারল্যান্ডের অবস্থা অনেকটা বাংলাদেশের মতই। ২০১৭ সালে তারা টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছে। ফলে তাদেরও কেটেছে আর্ন্তজাতিক ম্যাচ খেলার খরা। হর-হামেশাই খেলছে আর্ন্তজাতিক ম্যাচ। তারই ধারাবাহিকতায় আজ তারা খেলবে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচ।
আয়ারল্যান্ডও হারছে। কিন্তু বাংলাদেশের মত ব্যাপক হারে নয়। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর বাংলাদেশ প্রথম জয় পেয়েছিল ২০০৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। আয়ারল্যান্ডের আবার অতটা ধৈর্য্য ছিল না। তারা টেস্ট স্ট্যাটাসের বছরই তাদের সঙ্গে স্ট্যাটাস পাওয়া আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে।
বাংলাদেশ বড় দলের বিপক্ষে প্রথম জয় পেয়েছিল ভারতের বিপক্ষে ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। এরপর ২০০৫ সালে কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। আয়ারর্যান্ড এখানেও বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। তারা ২০২০ সালে ইংল্যান্ড ও ২০২১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয় পায়।
এ সব পরিসংখ্যানে আজকের ম্যাচে আয়ারল্যান্ড এগিয়ে থাকলেও শক্তি-সামর্থ্য বিবেচনায় বাংলাদেশই এগিয়ে। আবার ঘরের মাঠে বাংলাদেশ সত্যিকারের বাঘ। ২০১৫ সাল থেকে ১৪ সিরিজ খেলে ১২টিতেই জিতেছে। যে দুইটিতে হেরেছে, সেই দুইটিই ছিল ইংল্যান্ডের কাছে। কিন্তু এ সবই আবার বাংলাদেশের জন্য প্রতিপক্ষ। কারণ বাংলাদেশ যেমন তাদের সূচনা লগ্নে মাঝে মাঝে বড় দলগুলোকে ধরাশায়ী করত, এখন সেটা করছে আয়ারর্যান্ড। এই পরিসংখ্যানে আজ যদি আয়ারল্যান্ড ‘বড়’ শক্তিকে ঘায়েল করে ফেলে? এ রকমটি হলে কিন্তু অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না! সেটিকে তখন অঘটনই বলা হবে। আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বালবার্নি বলেন, ‘ বাংলাদেশ আমরা প্রথমবারের মত পুণাঙ্গ সিরিজ খেলব। এটি আমাদের জন্য দারুণ রোমাঞ্চকর। আমরা তিনটি ম্যাচেই ভালো খেলতে চাই। নিজেদের সেরাটা তুলে ধরতে চাই।
আবার ভুলে গেলে চলবে না এই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম মুখোমুখিতে বাংলাদেশ হেরেছিল। সময়টা ছিল ২০০৭ সালের উইন্ডিজ বিশ্বকাপের সুপার সিক্সের ম্যাচে। এরপর দুই দেশ আরও ৯টি ম্যাচ খেলেছে। বাংলাদেশ জয় পেয়েছে ৭টিতে। আয়ারল্যান্ড ১টিতে। অপরটি নিষ্পত্তি হয়নি। কাজেই আয়ারল্যান্ডকে নিয়ে ভয় কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। এই ভয় আবার তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়া যায়, যখন দেখা যায় ঘরের মাঠে আয়ারল্যান্ড কখনই জিততে পারেনি বাংলাদেশের বিপক্ষে। ৪ ম্যাচে খেলে সবকটিতেই হেরেছিল। ২০০৮ সালে আয়ারল্যান্ড যখন সর্বশেষ বাংলাদেশ এসেছিল ৩ ম্যাচের দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ খেলতে, তখন সবকটিতে। পরে ২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে।
এ বছরই অক্টোবরে ভারতে ওয়ানডে বিশ্বকাপের সূচি থাকায় সব দলই সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে এগুচ্ছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করলেও আয়ারল্যান্ড আছে অনিশ্চিয়তায়। আবার এই সিরিজ ওয়ানডে বিশ্বকাপের সুপার লিগের অংশ নয়। বাংলাদেশ আবার যখন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ফিরতি সিরিজ খেলতে ইংল্যান্ড যাবে, তখন ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ হবে বিশ্বকাপের সুপার লিগের অংশ। বাংলাদেশ তাই এই সিরিজকে নিয়েছে তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার অংশ হিসেবে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা মানে এই নয় যে ফলাফল মুখ্য না। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমেই বাংলাদেশ এগুবে জয়কে টার্গেট করেই। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বলেছেন, ‘আমাদের প্রধান লক্ষ্য জয়। আমরা সব সময় জয় পেতেই খেলি। তা যে কোনো দলের বিপক্ষেই ‘
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা সর্বশেষ ম্যাচের সেরা একাদশে আজ অনেক পরিবর্তন দেখা যাবে। সেই ম্যাচে খেলা মাহমুদউল্লাহ ও তাইজুল এবার দলেই নেই। তার জায়গায় তৌহিদ হৃদয় ও রনি তালুকদারের যে কোনো একজনের খেলার সম্ভাবনা বেশি। তাইজুলের পরিবর্তে নাসুম আহমেদকে দেখা যেতে পারে। সিরিজ হারের পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রামে ৫০ রানে জিতে ব্যবধান কমিয়ে আনা সেই ম্যাচে তাসকিনকে দেওয়া হয়েছিল বিশ্রামে। আজ তাসকিনকে আবার ফিরিয়ে আনা হবে একাদশে। বাদ পড়বেন এবাদত। এই তিনটি পরিবর্তন আজ হতেই যাচ্ছে। সেই সঙ্গে আরও পরিবর্তনের সম্ভাবনা আছে। শুক্রবার অনুশীলনের সময় আহত হওয়া মেহেদি হাসান মিরাজ যদি শেষ মুহূর্তে না খেলতে পারেন, সে সেক্ষেত্রে তার পরিবর্তে ইয়াসির আলীকে দেখা যেতে পারে। আবার সময় ভালো না যাওয়া আফিফ হোসেনকেও একাদশের বাইরে দেখা যেতে পারে।
এমপি/আরএ/